বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

আজও তিনি বাংলা চলচ্চিত্রের নন্দিত মুখ

  •    
  • ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ১৭:৫৫

বেঁচে থাকলে আজ ৫০ পূর্ণ হতো সালমানের। একান্নতে পা দিতেন। কিন্তু ভক্তদের হৃদয়ের যে সালমান, তার তো মৃত্যু নেই। তিনি চিরসবুজ। অমর।

সিলেট নগরের দাঁড়িয়াপাড়া এলাকার একটি বাসার সামনে উঁকিঝুঁকি মারছেন এক তরুণ। বাসার মূল ফটক বন্ধ। ফটকের পাশেই দেয়ালে টানানো লেমিনেটিং করা কাগজে লেখা রয়েছে- ‘করোনার কারণে দর্শনার্থী প্রবেশ নিষেধ’।এমন লেখা দেখেও তরুণটি দাঁড়িয়ে আছেন ফটকের সামনে। ফটকে শব্দ করে বাসার ভেতরের লোকদের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছেন।বাসাটির নাম- ‘সালমান শাহ ভবন’। যে তরুণ দাঁড়িয়ে আছেন ফটকের সামনে তার নাম আবিদুর রহমান। বাড়ি সিলেটের কানাইঘাটে। একটা কাজে সিলেট শহরে এসেছিলেন। কাজ শেষ করে প্রিয় নায়কের স্মৃতি লেগে থাকা এই বাড়িটি একবার দেখতে এসেছেন। প্রবেশ নিষিদ্ধ জেনেও ভেতরে ঢোকার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।সালমান শাহ ভবনের সামনে গিয়ে রোববার দুপুরে দেখা মেলে আবিদুর রহমানের। এই দিনটি সালমান শাহর জন্মদিন।

১৯৭১ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর এই বাড়িতেই জন্ম নিয়েছিলেন বাংলা চলচ্চিত্রের চিরসবুজ নায়ক সামলান শাহ। আবিদুর বলেন, ‘সালমান শাহ আমার প্রিয় নায়ক। তার সব ছবি আমি দেখছি। এখন পর্যন্ত তার মতো কুনু নায়ক বাংলাদেশো আইছে না। পরে যারা আইছইন সবে খালি সালমানরে নকল খরছইন। কিন্তু তার মতো অইতো পারছইন না। সালমান মারা যাওয়ার কারেণই আইজ বাংলাদেশোর সিনেমার অতো বাজে অবস্থা।’কমর উদ্দিন চৌধুরী ও নীলা চৌধুরীর বড় ছেলের নাম ছিল শাহরিয়ার চৌধুরী ইমন। চলচ্চিত্রে আসার পর তার নাম হয় সালমান শাহ।১৯৯৩ সালে ধুমকেতুর মতো বাংলা চলচ্চিত্রে আবির্ভাব সালমানের। প্রথম ছবি সোহানুর রহমান সোহান পরিচালিত ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’। প্রথম ছবিই সুপার হিট। এরপর আর পেছনে তাকাতে হয়নি তাকে। এগিয়ে চলেছেন দুর্দান্ত প্রতাপে। উপহার দিয়েছেন একের পর এক দর্শকনন্দিত ছবি। মৌসুমী ও শাবনূরের সঙ্গে জুটি গড়ে হয়েছেন বাংলার রোমান্টিক নায়ক।তার আবির্ভাব যেমন ছিল আচমকা ও সবকিছুকে কাঁপিয়ে দিয়ে, তার প্রস্থানও তেমনই। অকস্মাৎ, অবিশ্বাস্য, সবকিছু তছনছ করে দিয়ে।১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর বিকেলে বিটিভির সংবাদের কল্যাণে দেশবাসী জানতে পারে, নিজের শোবার ঘর থেকেই উদ্ধার করা হয়েছে হার্টথ্রব এই নায়কের মরদেহ। মুহূর্তেই থমকে যায় চলচ্চিত্র প্রিয় সব মানুষ। থমকে দাঁড়ায় বাংলা চলচ্চিত্র।কিন্তু যে নায়ক চিরকালের, যে নায়ক চিরযৌবন আর অনন্ত প্রেমের প্রতীক, তাকে কি মৃত্যু কেড়ে নিতে পারে? মৃত্যু তো তাকে বরং অমরত্ব এনে দিয়েছে। এমন আকস্মিক আর রহস্যময় মৃত্যুও বোধহয় তার অমরত্বকে পাকাপোক্ত করেছে। ফলে শারীরিক অনুপস্থিতি সত্ত্বেও তিনি ভক্তদের হৃদয়ে গভীরভাবে বেঁচে আছেন।

