বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানের মরদেহ চন্দ্রিমা উদ্যানে সমাহিত করা হয়নি এবং মৃত্যুর পর তার মরদেহ পাওয়া যায়নি বলে সংসদকে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
জিয়ার মরদেহ আনার উদ্যোক্তা জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক সেনা শাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ও মরদেহ শনাক্তকারী লে. জেনারেল মীর শওকত আলীর সঙ্গে কথা বলেও জিয়ার মরদেহ চন্দ্রিমা উদ্যানে সমাহিত করার তথ্য পাওয়া যায়নি বলে জানান সরকারপ্রধান।
জাতীয় সংসদের চতুর্দশ অধিবেশনে বৃহস্পতিবার সমাপনী বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘জিয়ার মৃত্যু সংবাদের পর তার লাশ খুঁজে পাওয়া যায়নি। গায়েবানা জানাজা হয়েছিল। কয়েক দিন পর একটা বাক্স আনা হলো। এখানে কেউ একটা বুদ্ধি দিয়েছে। জেনারেল এরশাদ সাহেব আবার এ ব্যাপারে বেশ পারদর্শী। সাজিয়ে গুছিয়ে একখানা বাক্স নিয়ে এসে দেখানো হলো। তখন এই পার্লামেন্টে বারবার প্রশ্ন এসেছে। যদি লাশ পাওয়া যেত লাশের ছবি থাকবে না কেন?’
সেদিন জিয়াউর রহমানের মরদেহ মীর শওকত আলী শনাক্ত করেছিলেন বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আমি তাকে (মীর শওকত) চিনতাম। আমি জিজ্ঞাসা করেছিলাম। “সত্যি কথা বলেন তো”; সে বলে যে লাশ কোথায় পাব? ইভেন জেনারেল এরশাদ সাহেব, তাকে আমি বললাম, আপনি এই যে বাক্স নিয়ে আসলেন, মৃত্যুর কিছুদিন আগেও জিজ্ঞেস করেছিলাম, আপনি যে বাক্স আনলেন, লাশটা কই? আমাকে বলেছেন, বোন, লাশ পাব কোথায়? আর কী বলব।’
চট্টগ্রাম সফরে গিয়ে ১৯৮১ সালের ২৯ মে রাতে সার্কিট হাউসে নিহত হয়েছিলেন ওই সময়ের রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। একদল সেনা কর্মকর্তা গজখানেক দূর থেকে মেশিনগানের বুলেটে ছিন্নবিচ্ছিন্ন করেছিলেন সাবেক এই সেনা কর্মকর্তাকে।
জিয়ার লাশ এতটাই বিধ্বস্ত হয়েছিল যে, তাকে চিনতে পারাটাও কঠিন ছিল।
মর্মান্তিক মৃত্যুর পর রাঙ্গুনিয়ার এক পাহাড়ের পাদদেশে আরও দুই সেনা কমকর্তার সঙ্গে একই কবরে মাটিচাপা দেয়া হয় জিয়াকে। কয়েক দিন পর ব্রিগেডিয়ার হান্নান শাহ গর্ত খুঁড়ে মরদেহ তুলে এনে ঢাকা পাঠান। চট্টগ্রাম থেকে পাঠানো সেই মরদেহের কফিনের ঢাকনা খোলা হয়নি। প্রেসিডেন্টের স্ত্রী ও সন্তানদেরও ডালা খুলে শেষবারের মতো দেখানো হয়নি জিয়ার মুখ।
ওই কফিন চন্দ্রিমা উদ্যানে দাফন করা হয়। ফলে সেটির ভিতরে জিয়ার মরদেহ প্রকৃতই ছিল কি না, তা নিয়ে তখন থেকেই প্রশ্ন দেখা দেয়।