কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলায় ধান কাটার সময় জমির ওপর ঝুলে থাকা পল্লী বিদ্যুতের তারের স্পর্শে মৃত্যু হয়েছিল কৃষক জীবন মিয়ার। মাঠে পড়ে থাকা তার মরদেহের ছবি তখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়।
ওই ঘটনার পর সুষ্ঠু তদন্ত ও ক্ষতিপূরণের আশ্বাস দিয়েছিলেন পল্লী বিদ্যুতের কর্মকর্তারা। তবে ২৩ দিন পার হলেও কোনো ক্ষতিপূরণ পায়নি তার পরিবার।
এখন জানানো হচ্ছে, এ ধরনের ক্ষতিপূরণ দেয়ার কোনো ফান্ড পল্লী বিদ্যুতের নেই। সর্বোচ্চ স্থানীয় কর্মকর্তারা বেতন থেকে একটি অংশ দিয়ে তার পরিবারকে সহযোগিতা করতে পারেন।
কৃষক জীবন মিয়ার এক ছেলে ও চার মেয়ে। তিন মেয়ের বিয়ে হয়েছে। ছোট মেয়েটি দশম শ্রেণিতে পড়ছে। বাড়ির উপার্জনক্ষম মানুষটিকে হারিয়ে পরিবারটি এখন মানবেতর জীবন যাপন করছে।
জীবন মিয়ার ছেলে সজিব মিয়া সরকার বলেন, ‘আমডার ভিডা ছাড়া আর কোনো জমিন নাই। আব্বায় মাইনষের জমিন চাষ করত। মাঝেমইধ্যে অন্যের জমিনে কামলা খাটত। আমি নোয়াখালীতে একটা ব্যাটারির দোহানে চাকরি করি।
‘আব্বায় মরণের পরে আমি বাড়িত আই। আমার বেতনের কয়ডা টেকা আর আব্বার আয় দিয়া চলত আমডার সংসার। এহন আব্বায় নাই। খুব কষ্টে আছি ভাই। কারও কাছে কইতামও পারি না, সইতামও পারি না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আম্মার বয়স হইছে। শইলডাও ভালা যাইতেছে না। একটা ছোডু বইন আছে। সংসারটা নিয়া বহুত কষ্টে আছি। কেউ আমডার লাইগ্গা একটু চিন্তা করে না।
‘পল্লী বিদ্যুতের ভুলে বাবার মৃত্যু হয়েছে। অথচ আইজ ২৩ দিন পার হইল পল্লী বিদ্যুতের লোকজন একবার আইয়া হুদা কইয়া গেছে। তারা কইল, কাইল ১৫ তারিখ সমাধান দিব, কিন্তু তারা আইল না। মুসা সরকার নামে আমডার বংশের এক চাচা দায়িত্ব নিছে বিষয়ডা সমাধান করব। আইজ চাচার কাছে যায়াম। দেহি চাচায় কী কয়।’
মুসা সরকার জানান, তার সঙ্গে কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১-এর কোম্পানীগঞ্জ জোনাল অফিসের ডিজিএম এ কে এম আজাদের সঙ্গে কথা হয়েছে। তিনি জানিয়েছিলেন, ১৫ বা ১৬ সেপ্টেম্বর বিষয়টা সমাধান করবেন ৷ আজ বৃহস্পতিবার ফের যোগাযোগ করবেন।
কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুতের ডিজিএম এ কে এম আজাদ বলেন, ‘আমরা জীবন মিয়ার পরিবারের জন্য আলাদা করে কোনো ক্ষতিপূরণ দিতে পারব না। আমরা সর্বোচ্চ অফিসের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে চাঁদা তুলে তার পরিবারকে সহযোগিতা করব।’
পল্লী বিদ্যুতের ভুলে জীবন মিয়ার মৃত্যু হলেও ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে না কেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এমন কোনো বিধান বা আলাদা কোনো ফান্ড নেই।
‘তদন্ত কমিটির দুই কার্যদিবসে রিপোর্ট দেয়ার কথা ছিল। তদন্ত রিপোর্টটা আমাদের পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১-এর ম্যানেজারের কাছে সম্ভবত দেয়া হয়েছে। এর বেশি আমি কিছু জানি না।’
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১-এর ম্যানেজার মকবুল হোসেন জানান, তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বজ্রপাতে পল্লী বিদ্যুতের তার ঝুলে ছিল। লাইন সংস্কার না করায় সেই তারে জড়িয়ে জীবন মিয়ার মৃত্যু হয়।
সে ক্ষেত্রে জীবন মিয়ার পরিবার ক্ষতিপূরণ পাবে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের কোনো ফান্ড নেই। বেতন হলে সবার থেকে চাঁদা তুলে সহযোগিতা করব।’
গত ২৫ আগস্ট কুমিল্লার মুরাদনগরে ধান কাটতে গিয়ে ঝুলে থাকা বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে জীবন মিয়া সরকারের মৃত্যু হয়। উপজেলার গুঞ্জর মধ্যপাড়া এলাকায় ওই দিন বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। মৃত জীবন মিয়ার বাড়িও ওই এলাকায়।