মৃত্যুর ২৫ বছর পেরিয়ে গেছে, অথচ এখনও সালমান শাহ এক ক্রেজের নাম। এখনও তিনি বাংলা চলচ্চিত্রের পোস্টার বয়। আর ফ্যাশন আইকন।এখনও অনেক তরুণ, যাদের জন্ম সালমান শাহের মৃত্যুর পর তারাও এই নায়কের মতো করে মাথায় কাপড় বাঁধেন, উল্টো করে ক্যাপ পরেন, চুলে ঝুঁটি বাঁধেন আর সালমানের অনুকরণ করে কথা বলেন। সালমানের মৃত্যুরহস্য উদঘাটনের দাবিতে আজও রাস্তায় নামে অসংখ্য মানুষ।মাত্র তিন বছরের চলচ্চিত্র জীবন। অভিনয় করেছেন ২৭টি ছবিতে। কিন্তু এই স্বল্প সময়েই অভিনয় দক্ষতা দিয়ে নিজেকে চিরকালের করে নিয়েছেন সালমান। জীবদ্দশায় পেয়েছেন উত্তুঙ্গস্পর্শী জনপ্রিয়তা। হয়ে উঠেছেন বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ট্রেডমার্ক।যেমনটি বলছিলেন শাকিল আহমদ সোহাগ। রোববার দুপুরে সালমান শাহ ভবনের সামনে গিয়ে কথা হয় সোহাগের সঙ্গেও।তিনি বলেন, ‘সালমান শাহর সময়ে কলকাতার সিনেমা থেকে বাংলাদেশের সিনেমা অনেক এগিয়ে ছিল। সেখানকার শিল্পীরা আমাদের এখানে অভিনয় করতে আসতেন। এখন তারা এগিয়ে গেছে। আমরা পিছিয়ে গেছি। কারণ সালমানের মৃত্যুর পর এমন কোনো নায়ক বাংলা চলচ্চিত্রে আসেননি যার নামে দর্শকরা সিনেমা হলে ছুটে যাবেন। যিনি হয়ে উঠবেন অসংখ্য তরুণ-তরুণীর স্বপ্নের নায়ক। সালমানের পর এ রকম কোনো স্বপ্নপুরুষ পায়নি বাংলা চলচ্চিত্র। পরবর্তী সময়ে অনেকে সালমানকে অনুকরণ করতে চেষ্টা করেছেন। কিন্তু তার মতো হতে পারেননি।’যে বাড়িতে সালমান শাহ জন্মেছিলেন, জন্মদিনে নগরের দাঁড়িয়াপাড়া এলাকার এই বাড়িটিতে গিয়ে কথা হয় সালমানের মামা আলমগীর কুমকুমের সঙ্গে।তিনি বলেন, ‘জন্মদিন মৃত্যুদিন ছাড়া অন্য দিনগুলোতেও এই বাড়িতে সালমানের ভক্তরা ভিড় করেন। বাড়িতে সালমানের বিভিন্ন সময়ের ছবি, তার স্মৃতিচিহ্ন, তার ব্যবহৃত জিনিসপত্র, সম্মাননা স্মারক সাজিয়ে রাখা হয়েছে। এগুলো দেখতে দূর-দূরান্ত থেকেও অনেক ভক্ত আসেন। মানুষজনের ভিড় লেগে থাকায় করোনা সংক্রমণের কারণে এখন দর্শনার্থী প্রবেশ বন্ধ রেখেছি আমরা।’সালমানের জন্মস্থান নিয়ে অনেকে ভুল তথ্য প্রচার করছেন জানিয়ে তিনি বলেন, অনেকে প্রচার করেন সালমানের জন্ম সিলেটের জকিগঞ্জে। আসলে তা সত্য নয়। জকিগঞ্জে তাদের মূল বাড়ি। তবে সে জন্মেছে এখানে, দাঁড়িয়াপাড়ায়। মামার বাড়িতে।চলচ্চিত্র পরিচালক আলমগীর কুমকুম বলেন, মৃত্যুর ২৫ বছর পরও যেভাবে মানুষ সালমান শাহকে ভালোবাসছে, তাকে বাঁচিয়ে রেখেছে, তাতে বোঝা যায় সালমান ছিলেন তার সময় থেকে এগিয়ে থাকা একজন মানুষ। তার অভিনয়, তার স্টাইল এখনও কেউ ছাড়িয়ে যেতে পারেনি। ফলে সালমানকে আজও সমসাময়িক মনে করেন ভক্তরা। এসবই একজন নায়ককে মহানায়ক করে তোলে। সালমান ছিলেন সত্যিকারের মহানায়ক।বেঁচে থাকলে আজ ৫০ পূর্ণ হতো সালমানের। একান্নতে পা দিতেন। কিন্তু ভক্তদের হৃদয়ের যে সালমান, তার তো মৃত্যু নেই। তিনি চিরসবুজ। অমর।জন্মের পঞ্চাশ আর মৃত্যুর ২৫ পেরিয়েও ভক্তদের হৃদয়ে সালমানের ২৫ বছর বয়সী ছবিই ফ্রিজশট হয়ে আছে। পঁচিশের পর আর বয়স বাড়ছে না তার।তার নায়িকাদের বয়স বাড়ছে। তার সেই সময়ের তরুণ ভক্তরা যৌবন পেরোচ্ছে। তরুণী প্রেমিকারা মধ্যবয়সে এসে হয়তো সংসারের হিসাব মেলাতে ব্যস্ত। অথচ সালমান শাহ আটকে আছেন ২৫ বছরে। অক্ষয় যৌবন আর রোমান্টিক ইমেজ নিয়ে আজও তিনি আছেন অসংখ্য তরুণীর হৃদয়ের পুরুষ হয়ে।

এ বিভাগের আরো খবর