বরগুনার পাথরঘাটার জালিয়াঘাটা এসইএসডিপি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের দুটি শ্রেণিকক্ষকে আবাসস্থল হিসেবে ব্যবহার করছেন প্রতিষ্ঠানটির প্রধান শিক্ষক।
তবে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার দাবি, পরিবার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে প্রধান শিক্ষক মো. ফিরদৌস শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিতে বসবাস করলেও বিষয়টি তার জানা নেই।
স্থানীয়দের অভিযোগ, শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তাদের মাধ্যমেই তিনি সেখানে বসবাস করছেন।
সোমবার ওই বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, তিনতলা বিদ্যালয় ভবনটির দ্বিতীয় তলায় দুটি শ্রেণিকক্ষে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বসবাস করছেন ফিরদৌস। শ্রেণিকক্ষের কয়েকটি বেঞ্চ দিয়ে খাটিয়ার মতো তৈরি করে নিয়েছেন তারা।
ছাত্রীদের ব্যবহারের টয়লেটও দখলে নিয়েছেন তারা। এ ছাড়া বঙ্গবন্ধুর ছবি সম্বলিত ব্যানার দিয়ে রান্নাঘরে ঘের দেয়া হয়েছে।
বরগুনার পাথরঘাটার জালিয়াঘাটা এসইএসডিপি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের দুটি শ্রেণিকক্ষ নিয়েই থাকছেন এর প্রধান শিক্ষক
এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক ফিরদৌস বলেন, ‘এটা হেডমাস্টারের স্পেশাল রুম। সরকার এটাকে করেছেই শিক্ষকরা রান্না করবে, থাকবে এই জন্য। বিদ্যালয়ে কাজ চলছে, নির্মাণ শ্রমিকদের খাওয়ানোর জন্য রান্না করতে হয়। আমি বিদ্যালয়ের অব্যহৃত কক্ষেই বসবাস করি, এটা সবাই জানে। আপনি শিক্ষা অফিসারকে জিজ্ঞাস করেন।’
একপর্যায়ে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে প্রতিনিধিকে বলেন, ‘আমি এইখানে থাকি, আপনাদের সমস্যা কী? আপনারা যা পারেন করেন।’
ওই এলাকার একাধিক অভিভাবক জানান, মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার সাহায্য নিয়েই দীর্ঘদিন ধরে ফিরদৌস বিদ্যালয়ের কক্ষ দুটি দখল করে বসবাস করছেন। স্কুলের প্রধান শিক্ষক হওয়ায় কেউ তাকে কিছু বলার সাহস পায় না।
ওই ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘ওই প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে পরিবার নিয়ে থাকছেন। তার জন্য আসলে আলাদা করেও বাসভবনের ব্যবস্থা নেই। তবে বিষয়টি ম্যানেজিং কমিটিকে জানিয়ে অনুমতি নেয়া উচিত। আমার জানামতে, তিনি সেটি না করেই ওই কক্ষ দুটি ব্যবহার করেছেন।’
বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সাবেক সভাপতি জালাল আহমেদ বলেন, ‘বিদ্যালয়টির বর্তমানে কোনো ব্যবস্থাপনা কমিটি নেই। এডহক কমিটি দিয়েই চলছে সব ধরনের কার্যক্রম। প্রধান শিক্ষকের থাকার জন্য বিদ্যালয়ে কোনো কক্ষ বরাদ্দ দেয়া নেই। ওই শিক্ষক অনেক আগে একবার বিদ্যলয়ে বসবাস শুরু করেছিলেন। পরে আমরা তাকে নেমে যেতে বলার পর তিনি কক্ষ ছেড়েছিলেন। এরপর আবারও উঠেছেন শুনছি।’
পাথরঘাটা উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার মুহাম্মদ মুনিরুল ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। যদি তিনি পরিবার নিয়ে স্কুলের শ্রেণিকক্ষ দখল করে বসবাস করে থাকেন তবে বিষয়টি আমরা দেখব।’
এ বিষয়ে জেলার ভারপ্রাপ্ত মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘আমার জানামতে প্রধান শিক্ষক নিজস্ব বাসা নিয়ে থাকেন। শ্রেণিকক্ষ দখল করে থাকার বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে এ ব্যপারে খোঁজ নিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হোসাইন মোহাম্মদ আল মুজাহিদ বলেন, ‘বিষয়টি আমারও জানা নেই। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে বলছি সরেজমিনে দেখে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য।’