রাজশাহীর এক ব্যক্তি চলতি বছরের জানুয়ারিতে থানায় অভিযোগ করেন, তার ছয় লাখ টাকা ছিনতাই হয়েছে। মামলাও করেন তিনি। ঘটনার তদন্তে নামে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) সাইবার ক্রাইম ইউনিট। তদন্তে বেরিয়ে আসে, বড় ভাইয়ের জমানো টাকা তুলে খরচ করে ফেলার ঘটনা ঢাকতেই ছিনতাইয়ের কাহিনী সাজান অভিযোগকারী।
যে ব্যক্তি এই নাটক সাজিয়েছিলেন তার নাম নূরে হাবিব। বাড়ি রাজশাহী নগরীর ভদ্রা জামালপুর এলাকায়। নূরদের একটি পারিবারিক কালার ল্যাব রয়েছে। সেখানে তিনি মাঝেমধ্যে বসেন।
নগরীর বোয়ালিয়া থানায় নূর অভিযোগ করেন, ব্যাংক থেকে ছয় লাখ টাকা তুলে নিয়ে যাওয়ার সময় ছিনতাই হয়েছে। থানা থেকে কিছু দূরেই মোটরসাইকেলে আসা দুই যুবক তার টাকার ব্যাগ ছিনতাই করে। ঘটনার সময় তিনি শপিং ব্যাগে টাকা নিয়ে মোটরসাইকেলে চড়ে যাচ্ছিলেন বলে দাবি করেন।
মামলা পর পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। নূরে হাবিব এজাহারে বলেন, ঘটনার দিন তিনি প্রিমিয়ার ব্যাংকের রাজশাহী নগরীর আলুপট্টি শাখা থেকে টাকা তুলে নিয়ে যাচ্ছিলেন। পুলিশ সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে নূরকে পায়নি। এমনকি ব্যাংক থেকে কোনো টাকা তোলা হয়নি বলে কর্তৃপক্ষ পুলিশকে জানায়।
ব্যাংক কর্তৃপক্ষ আরও জানায়, নূরের ব্যাংক হিসাবে আছে মাত্র ৮৩ টাকা। এতেই প্রমাণ হয় নূরের কথা সত্য নয়।
চলতি বছরের মে মাসের ঘটনা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভূয়া আইডি থেকে হঠাৎ রাজশাহীর এক তরুণীর আপত্তিকর ছবি ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশে অভিযোগ করেন ওই তরুণী।
রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) সাইবার ক্রাইম ইউনিট খুঁজে বের করে নওগাঁর মহাদেবপুরের বাসিন্দা শাফিউল ইসলামকে। ভূয়া আইডি থেকে আপত্তিকর ছবি ছড়ানোর অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তারও করা হয়।
গত এক বছরে এমন অসংখ্য ঘটনার সমাধান করেছে আরএমপির সাইবার ক্রাইম ইউনিট। এক বছর আগে চালু হয় এই ইউনিট।
চালুর পর এই ইউনিটে ফেসবুক বা বিভিন্ন অনলাইন প্লাটফর্মে হয়রানি ও বিকাশে প্রতারণাসহ বেশ কিছু অভিযোগ আসতে থকে। মোবাইল ছিনতাই বা হারিয়ে যাওয়ার অভিযোগও জমা হতে থাকে।
আরএমপির সাইবার ক্রাইম ইউনিটের তথ্যমতে, গত এক বছরে এমন ১ হাজার ৩২১টি অভিযোগ জমা হয়েছে। এর মধ্যে ১ হাজার ২৩০টি অভিযোগেরই তারা নিষ্পত্তি করতে পেরেছে।
আরএমপির কমিশনারের দায়িত্ব পেয়ে কাজে যোগ দেয়ার সাত দিন পরই এই ইউনিট গঠন করেন আবু কালাম সিদ্দিক। গত বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর একজন সহকারী পুলিশ কমিশনারের নেতৃত্বে সাইবার ক্রাইম ইউনিটে কাজ শুরু হয়।
তখন ছিলেন একজন উপপরিদর্শক (এসআই), একজন সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) ও তিনজন পুলিশ কনস্টেবল। এখন একজন সহকারী পুলিশ কমিশনারের নেতৃত্বে এই ইউনিটে কাজ করছেন ১৩ পুলিশ।
শুধু অভিযোগ তদন্তই নয়, মহানগর এলাকার কিশোর অপরাধ দমনে কিশোর গ্যাংয়ের ৫০০ জনের তথ্য নিয়ে একটি ডিজিটাল ডাটাবেজও তৈরি করেছে এই ইউনিট। এতে মহানগর এলাকার ৯টি গ্যাংয়ের সদস্যদের বিস্তারিত বিবরণ আছে।
‘হ্যালো আরএমপি’ নামের অ্যাপও পরিচালনা করে সাইবার ক্রাইম ইউনিট। যারা নানা কারণে থানায় যেতে পারেন না, তারা এই অ্যাপের মাধ্যমে অভিযোগ জানান।
সাইবার ক্রাইম ইউনিটের প্রধান সহকারী পুলিশ কমিশনার উৎপল কুমার চৌধুরী বলেন, ‘সরাসরি অপারেশনাল টিম হিসেবে মাঠে কাজ না করার কারণে অনেকেই সাইবার ক্রাইম ইউনিটের কার্যক্রম সম্পর্কে অবগত নন। পুলিশি সেবার সবখানে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। এই ইউনিট সম্পর্কে যত বেশি প্রচার হবে, তত সাধারণ মানুষ বা ভুক্তভোগীরা জানতে পারবেন। তারা প্রতিকার চাইবেন। উপকৃতও হবেন।’