বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

কেপিসিএলের মেয়াদ বাড়ছে তিন বছর

  •    
  • ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ২১:০৬

খুলনা পাওয়ারসহ চার কোম্পানির পাঁচটি কেন্দ্রের মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে মঙ্গলবার সভা ডেকেছে বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়। প্রাথমিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ‘নো ইলেকট্রিসিটি, নো বিল’ নীতিতে এসব কেন্দ্রকে অনুমোদন দেয়া হবে। তবে কেপিসিএল জানিয়েছে, তারা ন্যূনতম ক্যাপাসিটি চার্জ রাখার চেষ্টা করবে।

প্রথমে দুই বছরের জন্য আলোচনায় থাকলেও পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত খুলনা পাওয়ার কোম্পানি কেপিসিএলের দুই বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ তিন বছর বাড়তে যাচ্ছে।

এই কোম্পানিটি ছাড়াও সামিট পাওয়ার ও ওরিয়ন গ্রুপের মালিকানাধীন ওরিয়ন পাওয়ার মেঘনা ঘাট এবং অপরটি ডাচ্-বাংলা পাওয়ার অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটসেরও একটি করে বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে।

এর মধ্যে কেপিসিএলের দুটি কেন্দ্রের উৎপাদনক্ষমতা ১৫৫ মেগাওয়াটের, নারায়ণগঞ্জের মদনগঞ্জে সামিটের কেন্দ্রের উৎপাদনক্ষমতা ১০২ মেগাওয়াট, ওরিয়নের মেঘনা ঘাট ও ডাচ্‌-বাংলার পাওয়ার অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটের সিদ্ধিরগঞ্জের উৎপাদনক্ষমতা ১০০ মেগাওয়াট করে।

কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হয় যে আইনে, তার মেয়াদ বাড়ানোর পর পাঁচটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ বাড়াতে আলোচনার জন্য বৈঠক ডেকেছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়।

মঙ্গলবার বেলা তিনটায় বিদ্যুৎ ভবনে এই বৈঠক আহ্বান করেছে মন্ত্রণালয়। এতে বিদ্যুৎ ও জ্বালানিসংশ্লিষ্ট ১৪টি বিভাগের প্রতিনিধি এবং পাঁচটি বিদ্যুৎ কোম্পানির প্রতিনিধিদের থাকতে বলা হয়েছে।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর অসহনীয় বিদ্যুৎ পরিস্থিতি মোকাবিলায় ভাড়াভিত্তিক বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের ওপর নির্ভর করে। প্রথমে পাঁচ বছরের জন্য এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ কেনার চুক্তি হয়। পরে তা আরও পাঁচ বছর বাড়ানো হয়।

সম্প্রতি এই পাঁচটি কোম্পানির বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় বিশেষ করে কেপিসিএলের বিনিয়োগকারীরা হতোদ্যম হয়ে পড়েন। সামিটের বিনিয়োগকারীদের ঝুঁকি সেই তুলনায় কম। কারণ, কোম্পানিটির আরও অনেক বিদ্যুৎকেন্দ্র আছে। ওরিয়ন গ্রুপের অন্য ব্যবসা আছে।

কিন্তু কেপিসিএলের দুই কেন্দ্রের মেয়াদ পেরিয়ে যাওয়ায় তাদের ব্যবসা বলতে সহযোগী কোম্পানি ইউনাইটেড পায়রার ৩৫ শতাংশের মালিকানা ছাড়া আর কিছুই ছিল না।

এই অবস্থায় গত ১৬ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) (সংশোধন) আইন, ২০১০ পাস হয়।

আইনের মেয়াদ পাঁচ বছর বাড়ানোয় ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর মেয়াদ বাড়াতে আইনি বাধা দূর হয়। আর এতে উৎসাহী হয়ে ওঠেন কেপিসিএলের বিনিয়োগকারীরা।

কোম্পানিটির বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ অন্তত দুই বছর বাড়বে বলে নিউজবাংলাকে একাধিকবার নিশ্চিত করেছেন পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম।

সুইজারল্যান্ডের জুরিখে রোড শোতে যাওয়ার আগেও তিনি বলেন, ‘সময় দুই বছর বাড়িয়ে দেয়া হবে বলে খবর পেয়েছি। আশা করি সেটি হবে। করোনার কারণে লোকজন অফিসে কম এসেছেন। ফলে কাজ কিছুটা কম হয়েছে। আমি আশ্বাস পেয়েছি এটি হবে।’

তবে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে জানান, পাঁচ বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ বাড়ছে ২০২৪ সাল পর্যন্ত।

কী শর্ত থাকছে, তাও জানান তিনি। বলেন, ‘নো ইলেকট্রিসিটি, নো বিল-এই নীতিতে কেন্দ্রগুলো চলবে।‘

অর্থাৎ, এতদিন বিদ্যুৎ না কিনলে কেন্দ্রকে বসিয়ে রেখে যে ক্যাপাসিটি চার্জ দেয়া হতো, সেটি আর দেয়া হবে না। তবে পুরোটা নির্ভর করছে মঙ্গলবারের বৈঠকের ওপর।

কেপিসিএলের একজন কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে জানিয়েছেন, তারা এই শর্তে রাজি আছেন। তবে চেষ্টা করবেন ন্যূনতম একটি ক্যাপাসিটি চার্জ রাখার।

খুলনায় কেপিসিএলের ৪০ ও ১১৫ মেগাওয়াটের দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্র সেখানকার স্থানীয় চাহিদা পূরণে জরুরি। সেখানে দুটি বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র রামপাল ও রূপসা এখনও উৎপাদনে আসতে দেরি হবে। তাই কেপিসিএল থেকে বিদ্যুৎ কিনতেই হবে।

