বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

কর্মবিরতি: চট্টগ্রাম বন্দরে অচলাবস্থা, বেনাপোলে পণ্যজট

  •    
  • ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ১১:৫৯

১৫ দফা দাবি আদায়ে বাংলাদেশ কাভার্ডভ্যান-ট্রাক-প্রাইম মুভার পণ্য পরিবহন মালিক অ্যাসোসিয়েশন ও বাংলাদেশ ট্রাকচালক শ্রমিক ফেডারেশনের ডাকে মঙ্গলবার থেকে চলছে কর্মবিরতি। অন্য জেলায় এর বড় কোনো প্রভাব না পড়লেও চট্টগ্রাম ও বেনাপোল বন্দরের কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।

পণ্যবাহী পরিবহন শ্রমিকদের কর্মবিরতির দ্বিতীয় দিনে প্রায় থমকে গেছে চট্টগ্রাম ও বেনাপোল বন্দরের কার্যক্রম। তবে অন্য বন্দরগুলো স্বাভাবিক আছে।

মোটরযান মালিকদের ওপর আরোপিত অগ্রিম আয়কর (এআইটি) প্রত্যাহারসহ ১৫ দফা দাবি আদায়ে বাংলাদেশ কাভার্ডভ্যান-ট্রাক-প্রাইম মুভার পণ্য পরিবহন মালিক অ্যাসোসিয়েশন ও বাংলাদেশ ট্রাকচালক শ্রমিক ফেডারেশনের ডাকে মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে শুরু হয় এ কর্মবিরতি।

চট্টগ্রাম

চট্টগ্রাম বন্দরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পণ্য ও কনটেইনার বহনকারী যানবাহনের চালক ও শ্রমিকরা রাস্তায় নেমে বুধবার সকালেও মিছিল ও সমাবেশ করেছেন।

আমদানি করা পণ্য ডেলিভারি নিতে কোনো ট্রাক-কাভার্ডভ্যান এবং লরি বন্দরে ঢুকতে পারেনি। তেমনি বন্দরে ঢোকা গাড়িগুলোও সকালে বন্দর থেকে বের হতে পারেনি। এ নিয়ে ব্যবসায়ীরা বিপাকে পড়েছেন।

বন্দরের সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক বলেন, ‘জাহাজে কনটেইনার ওঠানামা সচল রয়েছে। তবে লুজ কার্গো বা খোলা পণ্য পরিবহন, কনটেইনার থেকে ট্রাক বা ভ্যানে এবং বন্দরের কনটেইনার অফ ডকে যাওয়া বন্ধ আছে।’

কনটেইনার পরিবহনকারী গাড়িতে চট্টগ্রামের ১৮টি ডিপো থেকে বন্দরে আমদানি-রপ্তানি ও খালি কনটেইনার আনা-নেয়া হয়, কর্মবিরতির কারণে যা এখন বন্ধ।

কনটেইনার ডিপো সমিতির সচিব রুহুল আমিন সিকদার বলেন, ‘প্রতিদিন রপ্তানি পণ্যবাহী দেড় হাজার কনটেইনার বন্দরে পাঠানো হয়। কর্মবিরতির কারণে রপ্তানি পণ্যবাহী কনটেইনার বন্দরে পাঠানো যাচ্ছে না। আবার আমদানি পণ্যবাহী যেসব কনটেইনার ডিপোতে খুলে খালাস করা হয়, তাও বন্দর থেকে আনা যাচ্ছে না।’

কর্মবিরতির বিষয়ে আন্দোলনকারী সংগঠন প্রাইম মুভার ট্রেইলর মালিক সমিতির সদস্য হাসান মুরাদ বাদশা বলেন, ‘মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আমাদের বৈঠক হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু তা হয়নি। আমাদের কর্মবিরতি চলমান।’

বেনাপোল

যশোরের বেনাপোল বন্দর থেকেও সব ধরনের পণ্যবাহী ট্রাক চলাচল বন্ধ আছে। এতে দেখা দিয়েছে পণ্যজট। তবে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম স্বাভাবিক আছে।

বাংলাদেশ ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, প্রাইম মুভার পরিবহন মালিক অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে বেনাপোলে এ কর্মবিরতি পালন করছে যশোর জেলা ট্রাক মালিক সমিতি।

