আফগানিস্তানে তালেবান সরকারে সবার প্রতিনিধিত্ব না থাকলে দেশটি গৃহযুদ্ধের দিকে এগিয়ে যাবে বলে মনে করছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান।
বিবিসির সাংবাদিক জন সিম্পসনকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি এ মন্তব্য করেন বলে ডনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
ইমরান খান বলেন, ‘তারা (তালেবান) যদি সব গোত্রকে সরকারে অন্তর্ভুক্ত না করে তাহলে আগে বা পরে তাদেরকে গৃহযুদ্ধে পড়তে হবে। যার অর্থ, অস্থিতিশীল, বিশৃঙ্খল আফগানিস্তান সন্ত্রাসীদের জন্য উত্তম জায়গায় পরিণত হবে। আর এটাই দুশ্চিন্তার বিষয়।’
একের পর এক প্রদেশ জয়ের পর গত ১৫ আগস্ট রাজধানী কাবুল দখলের মধ্য দিয়ে পুরো আফগানিস্তান দখলের ষোলকলা পূর্ণ করে তালেবান।
দুই দশক পর আবার আফগানিস্তান দখল করে তালেবান জানায়, তারা ২০ বছর আগের অবস্থানে নেই। সহনশীলতার কথা বলেছিল কট্টর ইসলামি গোষ্ঠীটি। শত্রুদের সবাইকে ক্ষমা করে দেয়ার কথা জানায় তারা। সবাইকে নিয়ে অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকার গঠনের আশ্বাস দেয়। সরকারে নারী প্রতিনিধিত্ব রাখারও ইঙ্গিত দেয়।
তালেবানের এসব আশ্বাসের বাস্তবের কোনো মিল পাওয়া যাচ্ছে না। এর মধ্যে তালেবান যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ঘোষণা করেছে, সেখানে বেশির ভাগ সদস্যই পশতু জাতিগোষ্ঠীর; মন্ত্রিসভায় নেই কোনো নারী সদস্য। এমনকি নারী শিক্ষার্থীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও মানা করে দিয়েছে তারা।
সবার অংশগ্রহণমূলক সরকার গঠন করতে এবং মানবাধিকারের প্রতি সম্মান দেখাতে তালেবান নেতৃত্বের প্রতি ফের আহ্বান জানান ইমরান খান। তিনি এটাও বলেছেন যে, পাকিস্তানের নিরাপত্তার হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে এমন কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর জন্য আফগানিস্তানের মাটি ব্যবহার করতে দেয়া উচিত হবে না।
ইমরান খান জানান, যেসব শর্ত রাখা হয়েছে তা পূরণ করতে পারলেই কেবল তালেবান নেতৃত্বাধীন আফগান সরকারকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেবে ইসলামাবাদ।
পাকিস্তানের দেয়া শর্ত তালেবান পূরণ করতে পেরেছে কি না, এমন প্রশ্নে ইমরান খান জানান, এ বিষয়ে এখনই মন্তব্য করাটা খুব দ্রুত হয়ে যাবে। তালেবানকে আরও সময় দেয়ার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান পাকিস্তানের সরকার প্রধানের।
তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দেয়া বা না দেয়ার বিষয়টি প্রতিবেশী দেশগুলোকে নিয়ে সম্মিলিত সিদ্ধান্ত হবে বলেও জানান ইমরান খান।
তালেবান যে আফগানিস্তানের নারীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেতে মানা করেছে সে বিষয়টিও ওঠে আসে বিবিসিকে দেয়া ইমরান খানের সাক্ষাৎকারে। তিনি বলেন, শিক্ষায় নারীদের অংশগ্রহণ করতে না দেয়া ইসলামবিরোধী ধারণা।
গত সপ্তাহে আফগানিস্তানের মাধ্যমিক স্কুলগুলো খুলে দেয়া হয়। তবে ক্লাসে রাখা হচ্ছে না কোনো মেয়ে শিক্ষার্থী। কেবল ছেলে শিক্ষার্থী এবং পুরুষ শিক্ষকদের স্কুলে আসতে অনুমতি দেয়া হয়েছে।
অবশ্য ইমরান খানের বিশ্বাস আফগান মেয়ে শিক্ষার্থীরা দ্রুতই স্কুলে ফিরবে এবং নারীরা তাদের অধিকার ফিরে পাবে।
তিনি বলেন, ‘তারা (তালেবান) ক্ষমতায় আসার পর যেসব বিবৃতি দিয়েছে তা খুবই উৎসাহব্যঞ্জক। আমি মনে করি, তারা নারী শিক্ষার্থীদেরও স্কুলে যেতে অনুমতি দেবে। নারীদের শিক্ষিত করার দরকার নেই, এই ধারণা ইসলামসম্মত নয়। এমন ধারণার সঙ্গে ধর্মের কোনো সম্পর্ক নেই।’