সঠিক চিকিৎসায় রক্তের ক্যানসার ক্রনিক মায়েলয়েড লিউকেমিয়া বা সিএমএল আক্রান্ত রোগীরা পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ওঠে।
বুধবার বিশ্ব সিএমএল দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ।
এর আগে হেমাটোলজি বিভাগের উদ্যোগে হাসপাতালের ডি ব্লকের সামনে কবুতর ও বেলুন উড়িয়ে অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন। এ সময় ১৫ তলায় আধুনিক হেমাটোলজি ওয়ার্ডের উদ্বোধনও করেন তিনি।
শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, সিএমএল একধরনের দীর্ঘমেয়াদি রক্তের ক্যানসার। এ রোগ নিয়ে আতঙ্কিত না হয়ে এর সঠিক চিকিৎসা সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। কারণ সঠিক চিকিৎসায় এ রোগ সেরে রোগীর সুস্থ জীবনযাপন সম্ভব।
উপাচার্য বলেন, প্রধানমন্ত্রীর বিএসএমএমইউর সার্বিক উন্নয়নের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। স্বল্প সময়ের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব কোভিড ফিল্ড হাসপাতাল চালু করা হয়েছে। রোগীদের চিকিৎসায় অক্সিজেনের সরবরাহ নিশ্চিত করতে ২০ হাজার লিটার ধারণক্ষমতাসম্পন্ন অক্সিজেন ট্যাংক স্থাপন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ক্যানসারসহ বিভিন্ন জটিল রোগের ওষুধ বর্তমানে দেশেই তৈরি হচ্ছে। বিশ্বের ১৫১টি দেশে বাংলাদেশে ওষুধ রপ্তানি হচ্ছে। এটি স্বাস্থ্য খাতে বিরাট অর্জন।
বাংলাদেশকে সঠিক পথে এগিয়ে নেয়ায় ‘এসডিজি অগ্রগতি পুরস্কার’ অর্জনে প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানিয়ে তার নেতৃত্বে দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।
হেমাটোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. সালাহউদ্দিন শাহের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এতে উপ-উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো. জাহিদ হোসেন, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. এ কে এম মোশাররফ হোসেন, মেডিসিন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. মাসুদা বেগমসহ অনেকেই বক্তব্য দেন।
সালাহউদ্দিন শাহ বলেন, সাধারণত পঞ্চাশ বা ষাটোর্ধ্বদের মধ্যে এ রোগ বেশি দেখা যায়। তবে ত্রিশ বা চল্লিশ বছর বয়সীরাও এতে আক্রান্ত হয়ে থাকে। তুলনামূলকভাবে পুরুষরাই এ রোগে বেশি আক্রান্ত হয়।
সিএমএল রোগের ক্ষেত্রে শরীর দুর্বল, শেষ রাতে ঘাম হওয়া, ওজন হ্রাস পাওয়াসহ বেশ কিছু সমস্যা দেখা দিতে পারে। পাশাপাশি অনেকের পেটের বাম পাশে চাকা বা ভারী অনুভূত হতে পারে, যা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পায়। ফলে অনেকেই খাবার খেতে না পারা বা অল্প খেলে পেট ভরে যাওয়ার সমস্যায় পড়ে।
অনেক সময় আবার লক্ষণ প্রকাশ পায় না, বরং রুটিন চেকআপ বা অন্য রোগের পরীক্ষা করতে গিয়ে এটি ধরা পড়ে।
অধ্যাপক সালাহউদ্দিন শাহ আরও বলেন, নিয়মিত ওষুধ খেলে ও যথাযথ পর্যবেক্ষণে থাকলে অধিকাংশ রোগীই স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে। কিছু কিছু রোগীর ক্ষেত্রে এলোজেনিক হেমাটোপয়েটিক স্টেম সেল বা বোনমেরো ট্রান্সপ্লান্টেশনের মাধ্যমে রোগ নিরাময় সম্ভব।
তিনি আরও বলেন, সিএমএল যেহেতু দীর্ঘমেয়াদি রোগ, তাই অনেক ক্ষেত্রেই হতাশা, দুশ্চিন্তা দেখা দিতে পারে। তবে রোগীর আর্থিক সমস্যার কারণে এ বিষয়ে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগ প্রয়োজন।
জাতীয় পর্যায়ে সিএমএল রোগীদের তালিকাবদ্ধ করার মাধ্যমে তাদের সঠিক সংখ্যা নির্ণয় করা এবং সঠিক চিকিৎসা নিশ্চিতকরণে রাষ্ট্রীয় পরিকল্পনা প্রণয়ন অত্যন্ত জরুরি।