বেনাপোল ট্রান্সপোর্ট মালিক সমিতির সভাপতি এ কে এম আতিকুজ্জামান ও সাধারণ সম্পাদক আজিম উদ্দীন গাজী জানান, কর্মবিরতি সফল করতে বন্দর এলাকায় লিফলেট বিতরণ ও মাইকিং করা হয়েছে।

তারা বলেন, বন্দরে মঙ্গলবার সকাল থেকে কোনো ট্রাক পণ্য লোড করেনি বা বেনাপোল ছেড়ে যায়নি। বুধবারও এ পরিস্থিতি আছে।

বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন জানান, পণ্য লোড না হওয়ায় একদিকে রপ্তানির পণ্যবাহী ট্রাক জায়গা না থাকায় রাস্তার ওপর দাঁড়িয়ে আছে। অন্যদিকে আমদানির পণ্য ঢুকছে। সব মিলিয়ে যানজট দেখা দিয়েছে।

তিনি জানান, যানজটে সাধারণ মানুষের চলাচলেও ভোগান্তি হচ্ছে।

বেনাপোল বন্দরের উপপরিচালক মামুন তরফদার জানান, বন্দর থেকে পণ্য লোড না হওয়ার কারণে বন্দরে জায়গাসংকট ও পণ্যজটের সৃষ্টি হয়েছে। কর্মবিরতি শেষ হলে এ জট কেটে যাবে।

অন্য জেলাগুলোর কী অবস্থা

দুই দিন ধরে চুয়াডাঙ্গার ভেতর-বাইরে সব রুটে বন্ধ রয়েছে ট্রাক ও কাভার্ডভ্যানসহ পণ্যবাহী পরিবহন। এর প্রভাব পড়েছে কৃষিপণ্যের ওপর। জেলার বাইরে ফসল পাঠাতে পারছেন না কৃষকরা।

জেলা সড়ক পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সভাপতি হাবিবুর রহমান লাভলু বলেন, ‘আমাদের কেন্দ্রীয় নেতাদের কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে। তা এখনও হয়নি। তাই আমাদের কর্মবিরতি অব্যাহত রয়েছে।’

কর্মবিরতিতে নেই লালমনিরহাটের বুড়িমারী, চ্যাংড়াবান্ধা ও সাতক্ষীরার ভোমরা বন্দরের পরিবহন মালিক-চালকরা।

বুড়িমারী স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানিকারক সমিতির (সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট) সাধারণ সম্পাদক ও ইউপি চেয়ারম্যান আবু সাঈদ নেওয়াজ নিশাদ নিউজবাংলাকে জানান, বন্দর স্বাভাবিক।

লালমনিরহাট জেলা ট্রাক, ট্যাংকলরি ও কাভার্ডভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি পুলিন চন্দ্র রায় জানান, জেলায় কেন্দ্রের কর্মবিরতির প্রভাব পড়েনি।

সাতক্ষীরায়ও স্বাভাবিকভাবেই চলছে পণ্যবাহী পরিবহন। ভোমরা স্থলবন্দরের কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে কর্মবিরতিতে অংশ না নেয়ার কথা জানিয়েছেন পরিবহন নেতারা।

জেলা ভিআইপি ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি শাহিন আলম জানান, কেন্দ্রীয় নেতাদের দাবির সঙ্গে একমত তারা। তাদের আন্দোলনেও পাশে আছেন। তবে কর্মবিরতি পালন করছেন না।

কর্মবিরতির ডাক দেয়া হলেও উত্তরের প্রবেশদ্বার বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম মহাসড়কে ট্রাক চলাচল করতে দেখা যায় দুই দিনই।

সিরাজগঞ্জ কাভার্ডভ্যান-ট্রাক পণ্য পরিবহন মালিক অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম মুন্সি বলেন, ‘১৫ দফা দাবি না মানায় সারা দেশে আমাদের কর্মবিরতি শুরু হয়েছে। কর্মবিরতির কারণে ট্রাক-কাভার্ডভ্যান চলাচল বন্ধ আছে, তবে মহাসড়কে রীতিমতো ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান চলাচল করছে। আমাদের এখানেও কিছু কিছু ট্রাক চলছে। এগুলোও বন্ধ করার আহ্বান করা হয়েছে।’

সাভারের বিভিন্ন পাইকারি বাজারের সামনে ট্রাকে মালামাল ওঠাতে-নামাতে দেখা যায় বুধবার সকালে। উত্তরাঞ্চল থেকে ট্রাকভর্তি পণ্য নিয়ে রাজধানীতে আসার কথা জানিয়েছেন অনেকেই।

ঢাকার প্রবেশপথের সড়কগুলোতে মঙ্গলবার রাতেও স্বাভাবিকভাবে পণ্যবাহী ট্রাক চলতে দেখা যায়।

পরিবহন মালিক সমিতি সাভারের আশুলিয়া শাখার সদস্য আমির আলী নিউজবাংলাকে বলেন, দক্ষিণবঙ্গের সড়কে পণ্যবাহী পরিবহন চলাচল করতে গিয়ে যে ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়, তা সাভার ও আশুলিয়ায় নেই। এ কারণে এখানে কর্মবিরতির প্রভাব পড়েনি।

কর্মবিরতিতে নেই রংপুর বিভাগের পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা। আগামী ২৭ ও ২৮ সেপ্টেম্বর সারা দেশে ট্রাক, ট্যাংকলরি, কাভার্ডভ্যান ও ট্রাক্টর শ্রমিক ইউনিয়নের সঙ্গে কর্মবিরতিতে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন রংপুরের নেতারা।

সংগঠনটির জেলা সভাপতি হাফিজার রহমান হাফিজ বলেন, ‘ঢাকাসহ অন্যান্য এলাকায় যে কর্মবিরতির কর্মসূচি দেয়া হয়েছে, তা ঢাকার তেজগাঁওকেন্দ্রিক। আমাদের কাছে কোনো চিঠি নেই। কেউ কর্মবিরতি পালন করছেন না।’

সিলেট জেলায় কিছু ট্রাক চলাচল করতে দেখা গেলেও অন্য জেলা থেকে পণ্যবাহী পরিবহন প্রবেশ করেনি।

তবে সিলেটের পাথর কোয়ারিগুলো থেকে পাথর পরিবহন বন্ধ আছে মঙ্গলবার থেকে।

বাংলাদেশ কাভার্ডভ্যান, ট্রাক, প্রাইম মুভার পণ্য পরিবহন মালিক সমিতির সিলেটের সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক বলেন, স্বতস্ফূর্তভাবে কর্মবিরতি পালন করা হচ্ছে। বিশেষত বন্দর এলাকা থেকে কোনো পণ্য পরিবহন করা হচ্ছে না।

বরিশালে মঙ্গলবার দুপুরে কর্মবিরতি পালন করতে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের রহমতপুর বিমানবন্দর মোড়ে সমাবেশ করে জেলা ট্রাক, ট্যাংকলরি, কাভার্ডভ্যান ও ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়ন। এতে ঘণ্টাখানেক পণ্যবাহী পরিবহন বন্ধ থাকলেও পরে তা স্বাভাবিক হয়ে যায়। বিভাগের সব জেলাতেই বুধবার পণ্যবাহী ট্রাক ও ছোট যান চলতে দেখা যায়।

রাজশাহী জেলায় মঙ্গলবারের মতো বুধবারও বন্ধ রাখা হয়েছে ট্রাক চলাচল। তবে ছোট ছোট যানে পণ্য পরিবহন চলছে।

প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন চট্টগ্রামের সিফায়াত উল্লাহ, বরিশালের তন্ময় তপু, সিলেটের দেবাশীষ দেবু, রাজশাহীর আহসান হাবীব অপু, রংপুরের রফিকুল ইসলাম, সাভারের ইমতিয়াজ উল ইসলাম, সাতক্ষীরার রফিকুল ইসলাম শাওন, লালমনিরহাটের শাহজাহান সাজু, সিরাজগঞ্জের গোলাম মোস্তফা রুবেল ও চুয়াডাঙ্গার জহির রায়হান সোহাগ।

এ বিভাগের আরো খবর