বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ভালো রাস্তা না থাকায় ভেঙে যাচ্ছে বিয়ে 

  •    
  • ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ১০:২৫

রৌমারীর বাসিন্দা মোজাম্মেল হক বলেন, ‘যোগাযোগব্যবস্থা না থাকার কারণে আমাদের এলাকায় অনেকের বিয়েযোগ্য মেয়ের বিয়ে ভেঙে যাচ্ছে। ছেলেপক্ষ মেয়ে পছন্দ করলেও রাস্তার দুর্দশা দেখে আর সম্বন্ধ করে না। আমরা চাই সরকার প্রত্যন্ত এলাকার রাস্তাঘাট ঠিক করে দেক।’

কুড়িগ্রামের প্রত্যন্ত উপজেলা রৌমারীতে যোগাযোগব্যবস্থার অবস্থা বেহাল। রাস্তা, সেতু, কালভার্ট না থাকায় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে উত্তরের সীমান্তবর্তী এই উপজেলার মানুষকে।

সেতু না থাকায় বছরের পর বছর বাঁশ ও কাঠের সাঁকো দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হতে হচ্ছে স্থানীয় লোকজনকে। উপজেলা শহরের সঙ্গে সড়কপথে যোগাযোগব্যবস্থা না থাকায় চিকিৎসাসেবা থেকেও বঞ্চিত হতে হচ্ছে। প্রায় সময় প্রসূতি ও অসুস্থ রোগীদের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে বাড়িতেই কিংবা রাস্তায়।

সড়ক না থাকায় চলে না গণপরিবহন। এ কারণে চরম ভোগান্তি নিয়েই এখানকার মানুষের বসবাস। বিদ্যালয়ে যেতে কষ্টের শিকার হতে হয় শিক্ষার্থীদেরও। যানবাহন চলাচল না করায় ধান, চাল, পাট, ভুট্টাসহ শাক-সবজির ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন কৃষক। এতে অর্থনৈতিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে উত্তরের সবশেষ এই উপজেলার মানুষ।

শুধু যোগাযোগব্যবস্থার এই অবস্থার কারণে অন্য এলাকার মানুষ একান্তই বাধ্য না হলে যেতে চান না রৌমারীতে। এমনকি এখানকার মেয়েদের বিয়ে না হওয়ার জন্যও দায়ী করা হচ্ছে এখানকার যোগাযোগব্যবস্থাকে।

কুড়িগ্রাম সদরের সঙ্গে ব্রহ্মপুত্র নদে বিচ্ছিন্ন রৌমারী উপজেলা। এখানে প্রবাহিত রয়েছে ব্রহ্মপুত্র, জিঞ্জিরাম, হলহলিয়া, কালো, ধরনী, সোনাভরি ও জালছিড়া নদী। রয়েছে অসংখ্য জলাশয়, খাল-বিল। এসব খাল-বিলের ওপর সেতু নেই। বাঁশ ও কাঠের সাঁকোতেই তাদের ভরসা।

উপজেলা প্রশাসনের তথ্য মতে, উপজেলায় ছোট-বড় মিলিয়ে কাঠ ও বাঁশের সাঁকো রয়েছে ৭৬টি। স্বাধীনতার পর থেকে দেশের অন্যান্য এলাকায় যোগাযোগব্যবস্থার ব্যাপক পরিবর্তন ঘটলেও উন্নয়ন ঘটেনি রৌমারী উপজেলার। ফলে দুর্ভোগ যেন নিত্যদিনের সঙ্গী হয়ে দাঁড়িয়েছে এই জনপদের মানুষের কাছে।

সরেজমিনে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, উপজেলার যাদুর চর ইউনিয়নের কর্তিমারী জিসি টু বড়াইবাড়ি বিওপি সড়কের কাশিয়াবাড়িয়া কুড়ায় একটি সেতু না থাকায় ১০ গ্রামের মানুষসহ তিনটি হাটবাজারের ব্যবসায়ীরা চরম দুর্ভোগে রয়েছেন। পারাপারের একমাত্র উপায় নৌকা। এতে পণ্য আনা-নেয়ায় কৃষকদের খরচ বেশি পড়ছে। ফলে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হতে পারছেন না প্রত্যন্ত অঞ্চলের কৃষকরা। নারী, পুরুষ, শিশুসহ সব বয়সের মানুষকে চলাচল করতে হয় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে।

ভাওয়াল গ্রামের প্রবীণ ওবায়দুর রহমান বলেন, ‘দেশ স্বাধীনের ৫০ বছর পার হইল, কিন্তু হামরা একটা সেতু পাইলং না। অন্য জায়গায় উন্নয়ন হইলেও হামরা এটির কোনো উন্নয়ন হয় না। আমরা যে জন্মের পর থেকে দ্যাখতাছি মানুষ এমন কষ্ট করি যাইতাছে। শুনি কাতি মাস, আগুন মাসে সেতু হবে, কিন্তু সেতু আর হয় না। আমার বয়সে এখানে সেতু দ্যাখপার পামো কি না জানি না?’

