বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘আমি কাগজে বলে মইরে গেছিগে’

  •    
  • ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ১৬:৫৯

মোখলেছ বলেন, ‘গ্রামের লোক এখন আমারে দেখলে বলে মৃত মোখলেছ। মানে মানুষের কাছে আমি হাসির এডা খুরাগ হয়ে দাঁড়াইছি। আমার আইডিডা যাতে দ্রুত সংশোধন হয় আর যে এই কাজটা করছে তার কঠোর শাস্তি চাই আমি।’

জামালপুরের মাদারগঞ্জ পৌরসভার চরগাবের মো. মোখলেছ। তার জন্ম ১৯৮২ সালের ২ মার্চ। কৃষিকাজ আর মাঝে মাঝে রাজমিস্ত্রির কাজ করে দুই ছেলে, স্ত্রী ও মাকে নিয়ে দিব্যি চলছে জীবন।

তবে বাস্তব জীবনে জীবিত মোখলেছ সরকারের খাতায় মৃত। করোনাভাইরাসের টিকার নিবন্ধনের সময় বিষয়টি প্রথম জানতে পারেন। নিবন্ধনের জন্য জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর কিছুতেই নেয় না কম্পিউটার সিস্টেম।

এরপর উপজেলা নির্বাচন কার্যালয়ে গিয়ে জানতে পারেন, তার জাতীয় পরিচয়পত্রের স্ট্যাটাস মৃত দেয়া।

মোখলেছ নিউজবাংলাকে বলেন, “আমি করোনার টিকা নিতে যায়ে দেখি আমার আইডি শো করে না। নির্বাচন অফিসে গেলে বলে, ‘আপনে তো মৃত।’ আমি এখন আইডিডার জন্য ভ্যাকসিন নিতে পারতাছি না। আইডি দিয়ে আর যেগুলা কাজ সেগুলাও করা পাইতাছি না।”

মোখলেছের মৃত্যুর খবর জানতে পেরে অনেকেই তার বাড়িতে আসেন। তাদেরই একজন বলেন, ‘মোখলেছ মারা গেছে শুনে আইসে দেখি সে মরে নাই। কাজবাজ করতাছে। ভোটার কার্ডে ভুল করছে।’

মোখলেছ বলেন, ‘গ্রামের লোক এখন আমারে দেখলে বলে মৃত মোখলেছ। মানে মানুষের কাছে আমি হাসির এডা খুরাগ হয়ে দাঁড়াইছি। আমার আইডিডা যাতে দ্রুত সংশোধন হয় আর যে এই কাজটা করছে তার কঠোর শাস্তি চাই আমি।’

শুধু মোখলেছ নন, মাদারগঞ্জের নয়জন এমন বিড়ম্বনায় পড়েছেন বলে জানতে পেরেছে নিউজবাংলা। জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী তারা মৃত হওয়ায় বঞ্চিত হচ্ছেন বিভিন্ন সরকারি সুযোগ-সুবিধা থেকে।

মাদারগঞ্জ পৌরসভার বীর গোপালপুরের ফকির আলী ঘোড়া লালন-পালন করে বিক্রি করেন। ২০১৮ সালের শুরুর দিক পর্যন্ত তিনি সরকারি ত্রাণ সহায়তা পেয়েছেন। সে বছর ভোটার তালিকা হালনাগাদের পর থেকে বন্ধ হয়ে যায় সব রকম সরকারি সুবিধা।

পরে জানতে পারেন, জাতীয় পরিচয়পত্রে তাকে মৃত দেখানো হয়েছে। নিজে যেমন বিভিন্ন সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, তেমনি ছেলের পাসপোর্ট করতেও তৈরি হয়েছে জটিলতা।

মাদারগঞ্জ পৌরসভার বীর গোপালপুরের ফকির আলী

ফকির আলী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি আইডি কার্ড বেগরে (ছাড়া) বেটার পাসপোর্ট কইরতে পারছিনে। মৃত হয়ে আছি। সরকারের কোনো মালটাল পাইতাছিনে। নেতাগোরে কাছে গেলে কয় তোমার আইডি কার্ডের ঠিক নাই।

‘এই আইডি কার্ডের জন্য কত দৌড়াদৌড়ি পারতাছি। আমার কোনো কাম হয়তাছে না।’

এই পৌরসভার বানীকুঞ্জ এলাকার মোছাম্মত শাপলা ২০১৬ সালে পৌরসভা নির্বাচনে ভোট দিতে গিয়ে জানতে পারেন তার জাতীয় পরিচয়পত্রের এই সমস্যার কথা। এরপর বেশ কয়েকবার আবেদনের পরও সংশোধন না হলে ২০২১ সালে আবার সব নিয়ম মেনে আবেদন করেন। জাতীয় পরিচয়পত্রের জন্য জমিজমাসংক্রান্ত জটিলতায় পড়েছেন শাপলা।

ষাটোর্ধ্ব এই নারী বলেন, ‘২০১৬ সালে ভোটার কার্ডে আমারে মৃত বানাই থুইছে। এই ভোটার কার্ডের জন্য আমি আবেদন করছি। জমির কাগজপাতি করবের পাইতাছিনে। এল্লা জমিন বেছমু, এল্লা জমিন কিনমু তাও পাইতাছিনে। এই জন্যে সমস্যা। আমি কাগজে বলে মইরে গেছিগে, বাস্তবে আমি বাঁইচে আছি।’

শাপলার ছেলে মো. শাহিন বলেন, ‘কাদম্বিনী মরে প্রমাণ করেছিলেন তিনি মরেন নাই। এখন আমার মারেও মরে প্রমাণ করতে হবে তিনি মরেন নাই। আমি চাই যত দ্রুত সম্ভব তার আইডি কার্ড ঠিক কইরে দিক।’

এই তিনজন ছাড়া জীবিত হয়েও মৃতদের তালিকায় আছেন মোছাম্মত কমেলা, নজির হোসেন মণ্ডল, শ্রীমতী মায়া রানী, ফটিক মণ্ডল, মোছাম্মত লাভলী ও আলী হোসাইন।

এমন ভুলের বিষয়ে মাদারগঞ্জ উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা জামান হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘ভোটার তালিকা হালনাগাদ করেন একজন শিক্ষক। একজন প্রধান শিক্ষক ও স্থানীয় কাউন্সিলরও সেই কমিটিতে থাকেন।

‘ভোটার তালিকা হালনাগাদের সময় একজন শিক্ষক যদি সংশ্লিষ্ট ভোটারের বা মৃত ভোটারের, তার ছেলে বা তার আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে ভোটার আইডি কার্ডটা না নিয়ে অন্য কারো কথায় হালনাগাদ করে, তাহলে ভুল হবেই। এক ডিজিটের জায়গায় অন্য ডিজিট লেখায় সমস্যা হয়ে যায়।’

নির্বাচন কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘আমরা নয়টা আবেদন পেয়েছি। এগুলো যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছি। শিগগিরই ঠিক হয়ে যাবে।’

জামালপুরের মানবাধিকারকর্মী জাহাঙ্গীর সেলিম বলেন, ‘কারও কারও অসচেতনতার কারণে এতগুলো মানুষ কষ্ট ভোগ করছে। যারা এমন ভুল করেছে তাদের খুঁজে বের করে শাস্তি দিতে হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর