রাত তখন সাড়ে ৯টা। গত বৃহস্পতিবার এই সময়টাতে খুলনা থেকে রাজশাহীগামী ট্রেনে নিজের আসনেই বসেছিলেন ফারজানা তাসনিম। যাচ্ছিলেন বাড়ি। রাজশাহী নগরীর উপশহরেই তার বাসা।
হঠাৎ করেই ট্রেনের মাইকে একটি জরুরি ঘোষণা ভেসে এল। প্রসবব্যথা শুরু হয়েছে এক নারীর! এ অবস্থায় ট্রেনে কোনো চিকিৎসক আছেন কি না, জানতে চাইছিলেন একজন।
৪২তম বিসিএসে উত্তীর্ণ ফারজানা তাসনিম সহকারী সার্জন হিসেবে যোগদানের অপেক্ষা করছেন। তাই মাইকের ঘোষণাটি শুনে তিনি আর বসে থাকতে পারেননি। দৌড়ে গেলেন ব্যথায় কাতর সেই নারীর কাছে।
ততক্ষণে অবশ্য সেই নারী এক কন্যাসন্তান প্রসব করে ফেলেছেন। কিন্তু এ নিয়ে মহা ফ্যাসাদে পড়েছেন তার কাছে থাকা স্বজনরা। কারণ সন্তান প্রসবের পরও আরও কিছু জটিলতা থেকে যায়। এ ব্যাপারে দক্ষ মানুষেরাই তার সমাধান করতে পারেন।
ফারজানা তাসনিম দেখতে পান শিশুটির নাড়ি তখনও মায়ের গর্ভের সঙ্গে আটকে আছে। সুদক্ষ চিকিৎসকের মতোই দ্রুততার সঙ্গে সদ্যোজাত শিশুর নাড়িটি কেটে দেন তিনি। তার আকস্মিক এমন আবির্ভাবে স্বস্তি ফিরে আসে স্বজনদের মধ্যে। সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো, সন্তান প্রসব করা সেই নারীও সাহস ফিরে পান।
ট্রেনের মধ্যে সন্তান প্রসব করা সাবিনা ইয়াসমিনের বাড়ি কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলায়। সন্তান প্রসবের জন্যই তাকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজের উদ্দেশে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। তার আগেই ট্রেনের মধ্যে সন্তান প্রসব করায় মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে ছিলেন তিনি। ঝুঁকিতে ছিল তার সদ্যোজাত কন্যাসন্তানও। তবে চিকিৎসক ফারজানা তাসনিম দেবদূতের মতো হাজির হয়ে তাদের রক্ষা করেন।
ফারজানা বলেন, ‘সাধারণত বাচ্চা ভূমিষ্ঠ হওয়ার পরই মায়ের সঙ্গে যে নাড়ি থাকে সেটি কেটে ফেলতে হয়। বেশি দেরি হলে মায়ের সমস্যা না হলেও বাচ্চার সমস্যা হতে পারে। সেই সমস্যা থেকে বাচ্চা মারাও যেতে পারে।’
সন্তান প্রসবের ঘটনায় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের প্রশংসা করেন ফারজানা। তিনি বলেন, ‘তারা একটা পরিবেশ করে দিয়েছেন। বগিটা ফাঁকা করেছে। যখন যা দরকার দিয়েছেন। এমনকি ফাস্ট এইড বক্সও তারাই সরবরাহ করেছেন। শুধু তা-ই নয়, ট্রেনটি দ্রুত গতিতে চালিয়ে তারা রাজশাহীতে নিয়ে এসেছেন।’
রাজশাহী নিউ গভ. ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করার পর বগুড়ার শহীদ জিয়াাউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেন ফারজানা তাসনিম। ইন্টার্ন করেন সেখান থেকেই। এরপর রাজশাহী সিটি করপোরেশনের আরবান হেলথ কেয়ারে চাকরি করেছেন। তার বাবা সোলায়মান আলী গণপূর্ত বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত প্রকৌশলী।
সাবিনা ও তার কন্যাসন্তান এখনও রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আছে। সাবিনাকে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে। রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী জানান, মা-মেয়ে দুজনই এখন ভালো আছে।