করোনাভাইরাস মহামারিতে আটকে থাকা সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা দুর্গাপূজার পূর্ব নির্ধারিত সময়সূচির ঠিক আগ মূহুর্ত থেকেই নিতে যাচ্ছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি)। এতে ক্ষোভ জানিয়েছেন সনাতন ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থীরা।
এ বছরের ৭ অক্টোবর থেকে সশরীরে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সব বিভাগের বিভিন্ন বর্ষের সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা শুরু হতে যাচ্ছে। এদিকে ১২ অক্টোবর থেকে শুরু হবে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা।
পাঁচদিনের পূজার বিপরীতে ছুটি রয়েছে মাত্র দুই দিন। ষষ্ঠী পূজার দিনেও পরীক্ষা নিতে যাচ্ছে পরিসংখ্যান বিভাগ, ইংরেজি বিভাগ, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগসহ বেশ কয়েকটি বিভাগ।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা। আর সব সনাতন ধর্মের শিক্ষার্থীরা এই পূজাকে কেন্দ্র করে অনেক পরিকল্পনা করেন। সারা বছর ধরে তারা পূজায় পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোর অপেক্ষায় থাকেন।
শিক্ষার্থীদের মতে, করোনার জন্য দীর্ঘ দেড় বছর বিশ্ববিদ্যালয় যদি বন্ধ থাকতে পারে তাহলে পূজার এক সপ্তাহ পরে পরীক্ষা নিলেই হতো। এতে গ্রামে থাকা শিক্ষার্থীরা ঢাকায় মেস খুজে নিজেকে মানিয়ে নেয়ার সময় পেত। অন্যদিকে হিন্দু ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থীরা পরিবারের সঙ্গে পূজার আনন্দও ভাগাভাগি করতে পারত।
এ বিষয়ে গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী আবির রায় বলেন, ‘আমার মতে পরীক্ষার রুটিনগুলো শিক্ষার্থীবান্ধব হওয়া উচিত। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় উন্মুক্ত চিন্তার জায়গা।
ক্লাস প্রতিনিধিদের একবার জিজ্ঞেস করা উচিত যে তারা কমফোর্টেবল কিনা ওই তারিখে পরীক্ষা দিতে। যদিও এমনটা করা হয় না। তবে শুধু পূজার জন্য না, যেকোনো ধর্মের ধর্মীয় অনুষ্ঠানের মধ্যে পরীক্ষার তারিখ ঠিক করা সেই ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার সমতুল্য বলে মনে করি।’
জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের শিক্ষার্থী পিয়াল দাস বলেন, ‘এত দিন করোনার কারণে বন্ধ থাকা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ঠিক পূজার আগে পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা সনাতন ধর্মাবলম্বী হিসেবে মেনে নিতে খুব খারাপ লাগে।
‘একদিকে পরীক্ষার একটা চাপ আর অন্যদিকে পূজার আনন্দ একসঙ্গে সম্ভব নয়। পূজার পরে পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নিলে ভালো হতো।’
গণিত বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী শুভাশীষ মণ্ডল শুভ বলেন, ‘গত বছর তো করোনার কারণে বাড়ি গেলাম না। এবার পরীক্ষার জন্য যাওয়া হবে না। ৭ অক্টোবর একটা পরীক্ষা মাঝে পূজা তারপর আবার দশমীর পরদিন পরীক্ষা।’
এদিকে ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের প্রথম সেমিস্টারের দুটি পরীক্ষা পূজার নির্ধারিত ছুটির দিনে দেয়া হয়েছে। ১২ অক্টোবর ফিজিক্যাল জিওগ্রাফি অফ বাংলাদেশ এবং ১৪ অক্টোবর পপুলেশন জিওগ্রাফি নামের দুটি কোর্স পরীক্ষার কথা উল্লেখ করা হয়েছে রুটিনে।
এ বিষয়ে লাইফ অ্যান্ড আর্থ সায়েন্স অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘পূজার মধ্যে পরীক্ষা দিলে হবে না তো। পূজার মধ্যে কোনো পরীক্ষা হবে না। আমি ডিন, আমাকে এ বিষয়ে জানানো হয় নাই।
‘রুটিন আমাকে দেয়ার কথা। কিন্তু এখনও ডিপার্টমেন্ট থেকে আমাকে রুটিন দেয় নাই। এজন্য আমি এটা বলতে পারছি না। এ বিষয়ে খোঁজ নেব। পূজার মধ্যে কোনো পরীক্ষার ডেট থাকলে সেটি সংশোধন করা হবে।’
কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. চঞ্চল কুমার বোস বলেন, ‘পূজার মধ্যে তো কোনোভাবেই পরীক্ষা দেয়া উচিত না। পূজার কমপক্ষে তিন থেকে চারদিন আগে এবং পূজার তিন থেকে চারদিন পরে পরীক্ষা দেয়া যাবে। সেক্ষেত্রে আমার মতে ৮ অক্টোবরের পরে পরীক্ষা দেয়া যাবেনা। আবার ১৮ অক্টোবরের আগেও পরীক্ষা দেয়া যাবেনা।’
সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. অরুণ কুমার গোস্বামী বলেন, ‘পরীক্ষা হবে পূজাও হবে। যে পরীক্ষার্থী, তার মাথায় পরীক্ষা এবং পূজা দুইটাই থাকবে। আমি যেটা বলি, পরীক্ষার ডেটটা পূজার তিনদিন পর হলে পরীক্ষার্থী ধর্মীয় নিয়মনীতি পালন করার সুযোগ পাবে। আর যেহেতু শিক্ষার্থীদের ইতোমধ্যে দেড় বছর সময় নষ্ট হয়েছে, এটাও চিন্তা করতে হবে।’