দেশের সব পৌরসভায় প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) নিয়োগের বিষয়ে সায় দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সোমবার সকালে সচিবালয়ে বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরামের (বিএসআরএফ) সংলাপে অংশ নিয়ে এ কথা জানান স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম।
মন্ত্রী এ সময় বলেন, ‘পৌরসভাতে প্রধান নির্বাহী দেয়ার জন্য আমি শক্ত করে… (বলেছিলাম)। অনেকে এটা মানতে চায় না, কিন্তু আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে বলেছি, তিনি রাজি হয়েছেন। প্রধান নির্বাহী দেয়া হলে, হবে কি.. মিনিস্ট্রির (মন্ত্রণালয়) সঙ্গে পৌরসভার সরাসরি একটি কানেকটিভিটি থাকবে।’
‘এতে তারা কী করছে, মানুষকে সেবাটা দিচ্ছে কি না সেটা আমরা বুঝতে পারব। এতে মানুষ লাভবান হবে। তারা যখন লাভবান হবে তখন তারা ট্যাক্সও দিতে চাইবে। যদি কারও লাভ হয় তাহলে সে কেন দেবে না? অবশ্যই দেবে। এ জায়গায় আমরা কাজ করার চেষ্টা করছি।’
একই সঙ্গে জেলা পরিষদ ও পৌরসভাকে জবাবদিহির আওতায় আনতে সেখানে নিরীক্ষক নিয়োগ দেয়া হবে বলেও জানান স্থানীয় সরকারমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমরা সেখানে অডিটর নিয়োগ করছি। এটি নিয়োগ করা মানে কাউকে অসম্মান করা না। এতে কাজে স্বচ্ছতা আসবে।
সোমবার সকালে সচিবালয়ে বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরামের সংলাপে অংশ নেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম। ছবি: নিউজবাংলা
‘এটা হলে তাহলে জবাবদিহি বাড়বে। প্রতিষ্ঠানগুলো প্রেসটিজিয়াস হবে, আয়বর্ধক হবে, স্বনির্ভর হবে। স্বনির্ভরতা ছাড়া কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান নিজেকে প্রেসটিজিয়াস বলতে পারে না।’
‘ইউপি মেম্বার-চেয়ারম্যানরা গালি ডিজার্ভ করে’
কাঙ্ক্ষিত সেবা না পেয়ে ইউপি সদস্য ও চেয়ারম্যানদের যে গালিগালাজ শুনতে হয় তার যৌক্তিকতা রয়েছে বলে মন্তব্য করেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম।
মন্ত্রী বলেন, ‘ইউনিয়নের মেম্বার বলে সারা দিন আমরা গালি দিই। সম্ভবত অনেক কারণও আছে। মেম্বার, চেয়ারম্যান, উপজেলা পরিষদকে আমরা গালি দিই। আমি মনে করি তারা (গালি) পাওয়ার জন্য ডিজার্বও করে। কী কারণে করে?
‘তারা সঠিকভাবে সেবা দেয় না এবং এ প্রতিষ্ঠানগুলো যে দুর্নীতিমুক্ত এটা বলা যাচ্ছে না। এ প্রতিষ্ঠানগুলো মানুষের যেসব দায়িত্ব পালন করার কথা সেগুলো ঠিকভাবে পালন করে না। এটা মোটামুটি স্টাবলিস্ট।’
অবশ্য এই প্রতিষ্ঠানগুলোতে সেবার অপ্রাপ্তির জন্য দায় নিজের কাঁধেই নিচ্ছেন তিনি। স্থানীয় সরকারমন্ত্রী বলেন, ‘এই ব্যর্থতা তাদের নয়, ব্যর্থতা আমার। আই হ্যাভ টু ডায়াগনোসিস ফেইলরটা কার। যে মানুষ জবাবদিহির আওতায় থাকবে না সে নষ্ট হবে। এ জন্য স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে।’
‘আমরা জনপ্রতিনিধিদের ঠিক করতে পারিনি, জনপ্রতিনিধিদের ঠিক করার দায়িত্ব আমাদের। মেম্বারের পজিশন যে মর্যাদাপূর্ণ সেটা বোঝানোর চেষ্টা করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘সবাই মিলেমিশে কাজ না করলে লক্ষ্যে পৌঁছানো যাবে না। স্থানীয় সরকারব্যবস্থা ও স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানকে যত বেশি, যত দ্রুত শক্তিশালী করা যাবে, দেশ তত দ্রুত শক্তিশালী হবে। মানুষগুলোকে কাজে লাগাতে হবে। ঢাকা থেকে সচিব, মন্ত্রী গিয়ে গ্রামের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারবে না।
‘ওখানে জনপ্রতিনিধিদের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। স্থানীয় সরকারের প্রতিষ্ঠানগুলোকে সত্যিকার অর্থে খুব ইফেকটিভ করতে পারলে কেউ আর পেছনে থাকবে না।’
সরকারের নানা উদ্যোগের ফলে বেশিরভাগ পৌরসভায় কর্মীদের বকেয়া বেতন পরিশোধ করতে পেরেছে বলে জানান স্থানীয় সরকার মন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমি দায়িত্ব নেয়ার সময় ৪৮টি পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়মিত বেতন হচ্ছিলো না। আমাদের নানা উদ্যোগের ফলে এখন ৮০ শতাংশের বেশি পৌরসভায় বেতন ক্লিয়ার আছে।
‘স্থানীয় সরকারের আইনগুলোতে ছোটখাট ক্রুটি-বিচ্যুতি আছে। সেগুলো পরিবর্তনে কাজ করা হচ্ছে। স্থানীয় সরকারের কোনো প্রতিষ্ঠানে জনপ্রতিনিধির মেয়াদ উত্তীর্ণ হলে সেখানে প্রশাসক নিয়োগ করতে কোথায় কোথায় ক্রুটিবিচ্যুতি আছে সেগুলো পরিবর্তন করা হচ্ছে।’
স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল বলেন, ‘সঠিকভাবে সেবা দিতে হলে সড়কের আইডি নাম্বার থাকা দরকার। পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনের সড়কে আইডি নম্বর নেই। এ বিষয়ে অল্প সময়ের মধ্যে পরিপত্র জারি করব। ’
‘একটা রাস্তা দুইবার দেখিয়ে টাকা নিচ্ছে কী না, সেটাও সহজে ধরা যাবে। আইডি নম্বর করা হচ্ছে কোথাও অনিয়ম পাওয়া গেলে দ্রুত যাতে ব্যবস্থা নেওয়া যায়। পৌরসভায় অটোমেশন করা নেই, এ জন্য কমিটি করে দেয়া হয়েছে।’