পরপর দুই দিন বাড়ল সূচক। প্রথম দিনের তুলনায় দ্বিতীয় দিনে উত্থান হলো আরও বেশি। কিন্তু লেনদেনে গতি ফেরেনি। আড়াই মাস পর প্রথমবারের মতো পরপর দুই দিন ২ হাজার কোটি টাকার নিচে লেনদেন হলো। যদিও আগের দিনের তুলনায় দেড় শ কোটি টাকা বেশি লেনদেন হয়েছে।
পুঁজিবাজার স্থিতিশীলতা তহবিলে ব্যাংক থেকে অবণ্টিত টাকা আসতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আপত্তিকে কেন্দ্র করে গত সপ্তাহে পুঁজিবাজারে দেখা যায় বিভ্রান্তি। বিএসইসির সঙ্গে আলোচনার পর এই আপত্তি তুলে নেয়ার সংবাদ এসেছে গণমাধ্যমে। এরপর তহবিলে ব্যাংক থেকে টাকা আসছে।
তবে এখন যোগ হয়েছে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে বিএসইসির হিসাব চাওয়া। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুই দিন ধরে লেনদেনে দেখা যাচ্ছে মন্দাভাব।
১৪ কর্মদিবস পর সোমবার প্রথমবারের মতো লেনদেন নামে ২ হাজার কোটি টাকার নিচে। আর এই লেনদেন ছিল ৩০ কর্মদিবসের মধ্যে সর্বনিম্ন।
আগের দিন হাতবদল হয়েছিল ১ হাজার ৭৬২ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। সেটি বেড়ে হয়েছে ১ হাজার ৯১০ কোটি ৩ লাখ টাকা।
পরপর দুই দিন ২ হাজার কোটি টাকার লেনেদেন গত ২৮ ও ২৯ জুলাইয়ের পর আর দেখা যায়নি।
মঙ্গলবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেনের চিত্র
মঙ্গলবার সূচকের ৫২ পয়েন্ট উত্থানে প্রধান ভূমিকায় বড় মূলধনি কোম্পানির পাশাপাশি বস্ত্র খাতে উত্থান। আগের দিন চাঙা থাকা বিমা খাত দিনের প্রথম ভাগে চাঙা থাকলেও শেষ ভাগে এসে দর হারিয়েছে অর্ধেকের মতো কোম্পানি। বেশ কয়েক দিনের হতাশা কাটিয়ে মিউচ্যুয়াল ফান্ড খাত কিছুটা হলেও আশা দেখাল।
কেপিসিএল, সামিটের মেয়াদ পেরিয়ে যাওয়া তিনটিসহ মোট পাঁচটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ বাড়ানোর জন্য বৈঠক ডাকার খবরে চাঙাভাব দেখা গেছে এই খাতেও। তথ্য প্রযুক্তি খাতেও বেড়েছে বেশির ভাগ শেয়ারের দর।
ব্যাংক খাতে দীর্ঘ যে হতাশা, তা থেকে বের হওয়ার যেন কোনো লক্ষণ নেই। তবে ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক খাত ঘুরে দাঁড়িয়েছে। প্রকৌশল খাতে দেখা গেছে মিশ্র প্রবণতা।
লেনদেনে সেরা আগের মতোই বেক্সিমকো গ্রুপের দুই কোম্পানি।
সূচক বৃদ্ধিতে সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছে ওয়ালটন, বেক্সিমকো ফার্মা, গ্রামীণফোন, ব্রিটিশ আমেরিকান ট্যোবাকো, স্কয়ার ফার্মা, রবি, লাফার্জ হোলসিম সিমেন্ট, বাংলাদেশ সাবমেরিন কেব্ল কোম্পানি, কেপিসিএল ও পাওয়ার গ্রিড।
এই ১০টি কোম্পানির কারণে সূচকে যোগ হয়েছে ৩৮.৭২ পয়েন্ট। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১৩.৩৭ পয়েন্ট যোগ করেছে ওয়ালটন একাই।
অন্যদিকে সবচেয়ে বেশি সূচক হারিয়েছে যে ১০টি কোম্পানি, সেগুলো হলো রেনাটা, ব্র্যাক ব্যাংক, লিনডে বিডি, ডাচ্বাংলা ব্যাংক, ইবিএল, ডরেন পাওয়ার, ন্যাশনাল হাইজিং ফাইন্যান্স, কোহিনূর কেমিক্যাল, এনভয় টেক্সটাইল ও ইবনে সিনা ফার্মাসিউটিক্যালস।
তবে কোম্পানিগুলোর দর হারানোর হার খুব একটা বেশি নয়। এই ১০টি কোম্পানির জন্য সূচক কমেছে মোট ৫.৬৪ পয়েন্ট।
মঙ্গলবার ডিএসইতে সূচক বৃদ্ধি ও কমার পেছনে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছে যে ১০টি করে কোম্পানি