একই এলাকার বাসিন্দা মোজাম্মেল হক বলেন, ‘যোগাযোগব্যবস্থা না থাকার কারণে আমাদের এলাকায় অনেকের বিয়েযোগ্য মেয়ের বিয়ে ভেঙে যাচ্ছে। ছেলেপক্ষ মেয়ে পছন্দ করলেও রাস্তার দুর্দশা দেখে আর সম্বন্ধ করে না। আমরা চাই সরকার প্রত্যন্ত এলাকার রাস্তাঘাট ঠিক করে দেক।’

আছিরন বেগম বলেন, ‘বাবারে সেতু নাই, রাস্তা নাই, কী যে কষ্টে হামার দিন যায় ভাষায় বলা যাবে না। কিছুদিন আগেও ডেলিভারি করার জন্য একটি মহিলাকে হাসপাতাল নেবার পথে মারা গেছে। শুধু যোগাযোগব্যবস্থা না থাকায় সঠিক চিকিৎসা নিতেও পারছে না এই এলাকার মানুষ।’

দাঁতভাঙ্গা ইউনিয়নের হরিণধরা গ্রামের বাসিন্দা এরশাদ আলী বলেন, ‘দাঁতভাঙ্গা বাজারের সাথে কাউয়ার চর, খেতার চর, ধর্মপুর, ছাটখড়িবাড়ি গ্রামের মানুষের চলাচলের রাস্তা এটি। গাড়ি-ঘোড়া চলবার পায় না। চিকন বাঁশের উপর দিয়ে মাল নিয়ে যাওয়া-আসা করা নাগে। মানুষজন পিছলি পড়ে। হাত-পা চামড়া ছিলে যায়, পানিতে পড়ে পণ্য নষ্ট হয়ে যায়।

‘এই রাস্তা একে একে দুইবার বলে পাস হয়। হওয়ার পরে (উপরে) মন্ত্রী ওডি (উড়ে) যায়, মন্ত্রী কডি এলা ঘুতা পারে, কডি এলা যায় আল্লাহ জানে হামরা গরিব-মূর্খ মানুষ বুঝি না। এই রাস্তার কাজ আর পাস হয় না।’

রৌমারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী নাজমা আকতার বলেন, ‘দীর্ঘ করোনার ছুটি কাটিয়ে সবাই যখন আনন্দ নিয়ে স্কুলে যায়। আর আমাদের একটি সেতুর অভাবে ৪ থেকে ৫ কিলোমিটার রাস্তা ঘুরে হেঁটে স্কুল যেতে হচ্ছে। এতে করে সময় নষ্ট হচ্ছে।’

রৌমারী টেকনিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ হুমায়ুন কবির বলেন, শৌলমারী কড়াকান্দা এলাকায় একটি সেতুর অভাবে প্রায় ১৫ গ্রামের মানুষ, পাঁচটি বিদ্যালয়ের প্রায় ৩ হাজার শিক্ষার্থী চরম দুর্ভোগে আছে। সেতু না থাকায় যোগাযোগব্যবস্থা একদম ভেঙে পড়েছে। প্রশাসনিক কার্যক্রমও পরিচালিত করতে পারে না উপজেলা প্রশাসন। এই দুর্ভোগ সীমাহীন হয়ে পড়েছে মানুষের জন্য।

রৌমারী এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী যুবায়েত হোসেন বলেন, ‘বন্যাপ্রবণ এলাকা হওয়ায় এ এলাকায় ৩৭টি ছোট-বড় সেতুর প্রয়োজন। এর মধ্যে রংপুর বিভাগের অধীনে ৫৭ মিটার এবং ৪২ মিটার সেতুর টেন্ডার হয়েছে। অনূর্ধ্ব ১০০ মিটার প্রকল্পের আওতায় ৯৬ মিটার একটি সেতুর টেন্ডারও হয়েছে। এ ছাড়া জিওপি মেইনটেন্যান্স থেকে ছয়টি সেতুর তাড়াতাড়ি টেন্ডার হয়ে যাবে।’

রৌমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল ইমরান বলেন, ‘উপজেলাতে ৭৬টি ছোট-বড় কাঠ ও বাঁশের সাঁকো রয়েছে। যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য এলজিইডি এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনাসহ অন্যান্য বিভাগ মিলে সমন্বয় করে সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্টের জন্য পরিকল্পনা করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।’

এ বিভাগের আরো খবর