অনুমোদনহীন রিজেন্ট হাসপাতালের সঙ্গে করোনা পরীক্ষার চুক্তিসহ নানা অনিয়মে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক (ডিজি) আবুল কালাম আজাদসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র অনুমোদন করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
আসামিদের বিরুদ্ধে লাইসেন্স নবায়ন না করা এবং বন্ধ ঘোষিত রিজেন্ট হাসপাতালকে ডেডিকেটেড কোভিড হাসপাতালে রূপান্তর, সমঝোতা স্মারক সই এবং নমুনা পরীক্ষা ও করোনা চিকিৎসার খরচ বাবদ ৩ কোটি ৩৪ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে।
সোমবার বিকেলে এক ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান দুদক সচিব মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার। দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে ওই চার্জশিট অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
গত বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর করা মামলায় সাহেদ করিম ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চার কর্মকর্তাসহ পাঁচ জনকে আসামি করা হয়। তবে সে সময় অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদের নাম আসামির তালিকায় ছিল না।
সংস্থাটির উপপরিচালক মো. ফরিদ আহমেদ পাটোয়ারী বাদী হয়ে মামলাটি করেন। সে মামলার চার্জশিটে তার নাম দেয়া হলো।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন, রিজেন্ট হাসপাতাল লিমিটেডের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাহেদ করিম, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক আমিনুল হাসান, উপপরিচালক (হাসপাতাল-১) ইউনুস আলী, সহকারী পরিচালক (হাসপাতাল-১) শফিউর রহমান এবং গবেষণা কর্মকর্তা দিদারুল ইসলাম।
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার করে লাইসেন্স নবায়নবিহীন বন্ধ রিজেন্ট হাসপাতালকে ডেডিকেটেড কোভিড হাসপাতালে রূপান্তর, সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর ও সরকারি প্রতিষ্ঠান নিপসমের ল্যাবে ৩ হাজার ৯৩৯ জন কোভিড রোগীর নমুনা বিনামূল্যে পরীক্ষা করিয়েছেন।
সেখান থেকে অবৈধ অর্থ বাবদ রোগী প্রতি ৩ হাজার ৫০০ টাকা হিসেবে ১ কোটি ৩৭ লাখ ৮৬ হাজার ৫০০ টাকা নিয়েছেন।
এ ছাড়া অনুসন্ধান প্রতিবেদনে রিজেন্ট হাসপাতালের মিরপুর ও উত্তরা শাখার চিকিৎসক, নার্স, ওয়ার্ড বয় ও অন্যান্য কর্মকর্তাদের খাবার খরচ বরাদ্দের বিষয়ে ১ কোটি ৯৬ লাখ ২০ হাজার টাকার মাসিক চাহিদা তুলে ধরাসহ সমঝোতা স্মারকের খসড়া স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর উদ্যোগ নেয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে।
গত বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর লাইসেন্সের মেয়াদ না থাকায় করোনাভাইরাসের নমুনা সংগ্রহ ও চিকিৎসার জন্য চুক্তি করে সরকারের ৩ কোটি ৩৪ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ওঠে রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাহেদ ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চার কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। সে অভিযোগে মামলা করে দুদক। তবে সেই মামলায় বাদ পড়েছিলেন আবুল কালাম আজাদ।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, এক বছর তদন্তের পর রিজেন্ট হাসপাতালে অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় স্বাস্থের সাবেক ডিজির যোগসূত্র খুঁজে পায় সংস্থাটি। নতুন করে স্বাস্থ্যের চার কর্মকর্তার সঙ্গে তার নাম যুক্ত করে অভিযোগপত্র কমিশনে অনুমোদনের জন্য জমা দিয়েছিলেন তদন্ত কর্মকর্তা ফরিদ আহমেদ পাটোয়ারী।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে সঙ্গে জেকেজির মতো প্রতিষ্ঠানের চুক্তি, রিজেন্ট হাসাপাতালের সঙ্গে চুক্তি, স্বাস্থ্যের এক গাড়ি চালককের শত কোটি টাকার সম্পদসহ নানা অভিযোগে জড়িত থাকার নাম আসে সাবেক মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদের। এরপর তদন্ত শুরু করে দুদক।