লেনদেনে সেরা বিমা, উত্থানে বস্ত্র
আগের দিন বিমা খাতের ঝলমলে দিন গেলেও আজ তা ধরে রাখতে পারেনি এই খাতটি। দিনের প্রথম ভাগে উত্থানে থাকলেও দ্বিতীয় ভাগে কমে যায় অর্ধেক কোম্পানির শেয়ার দর।
শেষ পর্যন্ত ২৫টি বিমা কোম্পানির শেয়ার দর বেড়েছে, কমেছে ২৩টির, পাল্টায়নি বাকি তিনটির দর।
এই খাতে লেনদেন হয়েছে ২৮৩ কোটি ১৫ লাখ টাকা। আগের দিন তা ছিল ২৪৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা।
সাধারণ বিমা খাতের সবচেয়ে বেশি দর বেড়েছে ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্সের ৭.৬৮ শতাংশ। শেয়ার দর ১৩৪ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ১৪৪ টাকা ৩০ পয়সা।
তারপরই আছে বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি, যার দর বেড়েছে ৭.১৫ শতাংশ। ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের দর বেড়েছে ৪.৫০ শতাংশ।
ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্স, বাংলাদেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্স, সোনার বাংলা ইন্স্যুরেন্স, পদ্মা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দর বেড়েছে উল্লেখযোগ্য।
মঙ্গলবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে এই পাঁচ খাতে
পতনের দিক দিয়ে শীর্ষে ছিল প্রগতি লাইফ, যার শেয়ারপ্রতি দর কমেছে ১.৭৭ শতাংশ। শেয়ার দর ১১৭ টাকা ৭০ পয়সা থেকে কমে হয়েছে ১১৫ টাকা ৬০ পয়সা।
দেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্সের দর ১.৬২ শতাংশ কমে ৪৯ টাকা থেকে হয়েছে ৪৮ টাকা ২০ পয়সা।
বিমার পরেই লেনদেন বেশি হয়েছে বস্ত্র খাতে। আগের দিন হাতবদল হয়েছিল ২০৬ কোটি ৪০ লাখ টাকা। তা বেড়ে হয়েছে ২৭৮ কোটি ৩০ লাখ টাকা।
৫৮টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ৪৩টির, কমেছে ১১টির আর পাল্টায়নি বাকি চারটির।
দিনের সবচেয়ে বেশি দর বৃদ্ধির তালিকায় এই খাতের কোম্পানিগুলোর প্রাধান্য দেখা গেছে।
এর মধ্যে দর বৃদ্ধিতে বস্ত্র খাতের শীর্ষে ছিল প্যাসিফিক ডেনিম, যার দর বেড়েছে ৯.৮৬ শতাংশ। শেয়ার দর ১৫ টাকা ২০ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ১৬ টাকা ৭০ পয়সা।
তারপরই ছিল আলিফ ম্যানুফেকচারিং, যার দর ৯.৫১ শতাংশ বেড়ে ১৮ টাকা ৯০ পয়সা থেকে হয়েছে ২০ টাকা ৭০ পয়সা।
‘জেড’ ক্যাটাগরির তুং হাইয়ের দর ৮.৮১ শতাংশ বেড়ে ৬ টাকা ৮০ পয়সা থেকে হয়েছে ৭ টাকা ৪০ পয়সা।
প্রকৌশলে মিশ্র প্রবণতা
এই খাতের ৪২টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ২৩টির, কমেছে ১৮টির। অপরিবর্তিত ছিল বাকি তিনটির দর।
এ খাতে মোট লেনদেন হয়েছে ১৭০ কোটি ৮ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ১৬২ কোটি ৮৪ লাখ টাকা।
এই খাতের সবচেয়ে বেশি দর বেড়েছে বেঙ্গল উইসডমের ৫.৮৫ শতাংশ। শেয়ার দর ২৭ টাকা ৩০ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ২৮ টাকা ৯০ পয়সা।
প্রধান খাতগুলোর মধ্যে এই ছয়টিতে লেনদেন হয়েছে সবচেয়ে কম
বিবিএসের দর ৪.৯৭ শতাংশ বেড়ে ২০ টাকা ১০ পয়সা থেকে হয়েছে ২১ টাকা ১০ পয়সা।
অ্যাপোলো ইস্পাতের দর বেড়েছে ৩.৩৫ শতাংশ। বিবিএস কেব্লের দর বেড়েছে ৩.১৫ শতাংশ।
ব্যাংকের চিত্র
