বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘ছাত্রলীগের কারণে শয্যাশায়ী, তারাই ফোন ধরে না’

  •    
  • ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ১০:২০

ছাত্রলীগের শয্যাশায়ী উপ-প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক মেশকাত হোসাইনের মা পারুল বেগম বলেন, ‘নেতাগো ম্যালাবার মোবাইল করছি। তারা ফোন ধরে নাই। এরা যদি একটু সহযোগিতা করত, তাইলে এরে লইয়া আমি আর দেশে আইতাম না, ঢাকায় অর চিকিৎসা করাইতাম। ওরা যেহেতু ফোন ধরে নাই, আমি ত আর একা কুলাইতে পারমু না। তাই তারে দেশে লইয়া আইছি।’

‘অনেক আশা-ভরসা করে ছেলেডারে ঢাহা ভার্সিটিতে পড়াইতে পাডাইছি। আশা ছিল, ছেলেডা পড়া লেহা করবে, চাকরি-বাকরি ধরবে। কিন্তু পোলাডা এমন নেতাগো পাছে পড়ল, এই নেতারাই অরে শেষ কইরা দিলো।'

শয্যাশায়ী ছেলের পাশে বসে মোবাইল ফোনে নিউজবাংলাকে কথাগুলো বলছিলেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের উপ-প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক মেশকাত হোসাইনের মা পারুল বেগম।

চার দিন ধরে গুরুতর অসুস্থ ছাত্রলীগের মেশকাত হোসাইন। ছেলের অসুস্থতায় সহযোগিতার জন্য ছাত্রলীগ সভাপতিকে ফোন দিয়েও সাড়া মেলেনি। বাধ্য হয়ে ছেলেকে ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়ি মাদারীপুর নিয়ে যায় মা পারুল বেগম।

আক্ষেপ করে নিউজবাংলাকে পারুল বেগম বলেন, ‘নেতাগো ম্যালাবার মোবাইল করছি। তারা ফোন ধরে নাই। এরা যদি একটু সহযোগিতা করত, তাইলে এরে লইয়া আমি আর দেশে আইতাম না, ঢাকায় অর চিকিৎসা করাইতাম। ওরা যেহেতু ফোন ধরে নাই, আমি ত আর একা কুলাইতে পারমু না। তাই তারে দেশে লইয়া আইছি।’

পারুল বেগম আরও বলেন, ‘ঢাহা থেইকা আহনের সময় পোলার যে অবস্থা হইয়া গেছিল, মনে করছি ঐহানেই তারে থুইয়া আহা লাগবে। জাগায় জাগায় নেতাগো মোবাইল করছি। তারা ফোন ধরে নাই।’

এখন মেশকাত হোসেনের কী অবস্থা জানতে চাইলে মা পারুল বেগম বলেন, ‘স্যালাইন দিছি, গিরায় গিরায় বল-শক্তি পায় না। একছের বমি করে। কোনো কিছু খাইতে-লতেই পারে না। এহন স্যালাইন দিছি, ঘুমের ওষুধ খাওয়াইয়া ঘুম লওয়াইতেছি।’

মেশকাত কী রোগে ভুগছেন, জানতে চাইলে তার মা জানান, ডাক্তার কিছু বলছে না। তার শরীরে হারের জোড়ায় জোড়ায় প্রচণ্ড ব্যথা। কিছু খেতে পারেন না। বিছানা থেকেও উঠতে পারে না।

গুরুতর অসুস্থ অথচ নিজ দলের কেন্দ্রীয় দুই নেতা কোনো খোঁজ না নেয়ার অভিযোগ ছাত্রলীগের উপ-প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক মেশকাতের। ক্ষোভে-দুঃখে মাকে মেশকাত অনুরোধ করেন যেন তার মৃত্যুর পর ছাত্রলীগ থেকে কোনো দোয়ার আয়োজন না করা হয়, প্রেস রিলিজ না দেয়া হয়। এ ছাড়া ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক যেন তার জানাজায় না আসেন।

এ নিয়ে শনিবার সন্ধ্যায় নিজের ফেসবুক থেকে পোস্টও দেন মেশকাত। পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘জীবনটা নিভু নিভু, আল্লাহর কাছে স্বাভাবিক মৃত্যু কামনা করছিলাম। গত ১৪ তারিখে আমি খুবই অসুস্থ হয়ে পড়ি। ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে বারবার ফোন দিই কিছু একটা করার জন্য, কিন্তু তারা ফোন ধরেননি। এতে বুঝা যায়, আমরা মরলেও তাদের সমস্যা নাই।’

আক্ষেপ করে মেশকাত বলেন, ‘জীবনে যেই পার্টির জন্য এত সময় ব্যয় করলাম, সেই পার্টি আমার অসুস্থতারও খোঁজ নিতে পারে না। তারা খোঁজ নিত যদি তাদের দালালি করতাম। যাই হোক, আমার প্রতিবাদ থেমে গেলেও তৃণমূলের কোনো না কোনো কর্মী প্রতিবাদের কলম হাতে তুলে নেবে আশা রাখি।’

মেশকাতের এমন অভিযোগের প্রসঙ্গে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গত দুই মাসে আমার ফোনে মেশকাতের কোনো কলই আসেনি। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির অনেকেই অসুস্থ থাকে। সবার খোঁজখবর নিয়েছি। ওর (মেশকাত) খোঁজ নেব না কেন! খোঁজ নিতে হলে তো সে যে অসুস্থ সেটি আমার জানা লাগবে।’

ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের এমন দাবির বিষয়টি স্বীকারও করেন মেশকাত হোসাইন। তিনি বলেন, ‘সভাপতিকে ফোন দেয়া মানেই দুজনকেই ফোন দেয়া। জয় ভাইকে ফোন দিয়েও যেখানে তিনি ফোন ধরেননি, লেখক ভট্টাচার্য তো আমার ফোন ধরবেই না। কারণ এই লেখক ভট্টাচার্যই মধুর ক্যান্টিনে বসে আমাকে বলেছে, সে আমার রাজনীতি খেয়ে দেবে।’

মেশকাত বলেন, ‘প্রথম যেদিন অসুস্থ হয়েছিলাম, তখন ঢাকা মেডিক্যালে চিকিৎসা না পেয়ে জয় ভাইকে অনেকবার ফোন দিয়েছিলাম, কিন্তু তিনি ফোন ধরেননি। যে সংগঠনের জন্য এত কিছু করলাম, সে সংগঠনের সভাপতি আমার ফোন ধরে না।’

কথাগুলো বলতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন মেশকাত হোসেন।

কান্নাজড়িত কণ্ঠেই তিনি বলেন, ‘এই সংগঠনের জন্যই আমি অসুস্থ হয়েছি। না খেয়ে সারা দিন মধুর ক্যান্টিনে বসে ছিলাম। এ জন্যই আজকে আমার এই অসুস্থতা। আমি সংগঠনের ভুলত্রুটি নিয়ে লেখালেখি করি দেখেই তারা দুজন আমাকে শেষ করে দিচ্ছে। এই পার্টির জন্যই আমার পরিবার আর আমি শেষ হয়ে গেলাম।’

ফোন না ধরার বিষয়ে জানতে ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়কে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

ছাত্রলীগ সভাপতির বিরুদ্ধে ফোন না ধরার অভিযোগটি নতুন নয়। ফোন রিসিভ না করায় অনেক কেন্দ্রীয় নেতাও এই নেতার ওপর ক্ষুব্ধ।

এ বিভাগের আরো খবর