পাবনায় সরকারি জমি দখল ও অনিয়মের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ায় এক মুক্তিযোদ্ধাকে লাঞ্ছিত ও হত্যার হুমকি দেয়ার অভিযোগ উঠেছে পাবনা-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য খন্দকার আজিজুল হক আরজুর বিরুদ্ধে।
এ ঘটনায় শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে সাবেক এমপি আরজু ও তার তিন সহযোগীর নাম উল্লেখ করে আমিনপুর থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন ওই মুক্তিযোদ্ধা।
জিডি করা ওই বীর মুক্তিযোদ্ধার নাম এ এম রফিকুল্লাহ। তিনি বেড়া উপজেলার পুরান ভারেঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান।
এ এম রফিকুল্লাহ বলেন, ‘শুক্রবার দুপুর ২টার দিকে বক্তারপুর গ্রামের আব্দুল মতিনের বাড়িতে কুলখানিতে যাই। আড়াইটার দিকে সেখানে আসেন সাবেক এমপি আজিজুল হক ও তার ১০-১২ জন অনুসারী।
‘কুলখানিতে আমার বিরুদ্ধে শ্লোগান দিতে থাকে সাবেক এমপির অনুসারীরা। অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে আমি একটি কক্ষে অবস্থান নেই। কিছুক্ষণ পর আজিজুল হক ওই ঘরে ঢুকে অবৈধ এমপি বাজার নিয়ে বক্তব্য দেয়ার প্রসঙ্গ তুলে গালিগালাজ শুরু করেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘এ সময় উপস্থিত লোকজন তাকে থামাতে আমার মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় দিলেও তিনি গালিগালাজ বন্ধ করেননি। পরে সবার সামনে আমাকে হত্যার হুমকি দিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে যান।’
মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল্লাহ আরও জানান, সাবেক এমপি আরজু নগরবাড়ী এলাকায় ৮ একর সরকারি জমি দখল করে নিজের নামে মার্কেট গড়েছেন। তার অপকর্মের বিরুদ্ধে গণমাধ্যমে বক্তব্য দেয়ায় ক্ষুব্ধ ছিলেন।
তিনি বলেন, ‘তার সন্ত্রাসী বাহিনী আছে। আমি নিরপত্তাহীনতায় ভুগছি। প্রশাসনের কাছে জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে সাধারণ ডায়েরি করেছি। পাশাপাশি বিষয়টি স্থানীয় এমপি আহমেদ ফিরোজ কবিরসহ দলীয় নেতাদের জানিয়েছি।’
মুক্তিযোদ্ধা ও পুরান ভারেঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এ এম রফিকুল্লাহ।
পাবনা-২ আসনের সংসদ সদস্য আহমেদ ফিরোজ কবির বলেন, ‘ঘটনাটি আমি শুনেছি। তিনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার সঙ্গে এমন আচরণ করতে পারেন না। এটি দুঃখজনক ও লজ্জার। সাবেক এমপি হিসেবে অসুস্থ মানসিকতার পরিচয় দিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে দলীয় ফোরামে আলোচনা হবে।’
পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের নির্বাহী সদস্য খ ম হাসান কবির আরিফ বলেন, ‘সাবেক এমপি আরজু এক সময়ে জাসদ ও গণবাহিনীর সন্ত্রাসী ছিলেন। পরে হাওয়া ভবনে বিএনপির দুর্নীতিবাজদের সঙ্গে সখ্য গড়ে ব্যবসা-বাণিজ্য করেছেন। কীভাবে তিনি আওয়ামী লীগের নেতা ও এমপি হয়েছেন তা তদন্ত হওয়া দরকার। একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে অন্য মুক্তিযোদ্ধাকে অপদস্ত করার তীব্র নিন্দা জানাই।’
মুক্তিযোদ্ধা রবিউল ইসলাম রবি বলেন, ‘সাবেক এমপি আরজু মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বে থাকা আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল পদে থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে বিষোদগার করার ধৃষ্টতা দেখিয়েছেন। আমি তার শাস্তি দাবি করছি।’
হত্যার হুমকি পাওয়ার পর থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও পুরান ভারেঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এ এম রফিকুল্লাহ।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন পাবনা-২ আসনের সাবেক এমপি খন্দকার আজিজুল হক আরজু। তিনি বলেন, ‘চেয়ারম্যান রফিকুল্লাহকে লাঞ্ছিত করার কোনো ঘটনাই ঘটেনি। কথাকাটাকাটি হয়েছে মাত্র। মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে কটূক্তি বা তাকে হত্যার হুমকির বিষয়টি সত্য নয়।’
এ বিষয়ে আমিনপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রওশন আলী বলেন, ‘অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’