বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘ফেসবুক’ নিয়ে ব্যস্ত নার্স, ২ শিশুর মৃত্যু

  •    
  • ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ১৯:২৩

শিশুটির বাবা দিলীপ চন্দ্র রায় বলেন, ‘ডাক্তারের দেয়া ওষুধ ও স্যালাইন এনে নার্সদের হাতে দিই। শিশুকে ওষুধ ও স্যালাইন দেয়ার অনুরােধ করলে তারা গুরুত্ব দেননি। তারা রুম বসে মােবাইলে ফেসবুক চালাচ্ছিলেন। এর মধ্যে আমার মেয়ে মারা যায়। এখনও স্যালাইন ওভাবেই পড়ে আছে।’

কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে নার্সদের অবহেলায় চিকিৎসা না পেয়ে দুই শিশুর মৃত্যুর অভিযােগ উঠেছে।

সােমবার দুপুরে হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে তাদের মৃত্যু হয়।

দুই শিশুর অভিভাবকদের অভিযোগ, ওয়ার্ডে নার্সরা মোবাইলে ফেসবুক নিয়ে ব্যস্ত থাকায় যথাসময়ে চিকিৎসার অভাবে দুই শিশু মারা গেছে।

অভিযুক্ত নার্সদের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তারা।

মৃত শিশুরা হলাে কুড়িগ্রাম কেন্দ্রীয় বাসস্ট্যান্ড এলাকার ছয়ানিপাড়ার দিলীপ চন্দ্র রায়ের মেয়ে এবং রাজীবপুরের মরিচাকান্দি গ্রামের রবিউল ইসলামের মেয়ে। দুই শিশু শনিবার কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে জন্ম নেয়।

মৃত শিশুর বাবা দিলীপ জানান, গত শনিবার হাসপাতালে তার স্ত্রী অঞ্জনা কন্যা সন্তান জন্ম দেয়। স্বাভাবিক প্রসব হলেও জন্মের সময় মাথায় আঘাত পেয়েছে জানিয়ে শিশুটিকে হাসপাতাল ভর্তি রাখার পরামর্শ দেন চিকিৎসক। তাকে ইনজেকশন ও স্যালাইন দেবারও প্রেসক্রিপশন দেয়া হয়।

তিনি বলেন, ‘আজ (সোমবার) ডাক্তারের দেয়া ওষুধ ও স্যালাইন এনে নার্সদের হাতে দিই। শিশুকে ওষুধ ও স্যালাইন দেয়ার অনুরােধ করলে তারা গুরুত্ব দেননি। তারা রুম বসে মােবাইলে ফেসবুক চালাচ্ছিলেন। এর মধ্যে আমার মেয়ে মারা যায়। এখনও স্যালাইন ওভাবেই পড়ে আছে।

‘দুপুরে বাচ্চার নাক থেকে অক্সিজেনের লাইন খুলে গেলে তা ঠিক করার জন্য নার্সদের ডাকি। তারা উল্টো আমাকে ধমক দিয়ে পাঠিয়ে দেন। কিছুক্ষণ পরেই বাচ্চাটি মারা যায়।’

বাচ্চার মৃত্যুর জন্য নার্সদের অবহেলাকে দায়ী করেন শিশুটির বাবা দিলীপ।

অপর মৃত শিশুর বাবা রবিউল ইসলাম জানান, ‘বাচ্চাকে ওষুধ দিতে ডাকলে নার্সরা আসেননি। চিকিৎসার অভাবে কখন আমার মেয়ে মারা গেছে টেরও পাইনি। নার্সরা মোবাইল নিয়া ব্যস্ত, রোগীর সেবায় তাদের অনীহা।’

মৃত শিশুর দাদা ফুল মিয়া বলেন, ‘নার্সরা মরা বাচ্চা নিয়া আমাগো রংপুর যেতে বলেন। এরা ইচ্ছা করে আমার নাতনিকে মেরে ফেলেছে।’

ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অন্য শিশুদের অভিভাবকরা জানান, নার্সরা ডিউটি রুমে মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। কোনো সমস্যার কথা বললে অভিভাবকদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করে চিকিৎসা না দেয়ার হুমকি দেন।

শিশু ওয়ার্ডে বিকেলের শিফটে দায়িত্বরত নার্স তুলসি রানী ও উর্মিলা সাহা অভিযোগের বিষয়ে অবগত নন বলে জানান। তারা বলেন, ঘটনার সময় যারা ডিউটিতে ছিলেন, তারা ডিউটি শেষে চলে গেছেন।

নার্সদের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে শিশু ওয়ার্ডের ইনচার্জ কাকলী বেগম বলেন, ’যে শিশু দুটি মারা গেছে, তাদের অবস্থা খারাপ ছিল। এরপরও নার্সদের কোনো অবহেলা থাকলে খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

তিনি আরও বলেন, ’শিশু ওয়ার্ডে ৪৮ রোগীর সিট, ভর্তি আছে ১১৮ শিশু। নার্স সংকট থাকায় অতিরিক্ত রোগীর সেবা দিতে হিমশিম খেতে হয়। ফলে ডিউটিতে কিছুটা ভুল-ত্রুটি হয়ে থাকতে পারে।’

কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ লিংকন বলেন, ‘আমি বিষয়টি জানার পর শিশু ওয়ার্ডে গিয়েছি। শিশু দুটির শারীরিক অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। বাচ্চা দুটিকে রংপুর নিয়ে যাওয়ার জন্য অভিভাবকদের পরামর্শ দেয়া হয়েছিল।’

নার্সদের বিরুদ্ধে অভিযােগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘রােগীর স্বজনরা বিষয়টি আমাকেও বলেছেন। প্রয়ােজনে আমি তদন্ত কমিটি করে দেব। সেবা দিতে গিয়ে রােগীদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ কাম্য নয়। তারা দায়িত্বে অবহেলা করলে অবশ্যই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর