সংগঠনের নামে কেন সাংবাদিক নেতাদের ব্যাংক হিসাব চাওয়া হলো এবং সে খবর পত্রিকায় কীভাবে গেল তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
সচিবালয়ে নিজ কার্যালয়ে সোমবার সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘সেটি কেন পত্রিকায় আসল সেটি হচ্ছে প্রশ্ন।’
তিনি বলেন, ‘সরকার যে কারও ব্যাংক হিসাব তলব করতে পারে। এমপিদের ব্যাংক হিসাব তলব হয়, সরকারি কর্মকর্তাদেরও হিসাব তলব হয়, ব্যবসায়ী নেতাদেরও তলব হয়। সরকার যে কারও ব্যাংক হিসাব চাইতেই পারে, চাওয়াটা অবশ্যই দোষের নয়।
‘কিন্তু এই চাওয়াটা কেন, সাংবাদিক নেতৃবৃন্দের ব্যাংক হিসাব চেয়েছে সেটি কেন পত্রিকায় আসল সেটি হচ্ছে প্রশ্ন। এটি তো কাগজে আসার কথা না।’
তিনি বলেন, ‘আরেকটি প্রশ্ন হচ্ছে সাংবাদিক নেতৃবৃন্দের পক্ষ থেকে যেটি উপস্থাপন করা হয়েছে, সংগঠনের নাম দিয়ে কেন ব্যাংক হিসাব চাওয়া হলো সে প্রশ্ন তোলা হয়েছে।’
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমি মনে করি স্বচ্ছ থাকলে কারও উদ্বিগ্ন হওয়ার সুযোগ নেই। যখন ব্যাংক হিসাব চাওয়ার পরে এটি প্রকাশ হবে, তাদের স্বচ্ছতা বেরিয়ে আসবে তখন তো বরং তারা যে স্বচ্ছ এটিও প্রকাশ হবে। এতে উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ নেই।’
‘তবে এটি কেন সংগঠনের নাম দিয়ে চাওয়া হলো, আবার কেন কাগজে আসল সেটি নিয়ে প্রশ্ন আছে।’
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন ও সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খানসহ ১১ সাংবাদিক নেতার ব্যাংক হিসাব তলব করেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট- বিএফআইইউ।
অন্য যাদের হিসাব দিতে বলা হয়েছে তারা হলেন, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন, বিএফইউজের সভাপতি মোল্লা জালাল, ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব আবদুল মজিদ, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন, বিএফইউজের সভাপতি এম আবদুল্লাহ, মহাসচিব নুরুল আমিন রোকন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন ডিইউজের সভাপতি কাদের গনি চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন ডিইউজের সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান তপু এবং ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি মুরসালিন নোমানী ও সাধারণ সম্পাদক মসিউর রহমান খান।
আগামী মঙ্গলবারের মধ্যে হিসাব খোলার ফরম, কেওয়াইসি, ট্রানজেকশন প্রোফাইল, শুরু থেকে এখন পর্যন্ত লেনদেনের বিবরণী উল্লেখ করে এই প্রতিবেদন চাওয়া হয়েছে।
একে সাংবাদিকদের মধ্যে ভয়ভীতি ছড়ানোর কৌশল হতে পারে মন্তব্য করে এই ১১ নেতা সংবাদ সম্মেলনও করেছেন।
‘সংবিধান অনুযায়ীই নির্বাচন’
বিএনপি নেতারা দাবি জানালেও বর্তমান সরকারের অধিনেই আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে জোর গলায় দাবি করেছেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।
তিনি বলেন, ‘বিএনপি নেতারা প্রায় ১২ বছর ধরেই এই আহ্বান জানিয়ে আসছেন, কিন্তু জনগণতো তাদের এই আহ্বানে সাড়া দেয়নি। সাড়া দেয়ার কোনো কারণও নেই। বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ীই আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সংবিধান অনুযায়ীই বর্তমান সরকারই নির্বাচনকালীন সরকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে। নির্বাচন কখনো সরকারের অধীনে হয় না, হয় নির্বাচন কমিশনের অধীনে।
‘যখন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয় তখন সব সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী যারা নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট তাদের চাকরি নির্বাচন কমিশনের হাতে ন্যস্ত হয়। সরকার তখন একজন পুলিশ কনস্টেবলও বদলি করতে পারে না। কার্যত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় নির্বাচন কমিশনের অধীনে।’ তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন এরই মধ্যে প্রচুর নির্বাচন সফলভাবে অনুষ্ঠান করেছে। আমি এ জন্য বিএনপিকে বলব, ফাঁকা বুলি আউড়িয়ে কোনো লাভ হবে না। সংবিধান অনুযায়ীই আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।’
খালেদা জিয়ার সাজার মেয়াদ স্থগিতাদেশ যে কোন সময় বাতিল হতে পারে বলেও বিএনপি নেতাদের স্মরণ করিয়ে দেন তথ্যমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘সরকারকে বহু আগেই ধন্যবাদ দেয়া উচিত ছিল। কারণ বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া কিন্তু জামিনে মুক্তি পাননি। তাকে প্রধানমন্ত্রী আইনে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে সাজা স্থগিত করেছেন, এ জন্যই তিনি কারাগারের বাহিরে আছেন। বিএনপির এ জন্য শুকরিয়া করা উচিত। ধন্যবাদ দেয়া উচিত।’
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার যেকোনো সময় চাইলে ৬ মাসের সাজা স্থগিতের যে আদেশ তা বাতিল করতে পারে। সে আদেশ যদি আগামীকাল বাতিল হয়, তাহলে আগামীকালই তাকে কারাগারে ফেরত যেতে হবে। এটিও বিএনপির মনে রাখা প্রয়োজন।’
‘ডোমেইন বরাদ্দে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ’
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন না থাকার পরেও আইপি টিভি কীভাবে ডোমেইন বরাদ্দ পায় তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তথ্যমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘আইপি টিভির নিবন্ধন দেয়ার দায়িত্ব হচ্ছে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের। কিন্তু ডোমেইন বরাদ্দ দেয় বিটিআরসি। ডোমেইন বরাদ্দ কীভাবে পেল সেটিই হচ্ছে প্রশ্ন। আমি মনে করি, কাউকে ডোমেইন বরাদ্দ দেয়ার আগে এখন থেকে অত্যন্ত সতর্ক হতে হবে।’
হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আমরা একটি ত্রিপক্ষীয় বৈঠক করব আগামী ২২ সেপ্টেম্বর। তথ্য, ডাক ও টেলিযোগাযোগ এবং আইসিটি মন্ত্রণালয় এতে থাকবে। এখানেই আমরা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেব যে ডোমেইন বরাদ্দের দেয়ার ক্ষেত্রে এখন অনেক বেশি সতর্ক হতে হবে। আমরা তদন্ত করছি এবং আদালতেরও নির্দেশনা আছে। আমরা অনলাইন ও আইপি টিভির বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া শুরু করেছি, এটি অব্যাহত থাকবে।’