অস্ত্র আইনের মামলায় দুটি ধারায় ১৫ বছর করে ৩০ বছরের কারাদণ্ড পাওয়া স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আলোচিত গাড়িচালক আব্দুল মালেকের দাবি তিনি নির্দোষ, তাকে ফাঁসানো হয়েছে।
অবৈধ অস্ত্র, জাল নোট ব্যবসা ও চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে গত বছর ২০ সেপ্টেম্বর ভোরে রাজধানীর তুরাগ এলাকা থেকে গাড়িচালক মালেককে গ্রেপ্তার করে র্যাবের একটি দল।
এ সময় তার কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, পাঁচ রাউন্ড গুলি, দেড় লাখ বাংলাদেশি জাল নোট, একটি ল্যাপটপ ও মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।
এ ঘটনায় র্যাব-১-এর পরিদর্শক (শহর ও যান) আলমগীর হোসেন বাদী হয়ে তুরাগ থানায় অস্ত্র ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে দুটি মামলা দায়ের করেন।
এর মধ্যে সোমবার অস্ত্র আইনের মামলার রায় ঘোষণা করা হয়েছে।
রায়ে ঢাকার বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-৪-এর বিচারক রবিউল আলম অস্ত্র আইনের দুটি ধারার মধ্যে অস্ত্র রাখার জন্য মালেককে ১৫ বছর এবং গুলি রাখার জন্য ১৫ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন। তবে দুটি সাজার মেয়াদ একসঙ্গে শেষ হবে বলে রায়ে উল্লেখ করেন বিচারক।
রায় শুনে আদালতে মালেক বলেন, ‘আমাকে মিথ্যাভাবে অস্ত্র ও গুলি দিয়ে ধরা হয়েছে। আমি নির্দোষ, আমাকে ফাঁসানো হয়েছে। র্যাব যখন বাসায় আসে তখন আমার বাসায় কিছুই পায় নাই। পরে এসব অস্ত্র-গুলি কোথা থেকে এলো?’
মালেকের সাজা শুনে আদালত প্রাঙ্গণে সঙ্গা হারান তার মা আয়েশা বেগম। পরে তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার পুতেরে ভিক্ষা দেন। সে তো চোর না, ডাকাত না, সন্ত্রাসীও না। মিথ্যা মামলায় তাকে ফাঁসানো হইছে।
‘যে একাম করাইয়ে আমার বুক খালি করছে, আল্লাহ তার বুকও খালি করবে। আল্লাহর কাছে বিচার চাই। আল্লাহ নিশ্চয়ই এর বিচার করবেন।’
রায় শুনে আদালতের সামনে সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলেন তার স্ত্রী।
আর মালেকের বোন ফাতেমা বেগম বলেন, ‘আমার ভাইয়ের যদি এত টাকা থাকে তাহলে আমাদের অবস্থা কী এরকম হয়? আমি বিধবা মহিলা। আমার ৫ ছেলে। আমার ভাইয়ের যদি এত টাকা থাকতো তাহলে তো আমাকে বা আমার ছেলেদের চাকুরি দিয়ে দিতে পারত। টাকার জন্য মা ওষুধ খেতে পারে না।
‘আমার ভাই দুর্নীতি করেনি। তাকে ফাঁসায় দিছে। আল্লাহর ওপর বিচার ছেড়ে দিলাম। আমরা তো রাস্তায় রাস্তায় কানতেছি। যে আমার ভাইকে ফাঁসায়ছে আল্লাহ যেন তাদের সেই সুযোগও না দেন।’
মালেকের ছেলে চিৎকার করে বলেন, ‘আমার বাপের এত টাকা, কোথায় গেল এসব টাকা? ১০০-২০০ কোটি টাকা আমার বাপের, কোথায় গেল?
মালেক ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন বলে মনে করেন তার আইনজীবী শাহীনুর ইসলাম অনি।
নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা এই রায়ের মধ্যে দিয়ে ন্যায় থেকে বঞ্চিত হয়েছি। আসামি মালেকের কাছ থেকে অস্ত্র-গুলি কিছুই উদ্ধার ছিল না। এ রায়ের বিরুদ্ধে আমরা উচ্চ আদালতে যাব। আসামি কোনোভাবেই ন্যায়বিচার পাননি’
তার দাবি, এই মামলার অভিযোগপত্রের অন্তর্ভুক্ত ১৩ জন সাক্ষীর সবাই আদালতে সাক্ষ্য দিলেও সে সাক্ষ্য ১৩ রকমের হয়েছে। কোনো সাক্ষী গুছিয়ে কিছু বলতে পারেননি। জেরাতে সবাই বিতর্কিত হয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘এসব কারণে আমাদের জন্য খালাস পাওয়া সহজ ছিল, কিন্তু আদালত তাকে সর্বোচ্চ কারাদণ্ড দিয়েছে। এই মামলায় সাজা হওয়ার মতো কোনো উপাদান ছিল না। এরপরও আসামি ন্যায় থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।’
মালেকের আরও বেশি সাজা হওয়া উচিত ছিল বলে মন্তব্য করেছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী। সংশ্লিষ্ট ট্রাইব্যুনালের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন হাওলাদার বলেন, ‘আসামির বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ প্রমাণ করতে আমরা রাষ্ট্রপক্ষ সক্ষম হয়েছি। সর্বোচ্চ সাজা প্রত্যাশা করেছিলাম।’
অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের দায়ে মালেকের বিরুদ্ধে দুদকেরও একটি মামলা রয়েছে বলে জানান তার আইনজীবী শাহীনুর ইসলাম অনি।