রোহিঙ্গাদের দায় বাংলাদেশের একার নয় মন্তব্য করে দক্ষিণ এশিয়ার দেশটিতে নিযুক্ত জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক ও ইউএনডিপির আবাসিক প্রতিনিধি মিয়া সেপ্পো বলেছেন, বিশ্বের সব রাষ্ট্রের দায়িত্ব এ সংকট থেকে উত্তরণে সহায়তা করা।
ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রোববার কূটনীতি নিয়ে কাজ করা সাংবাদিকদের সংগঠন ডিক্যাব আয়োজিত ডিক্যাব টকে তিনি এ কথা বলেন।
মিয়া সেপ্পো বলেন, আফগানিস্তান ইস্যুর জন্য রোহিঙ্গা সংকটের বিষয়টি কিছুটা হলেও চাপা পড়ে গেছে।
তিনি বলেন, ‘বিশ্বব্যাংক শর্তসাপেক্ষে রোহিঙ্গা ইস্যুতে সহায়তা দেবে—এ বিষয়টি নিয়ে কিছুটা ভুল-বোঝাবুঝি হয়েছে। দুটি দেশ মিয়ানমার ও আফগানিস্তান এবার জাতিসংঘ সম্মেলনে যোগ দিচ্ছে না। তাই তাদের অবস্থা জানা সম্ভব হচ্ছে না।’
রোহিঙ্গা সংকট একই সঙ্গে মানবিক ও রাজনৈতিক সমস্যা বলে মনে করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী মিয়া সেপ্পো।
তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গা সংকট একটি জটিল প্রক্রিয়া। এটি কেবল মানবিক সংকট নয়, রাজনৈতিকও। এ সংকট সমাধানে নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যরা রাজনৈতিক মতৈক্যে আসতে পারছে না, যার কারণে এটার রাজনৈতিক সমাধান হচ্ছে না।’
মিয়া সেপ্পো বলেন, ‘দীর্ঘমেয়াদি যেকোনো বিষয়ে মনোযোগ রাখা কষ্টকর। দীর্ঘমেয়াদি যেকোনো সমস্যায় অনেক চ্যালেঞ্জ বেড়ে যায়। নানা ধরনের সমস্যার সমাধান করতে হয়। যেমন: কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের পেছনে খরচ বাড়ছে। সব দিকে সঠিকভাবে মনোযোগ দেয়া যাচ্ছে না।’
রোহিঙ্গা ইস্যুটি যেন কেউ ভুলে না যায়, সেদিকে সবাইকে নজর রাখার আহ্বান জানান মিয়া সেপ্পো।
তিনি বলেন, ‘শুধু বাংলাদেশ নয়, রোহিঙ্গা ইস্যু যেন কেউ ভুলে না যায়, সেদিকে সবাইকে নজর রাখতে হবে। রোহিঙ্গা সংকট উত্তরণে সবাইকে সহযোগিতা করতে হবে। বাংলাদেশ তাদের পররাষ্ট্রনীতি অনুযায়ী সামনে এগোচ্ছে। জাতিসংঘ, দাতাসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে বলব, এটাতে যেন ফোকাস রাখে।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার ভাসানচরে স্থানান্তরিত রোহিঙ্গাদের মানবিক কার্যক্রমে জাতিসংঘের যুক্ত হওয়া প্রসঙ্গে সংস্থাটির আবাসিক সমন্বয়কারী জানান, ভাসানচরে মানবিক কার্যক্রমে জাতিসংঘের যুক্ত হওয়ার বিষয়ে সমঝোতা স্মারক চূড়ান্ত। খুব দ্রুতই তা সই হয়ে যেতে পারে।
রোহিঙ্গাদের স্থায়ীভাবে বাংলাদেশে রেখে দেয়ার বিষয়ে বিশ্বব্যাংক যে প্রস্তাব দিয়েছে, সেটা নিয়ে ভুল-বোঝাবুঝি হয়েছে জানিয়ে মিয়া সেপ্পো বলেন, ‘জাতিসংঘ বিশ্বব্যাংকের শরণার্থী নীতি সমর্থন করে। যদিও বিষয়টি নিয়ে অনেক দেশের নীতির সঙ্গে মতপার্থক্য থাকবে। বিশ্বব্যাংক শর্তসাপেক্ষে রোহিঙ্গা ইস্যুতে সহায়তা দেবে—এ বিষয়টি নিয়ে কিছুটা ভুল-বোঝাবুঝি হয়েছে।’
মিয়ানমারে জাতিসংঘের অবস্থান জানতে চাইলে আবাসিক সমন্বয়কারী জানান, জাতিসংঘ মিয়ানমারে বিশেষ দূত নিয়োগ করেছে। জাতিসংঘ সেখানে কাজ করছে। আসিয়ানও মিয়ানমারে রোহিঙ্গা ইস্যুতে কাজ করছে।
বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রচর্চা সংকুচিত হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন মিয়া সেপ্পো।
স্কুল খোলাকে স্বাগত জানিয়ে মিয়া সেপ্পো বলেন, ‘আমাদের স্কুল খোলার সঙ্গে সঙ্গে স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা দরকার।’
তিনি জানান, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পর্যালোচনা ও অপব্যবহার বন্ধ করতে আইন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছে জাতিসংঘ।
এক প্রশ্নের জবাবে মিয়া সেপ্পো বলেন, নির্বাচন-প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশ চাইলে সহযোগিতা করবে জাতিসংঘ।
অনুষ্ঠানে ডিক্যাব সভাপতি পান্থ রহমান ও সাধারণ সম্পাদক এ কে এম মঈনুদ্দিন বক্তব্য দেন।