সতর্ক বার্তাও ছিল কেপিসিএল ও ওরিয়নের

যে আইনের অধীনে কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিচালনা করা হচ্ছে, সেই আইনের মেয়াদ বৃদ্ধির চূড়ান্ত অনুমোদন পাওয়ার আগেই শেয়ারমূল্য বেড়ে যাওয়া নিয়ে গত ১২ সেপ্টেম্বর বিনিয়োগকারীদের সতর্ক করে খুলনা পাওয়ার কোম্পানি কেপিসিএল ও ওরিয়ন ফার্মা।

কোম্পানি দুটি সেদিন জানায়, তাদের বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ বাড়েনি। আইন সংশোধন আর মেয়াদ বৃদ্ধির বিষয়টি দুটি আলাদা বিষয়।

কেপিসিএল সেদিন বলে, ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) (সংশোধন) আইনের মেয়াদ ২০২৬ সাল পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাবে অনুমোদন দেয়া হলেও কোম্পানির সঙ্গে বিদ্যুৎ ক্রয়ের কোনো চুক্তি হয়নি।

‘বেসরকারি বিদ্যুৎ কোম্পানির জন্য এই সিদ্ধান্ত ইতিবাচক হতে পারে। আপনাদের আগেই জানানো হয়েছিল, কেপিসিএলের দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের (১১৫ মেগাওয়াটের কেপিসিএল ইউনিট টু ও ৪০ মেগাওয়াটের নওয়াপাড়া কেন্দ্র) মেয়াদ বৃদ্ধির বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।

‘তবে আমরা বিদ্যুৎ বিভাগ বা বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে কোনো নির্দেশনা পাইনি। এ বিষয়ে সরকারের সিদ্ধান্ত যথাসময়ে আপনাদের জানানো হবে। এই পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, যে সিদ্ধান্ত হয়েছে, তা কোম্পানির আর্থিক হিসাবে কোনো প্রভাব ফেলবে না।’

তবে মেয়াদ বৃদ্ধির বৈঠক ডাকার বিষয়ে কোম্পানির পক্ষ থেকে কোনো বার্তা বিনিয়োগকারীদের জন্য রাখা হয়নি।

কেপিসিএলের পূর্বাপর তথ্য

কোম্পানির হাতে ছিল তিনটি বিদ্যুৎকেন্দ্র। এর মধ্যে একটির মেয়াদ ২০১৮ সালে শেষ হওয়ায় আর নবায়ন করা হয়নি।

বাকি দুটির মধ্যে খানজাহান আলী পাওয়ার লিমিটেডের ৪০ মেগাওয়াট কেন্দ্রের মেয়াদ শেষ হয় ৩১ মে। কেপিসিএলে ইউনিট-টু ১১৫ মেগাওয়াট কেন্দ্রের মেয়াদ শেষ হয় ২৮ মে।

কেপিসিএলের দুই বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ না বাড়লে এই ইউনাইটেড পায়রার ৩৫ শতাংশের মালিকানার ওপর নির্ভর করতে হতো কেপিসিএলকে

এই দুটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কেপিসিএলের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড পায়রা প্লান্টই বিনিয়োগকারীদের একমাত্র ভরসার জায়গা।

গত ২১ জানুয়ারি ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। পটুয়াখালীর খোলিশখালীতে অবস্থিত এই কেন্দ্র থেকে ১৫ বছর বিদ্যুৎ কিনবে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি)। এখানে কেপিসিএলের মালিকানা ৩৫ শতাংশ।

শেয়ার নিয়ে হতাশা

২০১০ সালে চাঙা পুঁজিবাজারে সরাসরি তালিকাভুক্ত কোম্পানিটির শেয়ার বিক্রি হয় গড়ে ২১৪ টাকা করে। ছয় বছর বোনাস শেয়ার দিয়ে কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধন দাঁড়িয়েছে ৩৯৭ কোটি ৪১ লাখ ৩০ হাজার টাকা।

গত ৩১ আগস্টের তথ্য অনুযায়ী কোম্পানিটির ৬৯.৯৯ শতাংশ শেয়ার আছে উদ্যোক্তা পরিচালকদের হাতে। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে আছে ৮ দশমিক ৭৪ শতাংশ। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের হাতে আছে ০.২১ শতাংশ আর ব্যক্তিশ্রেণির বিনিয়োগকারীদের কাছে আছে ২১ দশমিক ০৬ শতাংশ শেয়ার।

দুই মাস আগে প্রতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা হাতে থাকা প্রায় সব শেয়ার বিক্রি করে দিলেও জুলাই মাসে তারা কিনে নেন সোয়া তিন কোটির বেশি শেয়ার।

আয়ের হিসাব

কোম্পানিটির দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়ায় গত ৩০ জুলাই সমাপ্ত অর্থবছরে আগের বছরের চেয়ে বেশিও হতে পারে, আবার কমও হতে পারে।

মার্চে শেষ হওয়া তৃতীয় প্রান্তিক অনুযায়ী কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় হয়েছে ২ টাকা ৬৫ পয়সা। গত বছর একই সময়ে এই আয় ছিল ২ টাকা ৬২ পয়সা।

তবে চতুর্থ প্রান্তিকের তিন মাসের জায়গায় দুই মাস চলেছে কোম্পানিটির দুই বিদ্যুৎকেন্দ্র। এই হিসাবে আয় কিছুটা কম হতে পারে। তবে ইউনাইটেড পাওয়ারের আয় যোগ হলে তা আবার গত বছরের আয়কে ছাড়িয়েও যেতে পারে।

এ বিভাগের আরো খবর