বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

গাছে আর খাটে শিকলে বাঁধা জীবন

  •    
  • ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০৯:১০

শহীদুলের পরিবার জানায়, তাকে কখনও একা ছেড়ে দিলে তিনি হারিয়ে যান। আবার অনেককে মারধরও করেন। এ কারণে বাধ্য হয়ে তাকে দীর্ঘদিন ধরে শিকলে বেঁধে রাখা হয়েছে। এখন দিনে বাড়ির পাশে একটি গাছের সঙ্গে আর রাতে ঘরের খাটের পায়ার সঙ্গে তাকে বেঁধে রাখা হয়।

দুই পায়ে লোহার চাকতি লাগানো শিকল। তাতে তিনটি বড় তালা। দিনে বাড়ির কাছে গাছে আর রাতে ঘরের চৌকিতে বাঁধা থাকে সেই শিকল। মাঝে মাঝে ছেড়ে দেয়া হয়, তবে থাকে কড়া নজরদারি।

টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার মহানন্দনপুর গ্রামের মানসিক প্রতিবন্ধী শহীদুল ইসলামের জীবনের অধিকাংশই কাটছে এভাবে। ৩২ বছরের জীবনে ১৭ বছরই শিকলবন্দি তিনি।

শহীদুলের পরিবারের সদস্যরা জানান, জন্মের কিছুদিন পরই তারা শহীদুলের মানসিক ভারসাম্যহীনতা টের পান। পরে স্থানীয় পল্লি চিকিৎসক ও কবিরাজের মাধ্যমে তার চিকিৎসা চলে, কিন্তু সুস্থ হননি। বরং ক্রমেই তার উপসর্গ বাড়তে থাকে।

তারা আরও জানান, শহীদুলকে কখনও একা ছেড়ে দিলে তিনি হারিয়ে যান। আবার অনেককে মারধরও করেন। এ কারণে বাধ্য হয়ে তাকে দীর্ঘদিন ধরে শিকলে বেঁধে রাখা হয়েছে। এখন দিনে বাড়ির পাশে একটি গাছের সঙ্গে আর রাতে ঘরের খাটের পায়ার সঙ্গে তাকে বেঁধে রাখা হয়।

মাঝে মাঝে অবশ্য কড়া নজরদারিতে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। তখন তিনি স্থানীয় বাজারে ঘোরাঘুরি করেন। কেউ কাছে গেলে কথা বলেন না, তবে কটু কথা বললে সঙ্গে সঙ্গে আক্রমণ করেন। কেউ তাকে কাছে ডাকলে বা কিছু দিতে চাইলেও তা নেন না তিনি।

শহীদুলের বৃদ্ধ মা কাজুলি বেগম জানান, তার তিন ছেলের মধ্যে শহীদুল ছোট। শহীদুলের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে যাওয়ার পথে পাঁচ বছর আগে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান তার বাবা আজিম উদ্দিন। বছরখানেক পর বড় ভাই আসাদও মারা যান। কর্মক্ষম দুই সদস্যকে হারিয়ে এরপর থেকে পরিবারটি অসহায় হয়ে পড়ে।

তিনি আরও জানান, অভাবের সংসারে তার স্বামীই ছিলেন উপার্জনের প্রধান উৎস। তার মৃত্যুর পর স্থানীয়দের সহযোগিতায় কোনো রকমে সংসার চালাচ্ছেন। টাকার অভাবে শহীদুলের চিকিৎসাও করাতে পারেননি।

শিকলে বেঁধে রাখার বিষয়ে কাজুলি বেগম বলেন, ‘সুযোগ পেলেই এদিক-সেদিক চলে যায়। এ জন্য বাধ্য হয়ে পায়ে শিকল পরিয়ে আটকে রাখি।’

বড় ভাই আব্দুল্লাহ বলেন, ‘আমার ভাইকে নিয়ে অনেক কষ্টে দিন পার করছি। যদি সরকার আমাদের সহযোগিতা করত তাহলে ভালো হতো।’

স্থানীয় ইউপি সদস্য জয়নাল আবেদিন জানান, শহীদুলকে একটি প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড করে দেয়া হয়েছে। সেখান থেকে প্রতি মাসে ৭৫০ টাকা পান তিনি। সেই টাকায়ই কোনোমতে তার খাবারের ব্যবস্থা হয়।

প্রতিবেশী ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলমগীর হোসেন জানান, শহীদুল ও তার মা একসঙ্গে থাকে। যে ভাতা দেয়া হয়, তাতে চলে না। অর্থের অভাবে তার চিকিৎসাও হয়নি। উন্নত চিকিৎসা করাতে পারলে হয়তো সে সুস্থ হয়ে উঠত।’

স্থানীয় একজন বলেন, ‘ছোট থেকেই দেখছি শহীদুল শিকলবন্দি। যদি কখনও বাইরে যায়, তাহলে মানুষকে হঠাৎ আঘাত করে। এ জন্য তাকে শিকলবন্দি করে রাখা হয়েছে।’সখীপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জুলফিকার হায়দার কামাল লেবু নিউজবাংলাকে জানান, বিষয়টি কিছুদিন আগে জেনেছেন। উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) চিত্রা শিকারী জানান, শহীদুলের শিকলবন্দি জীবনের বিষয়ে খোঁজ নিয়েছেন। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।

এ বিভাগের আরো খবর