চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে নতুন চারটি পণ্য রপ্তানিতে নগদ সহায়তা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। পণ্য চারটি হচ্ছে দেশে উৎপাদিত বাইসাইকেল ও বাইসাইকেলের যন্ত্র, চা, সিমেন্ট শিট এবং এমএস স্টিল দ্রব্য।
এই চারটি পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে ৪ শতাংশ হারে নগদ সহায়তা দেবে সরকার। অর্থাৎ কোনো প্রতিষ্ঠান ১০০ টাকার বাইসাইকেল রপ্তানি করলে সরকার তাকে ৪ টাকা দেবে।
গত অর্থবছরের ৩৮টি পণ্যের সঙ্গে নতুন এই চারটি মিলে এখন মোট ৪২টি পণ্য রপ্তানিতে বিভিন্ন হারে নগদ সহায়তা দেবে সরকার।
সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রানীতি বিভাগ থেকে এ-সংক্রান্ত একটি সার্কুলার জারি করা হয়েছে। সব ব্যাংকের কাছে পাঠানো সার্কুলারে বলা হয়েছে, গত অর্থবছরের মতো এবারও ১ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশ হারে নগদ সহায়তা দেয়া হবে।
সার্কুলারে বলা হয়, ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া চলতি অর্থবছরে নতুন যে চারটি খাত বা পণ্য যোগ করা হয়েছে, তাদের ৪ শতাংশ হারে নগদ সহায়তা দেয়া হবে।
এ ছাড়া বিশেষায়িত অঞ্চলের (বেজা, বেপজা ও হাইটেক পার্ক) বিদ্যমান সহায়তার আওতা বাড়ানো হয়েছে।
বিদ্যমান সুবিধা ছাড়াও বিশেষায়িত অঞ্চলের ‘এ’ টাইপ ও ‘বি’ টাইপ প্রতিষ্ঠান প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্য রপ্তানির বিপরীতে ৪ শতাংশ হারে নগদ সহায়তা পাবে। বিশেষায়িত অঞ্চলের সব ক্যাটাগরিভুক্ত প্রতিষ্ঠান দেশের বাইরে অন্যান্য পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে ১ শতাংশ হারে রপ্তানি প্রণোদনা সহায়তা পাবে।
সার্কুলারে আরও বলা হয়েছে, সফটওয়্যার আইটিইএস সেবা রপ্তানির বিপরীতে ব্যক্তি পর্যায়ের ফ্রিল্যান্সারদের জন্য ৪ শতাংশ হারে নগদ সহায়তা দেয়া হবে।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ স্বীকৃত অনলাইন মার্কেট প্লেস থেকে অর্জিত আয় দেশে প্রত্যাবাসন নিশ্চিত হয়ে ব্যক্তি পর্যায়ের ফ্রিল্যান্সারদের রপ্তানি ভর্তুকি প্রদান করতে হবে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় অনুমোদিত সংশ্লিষ্ট রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশন ব্যক্তি পর্যায়ের ফ্রিল্যান্সারদের রপ্তানি ভর্তুকির আবেদন প্রত্যয়ন করবে। রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের অবর্তমানে সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ ব্যক্তি পর্যায়ে ফ্রিল্যান্সারদের রপ্তানি ভর্তুকি আবেদন প্রত্যয়ন করবে।
রপ্তানি মূল্য প্রত্যাবাসনের এক বছর বা ৩৬০ দিনের মধ্যে রপ্তানি ভর্তুকির আবেদন দাখিল করা যাবে এবং কোনো একক ব্যক্তি অর্থবছরভিত্তিক সব প্রত্যাবাসিত আয়ের বিপরীতে এক বা একাধিক আবেদন করতে পারবেন।
আবেদনকারী ফ্রিল্যান্সারদের রেজিস্টার্ড ফ্রিল্যান্সার আইডি কার্ড থাকতে হবে।
ফ্লোট গ্লাস শিট, ওপাল গ্লাসওয়্যার, কাস্ট আয়রন ও অ্যালুমিনিয়াম ইঞ্জিনিয়ারিং পণ্য হালকা প্রকৌশল পণ্য খাতের আওতায় রপ্তানি ভর্তুকির জন্য বিবেচিত হবে।
পাশাপাশি উচ্চপ্রযুক্তিসম্পন্ন পণ্য (কম্প্রেসার) এবং এইচসিএফসিমুক্ত রেফ্রিজারেটর ইলেকট্রনিক পণ্য হিসেবে কনজ্যুমার ইলেকট্রনিকস, ইলেকট্রিক্যাল হোম ও কিচেন অ্যাপ্লায়েন্স খাতের আওতায় রপ্তানি ভর্তুকি প্রাপ্য হবে।
সার্কুলারে বলা হয়েছে, প্রযোজ্য সব খাতে নগদ সহায়তা, রপ্তানি ভর্তুকি ও প্রণোদনা সহায়তা পাওয়ার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট রপ্তানির বিপরীতে ন্যূনতম ৩০ শতাংশ দেশীয় মূল্য সংযোজন থাকতে হবে।
বাইকেল রপ্তানিতে সুবাতাস
নতুন যে চারটি খাতে সরকার নগদ সহায়তা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে তার মধ্যে বেশ কিছুদিন ধরেই বাইসাইকেল রপ্তানিতে সুবাতাস বইছে। করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে এই খাতের রপ্তানিতে উল্লম্ফন হয়েছে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যে দেখা যায়, গত ২০২০-২১ অর্থবছরে বাইসাইকেল রপ্তানি করে বাংলাদেশ ১৩ কোটি ৮ লাখ ৯০ হাজার ডলার আয় করেছে। বর্তমান বাজারদরে টাকার হিসাবে (প্রতি ডলার ৮৫ টাকা ২৫ পয়সা) এই অর্থের পরিমাণ ১১৬ কোটি টাকা, যা আগের অর্থবছরের (২০১৯-২০) চেয়ে ৫৮ শতাংশ বেশি।
চলতি অর্থবছরেও এই বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রয়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) বাইসাইকেল রপ্তানি থেকে ২ কোটি ৪১ লাখ ডলার আয় হয়েছে। এই অঙ্ক গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২৮ দশমিক ৩৩ শতাংশ বেশি।
তবে, একসময়ের অন্যতম প্রধান রপ্তানি পণ্য চা রপ্তানির অবস্থা মোটেই ভালো নয়। গত অর্থবছরে চা রপ্তানি থেকে মাত্র ৩৫ লাখ ৬০ হাজার ডলার দেশে এসেছিল।
চলতি অর্থবছরের জুলাই-আগস্ট সময়ে চা রপ্তানি কমেছে ৮৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ।