খাগড়াছড়ি থেকে বন্ধুদের সঙ্গে রাঙামাটির ঝুলন্ত সেতু দেখতে এসেছিলেন সুমন চাকমা। তবে সে আশা পূরণ হয়নি তার।
সুমন চাকমা বলেন, ‘রাঙামাটির কাছে খাগড়াছড়ি হলেও কম আসা হয়। সেতুতে ঘুরতে এসে দেখলাম পানির নিচে ডুবে গেছে। এত কষ্ট করে এসেও কোনো লাভ হলো না।’
প্রতি বর্ষায় কাপ্তাই হ্রদের পানি বাড়লে ডুবে যায় রাঙামাটির পর্যটনশিল্পের অন্যতম আকর্ষণ ঝুলন্ত সেতু। এ সময় সেতুর পাটাতনের প্রায় ছয় ইঞ্চি ওপরে উঠে আসে হ্রদের পানি। নিষেধাজ্ঞা দিতে হয় চলাচলে।
স্থানীয় লোকজন জানান, সেতু ডুবলে পারাপারের জন্য নৌকা ছাড়া উপায় থাকে না তাদের। কমে যায় পর্যটকের আনাগোনাও।
এসব কারণে প্রতিবছর স্থানীয় লোকজন ও পর্যটকও বিপাকে পড়ছেন। তারা অপেক্ষায় থাকেন কখন সেতু থেকে পানি নেমে যাবে।
অভিযোগ উঠেছে, ১৯৮৬ সালে অপরিকল্পিতভাবে সেতুটি নির্মাণ করায় এমন ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। নির্মাণের সময় যদি সেতুর উচ্চতা বাড়ানো হতো, তাহলে হয়তো এমন বেহাল হতো না ।
সোমবার গিয়ে দেখা যায়, রাঙামাটি তবলছড়ি এলাকার দুই দ্বীপের দুই পিলারের ওপর দাঁড়িয়ে আছে ঝুলন্ত সেতুটি। তবে কয়েক দিন টানা হালকা বৃষ্টির কারণে কাপ্তাই হ্রদে পানি বেড়েছে। ডুবে গেছে সেতুটিও।
এ কারণে হতাশ পর্যটক ও স্থানীয় লোকজন । নৌকা দিয়ে এপার থেকে ওপারে পার হচ্ছেন তারা। একদিকে বেড়েছে ভোগান্তি, অন্যদিকে পারাপারে দিতে হচ্ছে টাকা।
রাঙামাটি পর্যটন করপোরেশন ও হলিডে কমপ্লেক্সের ব্যবস্থাপক সৃজন বিকাশ বড়ুয়া জানালেন, পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে সেতু দিয়ে চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে।
তিনি বললেন, ‘পানি নেমে গেলে আবারও আগের মতো স্বাভাবিক করে দেয়া হবে।’
সেতু দেখতে ঢাকা থেকে এসেছেন তানজিদা ও রাসেল।
তানজিদা বলেন, ‘লকডাউন খুলে দেয়ায় অনেক আশা নিয়ে রাঙামাটিতে এসেছি। ঝুলন্ত সেতু দেখার ইচ্ছা ছিল খুব। এত সুন্দর রাঙামাটি। তবে সেতুটি এভাবে দেখব কখনও ভাবতে পারিনি।’
তিনি বলেন, ‘সংস্কার করে যদি সেতুটির উচ্চতা বাড়ানো যায়, তাহলে কোনো পর্যটক পরে বেড়াতে এসে হতাশ হবেন না।’
সেতু এলাকায় নৌকাঘাটের ইজারাদার রমজান আলী বলেন, ‘কর্তৃপক্ষ যদি সেতুটির কাজ করত, তাহলে প্রতিবছর এভাবে পানিতে ডুবত না। করোনায় অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। দ্বিতীয়বার ক্ষতিগ্রস্ত হলাম সেতু ডুবে যাওয়ায়। পর্যটক না আসায় বোটগুলোও ঘাটে বসে আছে।’
পার্বত্য রাঙামাটি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অংসুই প্রু চৌধুরী বলেন, ‘সেতুটির ডুবে যাওয়ার সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হবে। যদি সেতুটিতে বড় ধরনের কাজ করতে হয়, তাহলে আগামী বছর জেলা পরিষদের মাধ্যমে উদ্যোগ নেয়া হবে।’