বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

এক একরের পুকুর একা খুঁড়েছেন তিনি!

  •    
  • ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ১৩:৪৯

যখনই সময় পেয়েছেন, তখনই পুকুর খুঁড়তে নেমেছেন ছফির উদ্দিন। প্রথমে হাত কোদাল দিয়ে খননকাজ শুরু করেছিলেন। পরবর্তী সময়ে বাঁশ ও দড়ির সঙ্গে কোদাল ব্যবহার করে মাটি খোঁড়া শুরু করেন তিনি।

একজন ব্যক্তি একা কী করতে পারেন, তার একটি অনন্য নজির হয়ে আছেন নীলফামারীর ডোমার উপজেলার প্রয়াত ছফির উদ্দিন। তিনি তিন বিঘা বা এক একর জমির ওপর একটি পুকুর খনন করেছেন একা। আর এটি করতে তার সময় লেগেছে ৭৫ বছর।

৩৫ বছর বয়সে পুকুর খোঁড়া শুরু করেছিলেন। যখন শেষ করেন, তখন তার বয়স ১১০ বছর। ১৯৯৪ সালে মৃত্যুর আগের দিনও পুকুর খোঁড়ার কাজ করছিলেন তিনি।

এলাকায় প্রায় কিংবদন্তী হয়ে যাওয়া এ ঘটনা অনুসন্ধান করতে উপজেলার হরিণচড়া ইউনিয়নের পূর্বহরিণচড়া গ্রামের বড়জুম্মা এলাকায় গিয়ে দেখা যায় এই পুকুরটি। লোকমুখে এটি ‘বড়পুকুর’ নামে পরিচিত।

এলাকার অনেকেই জানালেন, ছফির উদ্দিনকে তারা একা একা পুকুর খুঁড়তে দেখেছেন। তাদের চোখের সামনেই একটু একটু করে দীর্ঘদিন ধরে তৈরি করা হয়েছে এটি। খনন কাজটি তিনি করেছেন শখের বশে। এ কারণে কারও সহযোগিতাও তাকে নিতে দেখা যায়নি।

যখনই সময় পেয়েছেন, তখনই পুকুর খননে নেমেছেন ছফির উদ্দিন। প্রথমে হাত কোদাল দিয়ে খননকাজ শুরু করেছিলেন। পরবর্তী সময়ে বাঁশ ও দড়ির সঙ্গে কোদাল ব্যবহার করে মাটি খোঁড়া শুরু করেন তিনি।

ছফির উদ্দিন বুড়িরহাট, ডোমার, হরিণচড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে কাপড়ের ব্যবসা করতেন। দুই স্ত্রীর সংসারে তার ছেলে ছয় জন ও মেয়ে আট জন।

বড় ছেলে আব্দুল কুদ্দুস বলেন, ‘বাবা কাজ শেষে যখনই বাড়িতে আসতেন, তখনই পুকুর খননে নামতেন। তখন পুকুরটি অনেক গভীর ছিল। এখন গভীরতা কমে এসেছে। চৈত্র মাসেও পুকুর ভরা পানি থাকতে দেখেছি আমি।’

পুকুর খননের পর ছফির উদ্দিন সেখানে মাছ চাষ করতে শুরু করেন। এই মাছ বিক্রি করতেন বাজারে। খাওয়ার জন্য স্থানীয়দেরও দিতেন।

পুকুরটি যখন খনন হচ্ছিল, তখন দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ দেখতে আসত।

ছেলে আব্দুল কুদ্দুস বলেন, ‘আমি দেখেছি অনেক সময় রাতেও পুকুর খুঁড়তেন বাবা। সেটা অভ্যাসে পরিণত হয়েছিল তার। হাত-কোদালের পাশাপাশি বাঁশ ও দড়ি ব্যবহার করে সেখানে কোদাল বসিয়ে মাটি কেটে উঠাতেন।’

এ ক্ষেত্রে ওঠানো মাটি কয়েক স্থানে জমা হতো। সেখান থেকে আবার নিয়ে যেতেন অন্য জায়গায়।

আব্দুল কুদ্দুস বলেন, ‘অনেক পরিশ্রম করেছেন বাবা পুকুরটির জন্য। বলা যায়, সংসার বাদ দিয়ে একমাত্র কাজ ছিল পুকুর খনন করা।’

প্রতিবেশী আফিজ উদ্দিন বলেন, ‘আমি নিজে দেখেছি, তার পুকুর খননের দৃশ্য। এখনকার সময়ে এটি অবাস্তব মনে হলেও আসলে এটি সত্য ঘটনা। এ রকম ঘটনা আর কোথাও আছে কি না আমার জানা নেই।’

প্রতিবেশী হাসনা বেগম বলেন, ‘যখনই বাড়ি থেকে বের হতাম তখনই ছফির চাচাকে পুকুর খোঁড়ার কাজে দেখতাম। লোকটি মারা যাওয়ার আগ পর্যন্ত পুকুর খনন করেছিলেন।’

আতাউর রহমান নামের আরেক ব্যক্তি বলেন, ‘আমি মশকরা করতাম: দাদু তোর কোনো কাজ নাই? পুকুর খুঁড়ির পাবু? তখন তিনি আরও বেশি বেশি কাজ করতেন।’

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য মাহবুব আলম বলেন, ‘ছফির উদ্দিন সে সময়ে যেভাবে পুকুরটি খনন করেছিলেন, সেটি ভিডিও করে রাখা গেল ভালো হতো। কিন্তু তখনও এসব সুযোগ ছিল না।

‘আমি দেখেছি বাঁশ, দড়ি ও কোদাল দিয়ে তিনি কারখানা বানিয়েছিলেন পুকুর জুড়ে। এক কোদাল মাটি ওঠে, সেটি আবার আরেক জায়গায় গিয়ে পড়ে। সেখান থেকে আবার মাটি অন্যখানে নিয়ে রাখতেন।’

মাহবুব আলম বলেন, ‘নিদর্শন হিসেবে থাকতে পারে এই পুকুরটি। আমি সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কাছে অনুরোধ করব, যেন এটিকে টিকিয়ে রাখতে উদ্যোগ নেয়া হয়।’

উন্নয়নকর্মী রায়হান সবুক্তগীন বলেন, ‘ইচ্ছে করলে যে কোনো বড় কাজ একাও করা যায়, সেটি প্রমাণ করেছেন প্রয়াত ছফির উদ্দিন। যখন তিনি খনন করেছিলেন, অনেকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করেছিলেন ও অবাস্তব মনে করেছিলেন। তিনি বাস্তব করে দেখিয়েছেন একটি মাত্র মানুষ এক একর জায়গায় পুকুর খনন করতে পারে। সাহস শক্তিমত্তার এটি নিদর্শন হয়ে থাকবে।’

ডোমার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহিনা শবনম বলেন, ‘পুকুরটি পরিদর্শন করে সরকারি কোনো ক্ষেত্রের মধ্যে পড়লে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ ছাড়া আমরা যিনি পুকুরটি খুঁড়েছেন তাকে সম্মাননা জানাতে পারি।’

এ বিভাগের আরো খবর