সাহেদ ওরফে সিলেটি সাঈদের স্ত্রী ও সন্তানরা লন্ডনে থাকেন। নিজের বিশাল অট্টালিকা রয়েছে মৌলভীবাজারে। রয়েছে অসংখ্য বাড়ি ও শতাধিক গাড়ি, কাভার্ড ভ্যান। এ সবকিছুর তিনি মালিক বনেছেন গার্মেন্টস পণ্য চুরির অর্থে। সিলেটি সাঈদ গার্মেন্টস পণ্য চোরচক্রের হোতা।
সোমবার দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) এ কে এম হাফিজ আক্তার।
সিলেটি সাঈদের পরিকল্পনায় তার নিজস্ব যানবাহনে গার্মেন্টস পণ্য পরিবহনের সময় কমপক্ষে পাঁচ হাজারবার চুরির ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় তার বিরুদ্ধে ২৪টি মামলা হয়েছে। তিনি বেশ কয়েকবার গ্রেপ্তারও হয়েছেন। সবশেষ একটি মামলায় তিনি আট মাস কারাভোগ করেন। কারাগার থেকে বেরিয়ে ফের যুক্ত হন চোরাই কারবারে।
তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে পরিবহনে যুক্ত ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান, এজেন্সি, চালক ও শ্রমিকদের যোগসাজশে গার্মেন্টস পণ্য চুরি করছে সংঘবদ্ধ চোরাই চক্র। বিশ্বে লিডিং রপ্তানিকারক বাংলাদেশে গার্মেন্টস শিল্পকে ঘিরে চোরচক্রের কারণে সুনাম নষ্ট হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি সংঘটিত চুরির ঘটনায় চোরাই মালামাল ও দুটি কাভার্ড ভ্যান উদ্ধার এবং গার্মেন্টস পণ্য চোরাই চক্রের হোতাসহ সাত সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
গত ১৫ সেপ্টেম্বর নেটওয়ার্ক ক্লোথিং লিমিটেড নামের গার্মেন্টসের ১৭ হাজার ১৫২টি তৈরি পোশাক বিদেশে রপ্তানির উদ্দেশে চট্টগ্রাম বন্দরে নেয়ার পথে চুরির ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় একটি মামলা হয়।
ওই ঘটনায় বিশেষ অভিযান চালিয়ে গার্মেন্টস পণ্য চুরির সংঘবদ্ধ চক্রের হোতা সাহেদ ওরফে সাঈদ ওরফে সিলেটি সাঈদসহ ৭ জনকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা তেজগাঁও বিভাগের একটি দল।
গত ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে ১৯ সেপ্টেম্বর রাত পর্যন্ত রাজধানীর উত্তরা এবং কুমিল্লা বুড়িচং এলাকায় ধারাবাহিক অভিযানে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার অন্যরা হলেন রাজ্জাক, ইউসুফ, মাইনুল, আলামিন, দুলাল হোসেন ও খায়রুল। এ সময় তাদের কাছ থেকে চার হাজার ৭০৫টি তৈরি পোশাকসহ দুটি কাভার্ডভ্যান জব্দ করা হয়।
এ কে এম হাফিজ আক্তার ঘটনার বিবরণ দিয়ে বলেন, ‘গত ১১ মে জয়ন্তি নীট ওয়্যার লিমিটেড নামের তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ২৮ হাজার ৮২০টি পণ্য শিপমেন্ট করতে চট্টগ্রাম বন্দরের উদ্দেশে পাঠায়। বিদেশে মালামাল পৌঁছার পর জানা যায়, ওই শিপমেন্টে ১১ হাজার পণ্য কম। এ জন্য বিদেশি বায়ার প্রতিষ্ঠানটিকে ২৮ হাজার ৯০৮ ডলার জরিমানা করে। এতে আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের সুনাম ক্ষুণ্ন হয়।
মামলার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ওই ঘটনায় গত ১৭ সেপ্টেম্বর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় একটি মামলা করে জয়ন্তি নীট ওয়্যার গার্মেন্টস কর্তৃপক্ষ। এ পরিপ্রেক্ষিতে ইমরান, মোবারক ও ইব্রাহিম নামে তিনজনকে গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ। তারা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছেন।
‘অন্যদিকে গত ১৫ সেপ্টেম্বর নেটওয়ার্ক ক্লোথিং লিমিটেড নামক গার্মেন্টসের তৈরি পোশাক এক হাজার ৪৩১ কার্টনে ১৭ হাজার ১৫২টি পণ্য রপ্তানির উদ্দেশে চট্টগ্রাম বন্দরে নিয়ে যায়। মালামাল শিপমেন্টের সময় গুনতে গিয়ে ৫ হাজার পণ্য কম পাওয়া যায়। ওই ঘটনায় তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় একটি মামলা হয়।’
তেজগাঁও জোনাল টিম তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে ঢাকা মহানগরীর উত্তরা থেকে চোরাই গার্মেন্টস মালামাল ও একটি কাভার্ড ভ্যানসহ রাজ্জাক, ইউসুফ, খায়রুল ও মাইনুলকে গ্রেপ্তার করে।
গ্রেপ্তারদের দেয়া তথ্যমতে কুমিল্লা জেলার বুড়িচং নিমসার এলাকা থেকে চোরাই গার্মেন্টস মালামাল ও একটি কাভার্ড ভ্যানসহ আল-আমিন ও দুলালকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারদের জিজ্ঞাসাবাদে এবং তাদের দেয়া তথ্যমতে চক্রের হোতা সাহেদকে গ্রেপ্তার করা হয়।
সাঈদের বিরুদ্ধে ২৪ মামলা
গ্রেপ্তার সাঈদের বিরুদ্ধে ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন থানায় ২৪টি মামলা রয়েছে। চট্টগ্রামে তিনি ৬টি মামলায় দীর্ঘদিন কারাভোগ করেছেন। চোর চক্রের অন্য সহযোগীদের সহায়তায় তিনি বিভিন্ন সময় ৪ থেকে ৫ হাজারবার চুরির ঘটনায় হাতিয়ে নিয়েছেন কয়েক হাজার কোটি টাকার পণ্য।
হাফিজ আক্তার বলেন, সাঈদের এক স্ত্রী সন্তানসহ লন্ডনে সেটেল। তার মালিকানাধীন বিশাল অট্টালিকা রয়েছে মৌলভীবাজারে। তার রয়েছে প্রায় ৫ শতাধিক ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান ও পিকআপ। এসব যানবাহন তিনি ভাড়ায় ব্যবহার করতেন গার্মেন্টস পণ্য শিপমেন্টের কাজে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে গার্মেন্টস পণ্য পরিবহনে যুক্ত তার ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান এবং এজেন্সি, চালক ও শ্রমিকদের সহায়তায় সংঘবদ্ধ চোরাই চক্র নিয়ন্ত্রণ করতেন।
চোরাই গার্মেন্টস পণ্য কোথায় বিক্রি ও কারা ক্রয় করছে জানতে চাইলে হাফিজ আক্তার বলেন, আমরা প্রাথমিক তদন্তে বেশ কয়েকজনের নাম জেনেছি। তদন্তের স্বার্থে বলছি না। দেশের ছোট ছোট কিছু বাইং হাউসে যাচ্ছে সেসব চোরাই গার্মেন্টস পণ্য। আর ওই সব ছোট বাইং হাউসগুলো বিদেশি ছোট ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করে দেয়। এ ছাড়া, দেশের বিভিন্ন মার্কেটেও যাচ্ছে সেসব চোরাই গার্মেন্টস পণ্য।
এত মামলা নিয়ে কীভাবে সাঈদ গার্মেন্টস পণ্য চোরাই চক্র নিয়ন্ত্রণ করে আসছিলেন জানতে চাইলে গোয়েন্দা প্রধান বলেন, তিনি বেশ কয়েকবার গ্রেপ্তার হয়েছেন। সর্বশেষ একটি মামলায় তিনি আট মাস কারাভোগ করেন। তবে বেরিয়েই ফের জড়িয়ে পড়েন গার্মেন্টস পণ্য চোরাই কারবারে।