অর্থ আত্মসাৎ মামলায় একটি পোশাক কারখানার পিয়নসহ দুইজনকে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত।
চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম আদালতে বৃহস্পতিবার বিকেলে আসামিদের তোলা হলে বিচারক হোসেন মোহাম্মদ রেজা তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
এর আগে আসামি রিপনকে রিমান্ডে নেয় পুলিশ। কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নেজাম উদ্দিন জানান, ১০ লাখ টাকা আত্মাসাৎ করতে ছিনতাইয়ের নাটক সাজায় রিপন। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি বিষয়টি স্বীকার করলে তাকে আদালতে তোলা হয়।
পুলিশ বলছে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রিপন জানিয়েছিল, ২০১৪ সালে পোশাক প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান ক্লিফটন গ্রুপে পিয়ন পদে চাকরি নেন তিনি। কাজ করেন টানা সাত বছর। এই সময়ে অনেকের আস্থা অর্জন করেন। এরই সুবাদে তাকে প্রায়ই ব্যাংক থেকে টাকা লেনদেনের জন্য পাঠাতেন কর্মকর্তারা।
ব্র্যাক ব্যাংকের চট্টগ্রাম কাজীর দেউড়ি শাখা থেকে ১০ লাখ টাকা তুলতে সোমবার দুপুর সোয়া ১টার দিকে তাকে একটি চেক দেন গ্রুপের হিসাবরক্ষক মো. সাহেদ।
টাকা তুলে তা স্ট্যান্ডার্ড চ্যার্টার্ড ব্যাংকে জমা দিতে কোতোয়ালি থানা এলাকার নূপুর মার্কেটে যান তিনি। সেই মার্কেটের সামনে থেকে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে দুই ব্যক্তি তাকে একটি অটোরিকশায় তুলে নেয়। অটোরিকশায় তোলার পর প্রথমে ১০ লাখ টাকা ছিনিয়ে নেয় তারা। পরে মানিব্যাগ ও মোবাইল ফোনও কেড়ে নেয়া হয়।
রিপন পুলিশকে বলেছিল, ‘অটোরিকশাটি যখন বায়েজিদ লিংক রোডে পৌঁছায় তখন আমি পানি খেতে চাইলে দেয়া হয়। এর পরপরই জ্ঞান হারাই। পরদিন সন্ধ্যা ৭টার দিকে জ্ঞান ফিরলে অলংকার এলাকার একটি ঝোপে নিজেকে আবিষ্কার করি। পরে এক বৃদ্ধের সহায়তায় একটি অটোরিকশা ধরে বাসায় ফিরি।
‘মাথায় আঘাতের চিহ্ন থাকায় পরিবারের সদস্যরা আমাকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে চিকিৎসকের পরামর্শে নগরীর ন্যাশনাল হাসপাতালে আমাকে ভর্তি করা হয়।’
টাকাসহ রিপন নিখোঁজের ঘটনায় সোমবার কোতোয়ালি থানায় অভিযোগ করা হয় প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে। তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় পুলিশ পরদিন মঙ্গলবার হাজির হয় ন্যাশনাল হাসপাতালে। এদিন অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে রিপনকে আসামি করে মামলা করেন ক্লিফটন গ্রুপের কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক।
হাসপাতালে গিয়ে পুলিশ রিপনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। এ সময় তার কথাবার্তায় পুলিশের সন্দেহ হয়। তারা চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারেন সুস্থ আছেন রিপন। এতে তাদের সন্দেহ প্রবল হয়।
পরে রিপনের দেয়া বর্ণনা অনুযায়ী ঘটনাস্থলের সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহ করে পুলিশ। ফুটেজ বিশ্লেষণে রিপনের দেয়া বর্ণনার সত্যতা না পেয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নেয়া হয়।
পরে আত্মসাৎ মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে রিপনকে চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম আদালতে তুলে রিমান্ড চায় পুলিশ। বিচারক এক দিনের রিমান্ড দেন।
রিমান্ডে টাকা আত্মসাতের কথা স্বীকার করেন রিপন। জানান, ব্যবসার লোকসান পুষিয়ে নিতে নাটক সাজিয়েছিলেন। পরে তার তথ্যে গ্রেপ্তার করা হয় সহযোগী সেলিমকে। তার রেলওয়ে কলোনির বাসা থেকে উদ্ধার হয় ১০ লাখ টাকা, মানিব্যাগ ও মোবাইল ফোন।