রাজধানীর তুরাগ এলাকায় বৃহস্পতিবার বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যান মো. নাজমুল নামে এক তরুণ। তার মৃত্যুর কারণ খুঁজতে গিয়ে মেট্রোরেল প্রকল্প থেকে মালামাল চুরির তথ্য পাওয়ার দাবি করেছে র্যাব।
বাহিনীটি বলছে, তুরাগ এলাকা থেকে বিদ্যুতের তার চুরি করতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা গেছেন নাজমুল।
মঙ্গলবার সকালে এসব তথ্য জানান র্যাব-৪-এর অধিনায়ক মোজাম্মেল হক।
তিনি বলেন, ‘নিহত নাজমুল সংঘবদ্ধ চোর চক্রের সদস্য। চক্রটির আরও দুই সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’
মোজাম্মেল হক জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সোমবার সকাল সোয়া ১০টার দিকে রাজধানীর পল্লবীতে অভিযান চালায় র্যাব। এ সময় চোরাকারবারি চক্রে জড়িত সন্দেহে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এরা হলেন মো. আশিক ও মো. হারুন ।
র্যাব জানিয়েছে, তাদের কাছ থেকে চোরাই মালামালসহ একটি পিকআপ ভ্যান ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা জব্দ করা হয়েছে। গ্রেপ্তারদের জিজ্ঞাসাবাদে নাজমুলের মৃত্যু ও প্রকল্পের মালামাল চুরি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া গেছে।
র্যাব কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক বলেন, ‘এ ঘটনার রহস্য উন্মোচিত হয়েছে নিহত নাজমুলের পরিবারের একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) থেকে। বৃহস্পতিবার নাজমুল তার মিরপুরের বাসা থেকে কাজের সন্ধানে যাওয়ার পর নিখোঁজ হন।
‘এ ঘটনায় পল্লবী থানায় একটি জিডি করে তার পরিবার। শুক্রবার জানা যায়, তুরাগ এলাকায় একটি মরদেহ উদ্ধার হয়েছে। পরে ওই লাশটি নাজমুলের বলে শনাক্ত করেন তার বাবা। এ ঘটনায় তুরাগ থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়। আর এ ঘটনায় র্যাবের একটি দল ছায়াতদন্ত শুরু করে।’
র্যাব-৪-এর অধিনায়ক বলেন, ‘গ্রেপ্তার দুজন প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে র্যাবকে জানিয়েছেন, নিহত নাজমুলসহ তারা রাসেল এবং শামীম নামের আরও দুজনের সঙ্গে মিলে চুরি করতেন।
‘৬ সেপ্টেম্বর রাসেল এবং শামীম নিহত নাজমুলকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যান। ওই রাতে পরে আশিকও বরাবরের মতো তাদের সঙ্গে চুরির কাজে যোগ দেন। যদিও সেদিন তাদের সঙ্গে হারুন যোগ দেননি। তুরাগে বিদ্যুতের তার চুরি করতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে ঘটনাস্থলেই নাজমুলের মৃত্যু হয়। পরে তারা নাজমুলকে সেখানে রেখেই পালিয়ে যান।’
র্যাব জানায়, চক্রটি বেশ কিছুদিন ধরে মেট্রোরেলের মালামালসহ অন্যান্য সরকারি কাজের মালামাল এবং বৈদ্যুতিক তার চুরির করছিল। র্যাবের অভিযানে আশিক গ্রেপ্তার হলে এর সত্যতা মেলে।
বাহিনীটি বলছে, গ্রেপ্তাররা পল্লবী এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে ঢাকা মেট্রোরেল প্রকল্প ছাড়াও আরও গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের বাড়তি লোহা, ইস্পাত, তার, মেশিন কৌশলে চুরিতে জড়িত।
চুরির কয়েকটি ধাপ
র্যাব অধিনায়ক মোজাম্মেল হক বলেন, ‘চোর চক্রটি মূলত চুরির কাজটি কয়েক ধাপে করে। তারা কৌশলে প্রকল্পের কী মালামাল কোথায় আছে তার বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে। পরে ওই অনুযায়ী চুরির পরিকল্পনা করে।
‘তারা চুরি করা মালামাল একটি গোপন জায়গায় রাখেন। আরেকটি গ্রুপ চোরাই মালামাল সহজে বহনযোগ্য করার কাজ করেন। পরে এ ধরনের মালামাল কেনেন এমন ক্রেতাদের সঙ্গে প্রথম ধাপের চোরাই দলের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেন। তাদের সঙ্গে দাম ঠিক করে সেটি বিক্রি হয়।’
তিনি বলেন, ‘এই চোরা চক্রটিসহ এমন আরও কয়েকটি চোর চক্রের বেশ কয়েকজন সদস্য পলাতক রয়েছেন। তাদের গ্রেপ্তারে র্যাবের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এ ঘটনায় আইনি ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।’