বাংলাদেশ এলডিসি থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের সঠিক পথে রয়েছে দাবি করে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, করোনা পরিস্থিতিতে বাধাগ্রস্ত হওয়ায় এমন অবস্থাতেও আন্তর্জাতিক সহায়তা ও প্রণোদনা প্রয়োজন।
জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল এবং এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অর্থনৈতিক ও সামাজিক কমিশনের নির্বাহী সচিব আর্মিদা সালসিয়া আলিসজাহবান এর সঙ্গে ভার্চুয়ালি সাক্ষাৎ ও মতবিনিময়ের শুক্রবার এ মন্তব্য করেন তিনি।
অর্থমন্ত্রী ওই বৈঠকে বলেন, ‘করোনার অপ্রত্যাশিত অভিঘাতে বাংলাদেশকে বিশ্বব্যাপী সৃষ্ট প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে সৃষ্ট প্রতিবন্ধকতা কমাতে এলডিসি উত্তরণের যোগ্যতা অর্জনকারী দেশগুলোকে ট্রানজিশন ও ট্রানজিশন পরবর্তী পর্যায়ে আন্তর্জাতিক সহায়তা এবং প্রণোদনা প্যাকেজ দেয়া প্রয়োজন।’
দ্বিপক্ষীয় মতবিনিময়ে আগামী ২০-২২ অক্টোবর অনুষ্ঠিতব্য ‘সামষ্টিক অর্থনীতি, দারিদ্র্য বিমোচন এবং উন্নয়নের জন্য অর্থায়ন (এমপিএফডি)’ শীর্ষক সভায় বাংলাদেশের একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দলের সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ বিষয়েও আলোচনা কলেন মুস্তফা কামাল।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ টেকসই উন্নয়নের ২০৩০ এজেন্ডার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ পুনরুদ্ধার নিশ্চিত করার জন্য চতুর্মুখী কৌশলের নীতিবিবৃতি অনুমোদন করেছে। এখন আমরা এমন একটি উন্নয়ন পদ্ধতির অনুসরণ করছি যা আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক, সহনশীল এবং পরিবেশবান্ধব। কারণ প্রধানমন্ত্রী ইউএনএস্কেপ-এর ৭৭তম কমিশন অধিবেশনে তার ভাষণে এটি ঘোষণা করেছেন এবং নিশ্চিত করতে একে অপরকে সাহায্য করার জন্য আন্তর্জাতিক সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছেন।’
অর্থমন্ত্রী আশা করেন বলেন, ‘ইউএনএস্কেপ’ এশিয়ান হাইওয়ে, ট্রান্স-এশিয়ান রেলওয়ে এবং ড্রাই পোর্টস উদ্যোগের ক্ষেত্রে শক্তিশালী ভূমিকা রাখতে পারে। তিনি থাইল্যান্ড, ভারত এবং মায়ানমারের ত্রিপক্ষীয় হাইওয়ে প্রকল্পে যোগদানের প্রচেষ্টায় বাংলাদেশকে সহায়তা করার ক্ষেত্রে ইউএনএস্কেপকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের অনুরোধ করেন।
বাণিজ্য সুবিধা, ডিজিটাল বাণিজ্য, সীমান্তে কাগজবিহীন বাণিজ্য, পুঁজিবাজার উন্নয়ন, পিপিপি নেটওয়ার্ক, টেকসই মাল্টিমোডাল পরিবহন, জ্বালানি নীতি এবং পরিকল্পনার ক্ষেত্রে আরও প্রযুক্তিগত সহায়তা এবং ক্ষমতা বৃদ্ধির সহায়তার জন্যও ‘ইউএনএস্কেপ’ অর্থমন্ত্রী অনুরোধ করেন। পাশাপাশি, সাউথ-সাউথ সহযোগিতার উপায় হিসেবে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, নারীর ক্ষমতায়ন, সামাজিক সুরক্ষা, লিঙ্গ সমতা এবং এসএমই ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সক্ষমতাকেও কাজে লাগানোর আহ্বান জানান ‘ইউএনএস্কেপ’ এর প্রতি।
২০২০ সালের আইএমএফ-এর অক্টোবরের রিপোর্ট উদ্ধৃত করে অর্থমন্ত্রী মতবিনিময়ে বলেন, ‘বিশ্ব অর্থনীতিতে যখন গড় ৪ দশমিক ৪ শতাংশের নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি দেখা যায়, সে সময়ে অতি অল্প কয়েকটি ইতিবাচক অর্থনীতির মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম।
‘বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের জরিপ অনুযায়ী, মহামারি প্রতিকূলতার মধ্যেও বাংলাদেশ শীর্ষ পাঁচটি সহনশীল অর্থনীতির মধ্যে থাকতে পেরেছে।’
জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল এবং ইউএনএস্কেপের নির্বাহী সচিব আর্মিদা সালসিয়া আলিসজাহবান বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির প্রশংসা করেন। তিনি করোনার এই অপ্রত্যাশিত অভিঘাত মোকাবিলায় ইউএনএস্কপের সহযোগিতা নিয়ে বাংলাদেশের পাশে থাকার কথা জানান। পাশাপাশি বাংলাদেশে আরও চাহিদাভিত্তিক সক্ষমতা নির্মাণ প্রকল্প সহায়তার মাধ্যমে ইউএনএস্কপের কর্মপরিধি বাড়ানোর আশা ব্যক্ত করেন।