৩২টি ব্যাংকের মধ্যে দর বেড়েছে ১২টির, কমেছে ৬টির। আগের দিনের দামেই আছে ১২টি।
সোমবার লেনদেন হয়েছিল মোট ১০২ কোটি ৮০ লাখ টাকা। মঙ্গলবার লেনদেন হয়েছে ১০৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা।
সবচেয়ে বেশি বেড়েছে রূপালী ব্যাংকের ২.৩৮ শতাংশ। শেয়ার দর ৩৭ টাকা ৬০ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ৩৮ টাকা ৫০ পয়সা।
সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার ব্যাংকের বেড়েছে ২.৩৭ শতাংশ। শেয়ার দর ২১ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ২১ টাকা ৫০ পয়সা।
স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, আইসিবি ইসলামী ব্যাংক, এবি ব্যাংকের শেয়ার দর বেড়েছে।
দর কমেছে এনসিসি ব্যাংকের ১.২৫ শতাংশ, ইস্টার্ন ব্যাংকের ১.২২ শতাংশ, সাউথ ইস্ট ব্যাংকের ১.১৯ শতাংশ।
অন্যান্য খাতের লেনদেন
আর্থিক খাতের মোট লেনদেন হয়েছে ১৭১ কোটি ৭০ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ১৮১ কোটি ৪৪ লাখ টাকা।
২৩টি কোম্পানির মধ্যে ১৪টির দর বেড়েছে, কমেছে ৫টির। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ২৬৮ কোটি ৪ লাখ টাকা।
ওষুধ ও রসায়ন খাতে লেনদেন হয়েছে ২০৪ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। আগের দিন তা ছিল ১৫৮ কোটি ৯০ লাখ টাকা।
৩১টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ১৭টির। বিপরীতে কমেছে ১২টির, অপরিবর্তিত ছিল একটির আর একটির লেনদেন দীর্ঘদিন ধরে স্থগিত আছে।
মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মোট লেনদেন আগের দিন বেড়েছে। সোমবার লেনদেন হয়েছে ১৫ কোটি ৮০ লাখ টাকা। মঙ্গলবার লেনদেন হয়েছে ২৪ কোটি ১০ লাখ টাকা।
দর বেড়েছে ২২টির। কমেছে ৫টির। বাকি ৯টি ফান্ডের দর পাল্টায়নি।
তথ্যপ্রযুক্তি খাতের মোট লেনদেন হয়েছে ৪১ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন ছিল ৭৫ কোটি ৫৫ লাখ টাকা।
এই খাতে ৩টি কোম্পানির শেয়ার দর কমেছে, বেড়েছে বাকি ৮টির।
বিবিধ খাতের ১৪টি কোম্পানিতে লেনদেন হয়েছে ১৭২ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ১৫০ কোটি টাকা।
লেনদেন হওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে দর বেড়েছে ১১টির। দর কমেছে ৩টির।
সূচক ও লেনদেন
ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৫২ দশমিক ৭৪ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ২৫৮ পয়েন্টে।
শরিয়াভিত্তিক কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসইএস ১৬ দশমিক ৮৮ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৫৮৬ পয়েন্টে।
বাছাই করা কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএস ৩০ সূচক ২৪ দশমিক ৫৬ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৬৮৫ পয়েন্টে।
চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) প্রধান সূচক সিএএসপিআই ২১০ দশমিক ২৫ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২১ হাজার ২৪০ দশমিক ৪৮ পয়েন্টে।
লেনদেন হওয়া ৩২৭টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১৯৪টির, কমেছে ১০০টির, পাল্টায়নি ৩৩টির।
লেনদেন হয়েছে ৭০ কোটি টাকা। আগের দিন লেনদেন হয়েছে ৭৫ কোটি টাকা।