দেশি ও বিদেশি শিক্ষার্থীদের মধ্যে সমন্বয়, নতুন সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিতিসহ বিভিন্ন কারণে ২০১৭-২০১৮ সাল থেকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি) বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয়।
এর মধ্যে চার বছর পার হলেও মাত্র দুজন বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছেন জবিতে।
রেজিস্ট্রার দপ্তর সূত্রে জানা যায়, বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য অতিরিক্ত ৭৫টি আসন বরাদ্দ রেখেছে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ২০১৮ সালের শিক্ষাবর্ষে চীনের দুজন শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। এখন পর্যন্ত ওই দুজনই পড়াশোনা করছেন জবিতে। তাদের একজন ইংরেজি বিভাগে, অপরজন গণিত বিভাগে ভর্তি হয়েছিলেন।
বিশ্ববিদ্যালয়টিতে বিদেশি শিক্ষার্থীদের আগ্রহ না থাকার প্রধান কারণ হিসেবে প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা ও প্রচার-প্রচারণার অভাবকে দায়ী করছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটটিতে পর্যাপ্ত তথ্যের অভাব রয়েছে। ওয়েবসাইটে সব ধরনের তথ্য হালনাগাদ করা থাকলে বিদেশি শিক্ষার্থীদের আগ্রহ বাড়ত।
তারা আরও বলেন, দেশের অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য আবাসিক ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। তবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে এ চিত্র ভিন্ন। এখানে দেশের সাধারণ শিক্ষার্থীর জন্যই পূর্ণ আবাসনের ব্যবস্থা নেই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মো. ওহিদুজ্জামান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভর্তির আগ্রহের জন্য আমরা সর্বোচ্চ প্রচারটা করতে পারি।’
বিদেশি শিক্ষার্থী না আসার কারণ সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ইমদাদুল হক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ এর প্রধান কারণ হতে পারে জবি সম্পর্কে তারা অবগত নয়। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বয়স মাত্র পনেরো বছর। বাইরের দেশে অনেকেই চেনে না, আমরা চেষ্টা করব আস্তে আস্তে বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বিদেশি শিক্ষার্থীদের পরিচয় করানোর।
‘তাছাড়া বিদেশি শিক্ষার্থীরা হয়তো পছন্দের ফ্যাকাল্টি এখানে পাচ্ছে না তাই আসছে না। আরও একটি বড় কারণ হলো আবাসন ব্যবস্থা। বাইরে থেকে কোনো শিক্ষার্থী আসলে অবশ্যই আবাসন ব্যবস্থা আছে কি না দেখবে। আমাদের যেহেতু আবাসনসংকট তাই বিদেশি শিক্ষার্থী না আসার এটা একটা কারণ।
‘তবে নতুন ক্যাম্পাসে তাদের জন্য আবাসন ব্যবস্থা করলে তখন বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’
জানা যায়, সামগ্রিকভাবেই দেশে বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা দিন দিন কমছে।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) ৪৬তম বার্ষিক প্রতিবেদনে (২০১৯) বলা হয়েছে, ২০১৮ সালে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ৮০৪। বর্তমানে যা অর্ধেক হ্রাস পেয়ে ৪৮২-তে এসে দাঁড়িয়েছে।
এর মধ্যে শুধু গোপালগঞ্জের বশেমুরবিপ্রবিতে আছেন ২২১ জন। ১৬৬ শিক্ষার্থী নিয়ে তালিকার ২য় স্থানে রয়েছে দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (হাবিপ্রবি)। ৫১ শিক্ষার্থী নিয়ে রাজধানীর শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) অবস্থান ৩য়। আর ৩৭ শিক্ষার্থী নিয়ে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান ৪র্থ।
তালিকার অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হলো যথাক্রমে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (৩৭), ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (৩৭), রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (৩৭) ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (৩৪)।
দেশের ৪৬টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ২৬টিতে কোনো বিদেশি শিক্ষার্থী নেই বলে জানায় সূত্রটি।
দেশে এতগুলো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থাকা সত্ত্বেও বিদেশি শিক্ষার্থী কম থাকার কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্ট মহল পর্যাপ্ত গবেষণার সুযোগ না থাকা, ভর্তির ক্ষেত্রে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক অস্থিরতা, অনেক বিভাগে শুধু বাংলায় পাঠদান, বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য উপযুক্ত পরিবেশের অভাব, অপ্রতুল স্কলারশিপ ও সেশনজটকে দায়ী করছেন।