৯ বছর পর ইলিশ রপ্তানির ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা সাময়িকভাবে তুলে নিল সরকার। আসন্ন দুর্গাপূজা উপলক্ষে ভারতে রপ্তানি হবে ২ হাজার ৮০ টন ইলিশ।
দেশের অনুমোদিত ৫২টি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এ পরিমাণ ইলিশ যাবে ভারতে। অনুমোদিত রপ্তানিকারকরা প্রত্যেকে গড়ে ৪০ টন করে রপ্তানির সুযোগ পাবে। ১০ অক্টোবর পর্যন্ত এ অনুমতি বলবৎ থাকবে।
সোমবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের রপ্তানি-২ শাখা থেকে ছয়টি শর্ত দিয়ে ইলিশ রপ্তানির এই অনুমোদন দেয়া হয়। ইতিমধ্যে অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান ও তার বিপরীতে রপ্তানির পরিমাণ উল্লেখ করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
উপসচিব তানিয়া ইসলাম স্বাক্ষরিত এ প্রজ্ঞাপনে ছয় শর্ত উল্লেখ করে বলা হয়, রপ্তানিকারকদের রপ্তানি নীতি ২০১৮-২১ এর বিধিবিধান অনুসরণ করতে হবে। শুল্ক কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে রপ্তানিকৃত পণ্যের কায়িক পরীক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। প্রতিটি কনসাইনমেন্ট শেষে রপ্তানিসংক্রান্ত কাগজপত্র রপ্তানি-২ অধিশাখায় দাখিল করতে হবে। অনুমোদিত পরিমাণের বেশি ইলিশ রপ্তানি করা যাবে না।
অনুমোদিত রপ্তানিকারক ছাড়া অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ইলিশ রপ্তানি করা যাবে না।
দেশের বাজারে ইলিশের জোগান কম থাকার কারণে ২০১২ সাল থেকে বাংলাদেশ ইলিশ রপ্তানি পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়। এরপর গত ৯ বছরে এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়নি।
বিশ্বের মোট উৎপাদিত ইলিশের ৮৬ শতাংশই বাংলাদেশে উৎপাদিত হয়। বিশেষ করে মেঘনা ও পদ্মায় বর্ষাশেষে ধরা পড়া ইলিশ খুবই সুস্বাদু বলে মনে করা হয়। ভারতের পশ্চিমবঙ্গে বাংলাদেশের ইলিশের কদর বেশি।
বাংলাদেশে পোনা ইলিশ বা জাটকা ধরার ওপর বিধিনিষেধ আরোপসহ নানান উদ্যোগের কারণে গত দেড় দশকে ইলিশের উৎপাদন অনেক বেড়েছে।
২০০৭-০৮ অর্থবছরে ২ লাখ ৬০ হাজার টন ইলিশের উৎপাদন হলেও ২০১৯-২০২০ সালে ইলিশের উৎপাদন হয় ৫ লাখ ৩৩ হাজার টন। গত ১১ বছরে ইলিশের উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ৮৪ শতাংশ।
মৎস্য ব্যবসায়ীরা বেশ কিছুদিন ধরে ইলিশ রপ্তানির দাবি জানিয়ে আসছিলেন। তবে দেশের বাজারে ইলিশের সরবরাহ ঠিক রাখা ও ইলিশের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকার এ নিষেধ বহাল রাখে।
ইলিশ রপ্তানির অনুমতি পেল যেসব প্রতিষ্ঠান
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় রপ্তানি-২ শাখা সূত্র জানায়, দুই মাস ধরে সারা দেশ থেকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে প্রায় ৪ শতাধিক ইলিশ রপ্তানির আবেদন জমা পড়ে। এসব আবেদন যাচাই-বাছাই শেষে প্রতিষ্ঠানের সার্বিক কমপ্লায়েন্স, সক্ষমতা এবং সুনাম বিবেচনায় নিয়ে এর থেকে ৫২টি প্রতিষ্ঠানকে রপ্তানির অনুমতি দেয়া হয়।
এসব প্রতিষ্ঠান হলো:
মেসার্স লাকি এন্টারপ্রাইজ, আরিফ সি ফুড, এম এস চেইন ইন্টারন্যাশনাল, সেইভ অ্যান্ড সেফটি ইন্টারন্যাশনাল, যমুনা অ্যাগ্রো ফিশারিজ, বিডিএস করপোরেশন, এমআর ট্রেডার্স, টাইগার ট্রেডার্স, মেসার্স বিশ্বাস ট্রেডার্স, নিজাম এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স আজম ট্রেডার্স, মেসার্স সাজ্জাদ এন্টারপ্রাইজ, ফাহিম সি ফুড প্রসেসিং অ্যান্ড ফার্মিং লি., কেজিএন এন্টারপ্রাইজ, প্যাসিফিক সি ফুড লি., মাসুদ ফিস প্রসেসিং অ্যান্ড আইচ কমপ্লেক্স লি., সেভেন স্টার ফিস প্রসেসিং কোম্পানি লি., ফেমগ্লেম লি., জেজে ট্রেডিং ইন্টারন্যাশনাল, অনরাজ ফিশ প্রোডাক্টস ইন্ডাস্ট্রিজ লি., বাগেরহাট সি ফুড ইন্ডাস্ট্রিজ লি., আলফা এক্সেসরিজ অ্যান্ড অ্যাগ্রো এক্সপোর্ট লি., সাউদার্ন ফুড লি., রূপসা ফিশ অ্যান্ড অ্যালাইড ইন্ডাস্ট্রিজ লি., এম ইউ সি ফুডস লি., জে বি এস ফুড প্রোডাক্টস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ লি., মেসার্স রহমান ইমপেক্স, পদ্মা অ্যাগ্রো ফিশারিজ, জাহানাবাদ সি ফুডস লি., জালালাবাদ ফ্রোজেন ফুডস লি., রিভারাইন ফিশ অ্যান্ড ফুড প্রসেসিং, এ আর ইন্টারন্যাশনাল, ইউনিয়ন ভেঞ্চার লি., ইউটেক সিস্টেম লি., আরমান ইন্টারন্যাশনাল, মেসার্স সাততারা মৎস্য ব্যবসায়ী, কাশফি সি ফুড এক্সপোর্ট, নোরা ফিশ ফার্ম, মেসার্স এস জে এল ইন্টারন্যাশনাল, মেসার্স বৃষ্টি এন্টারপ্রাইজ, প্যাসিফিক ফিশ প্রোডাক্টস লি., এ এম আই এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স জয় এন্টারপ্রাইজ, এ এইচ ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, মেসার্স জারা এন্টারপ্রাইজ, দীন বাংলাদেশ করপোরেশন, মেসার্স শংকর অ্যান্ড ব্রাদার্স, মেসার্স ফিশ অ্যান্ড ওশান, ভিজিল্যান্স এক্সপ্রেস লি., মেসার্স মেহেদী এন্টারপ্রাইজ, পপুলার ট্রেড সিন্ডিকেট ও স্বর্ণালী এন্টারপ্রাইজ।