বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সেই কাঞ্চনের বিরুদ্ধে অভিযোগ পিরের মুরিদ মায়ের

  •    
  • ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ১৭:০২

কমরের নেহার তার লিখিত অভিযোগে বলেন, তার স্বামীর মৃত্যুর পর কাঞ্চন সবার সম্পদ আত্মসাৎ করতে উঠেপড়ে লাগে। সম্পদ নিয়েই তাদের পারিবারিক দ্বন্দ্ব শুরু হয়। কাঞ্চন নানা সময় ভুয়া দলিল তৈরি করে মা ও অন্য ভাই-বোনদের সম্পদ দখল করার পাঁয়তারা করে।

আলোচিত ৪৯ মামলার আসামি একরামুল আহসান কাঞ্চনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেছেন তার মা কমরের নেহার।

জাতীয় প্রেস ক্লাবের আকরাম খাঁ মিলনায়তনে বৃহস্পতিবার বেলা সোয়া ১১টার দিকে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন।

কমরের নেহার রাজারবাগ দরবার শরিফের পির দিল্লুর রহমানের মুরিদ। সংবাদ সম্মেলনের সময় তার সঙ্গে ছিলেন বড় ছেলে আকতার ই কামাল, ছোট মেয়ে ফাতেমা আক্তার, কাঞ্চনের মামাতো ভাই শাকেরুল কবির ও তার দুই বোন।

৮৪ বছর বয়সী কমরের নেহারের পক্ষে তার লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান মেয়ে ফাতেমা আক্তার।

কমরের নেহার তার লিখিত অভিযোগে বলেন, তার স্বামীর মৃত্যুর পর কাঞ্চন সবার সম্পদ আত্মসাৎ করতে উঠেপড়ে লাগে। সম্পদ নিয়েই তাদের পারিবারিক দ্বন্দ্ব শুরু হয়। কাঞ্চন নানা সময় ভুয়া দলিল তৈরি করে মা ও অন্য ভাই-বোনদের সম্পদ দখল করার পাঁয়তারা করে। সম্পদের জন্য কাঞ্চন মায়ের বিরুদ্ধেই দুটি মামলা করে। এমনকি নিজের মায়ের নামের সম্পত্তি হাতিয়ে নিতে অন্য নারীকে মা বানিয়ে জাল দলিল তৈরি করে। এ ঘটনা সামনে আসার পর কাঞ্চনের বিরুদ্ধে মামলাও করা হয়েছে।

স্বামী ডা. আনোয়ার উল্লাহ ১৯৮৬ সালে রাজারবাগ পিরের মুরিদ হয়েছিলেন দাবি করে কমরের নেহার বলেন, ‘তিনি (স্বামী) জীবিত থাকার সময় আমি আমার বড় ছেলে ও মেয়ে রাজারবাগ পিরের মুরিদ হই।’

কমরের নেহার তার স্বামীর সম্পদের বিবরণ দিয়ে বলেন, ‘আমার স্বামী আর্থিকভাবে সামর্থ্যবান ছিলেন। তিনি অনেক জমিজমা ক্রয় করেন। তার ঢাকার শেওড়াপাড়া, শাহজাহানপুর থানার শান্তিবাগে বাড়ি, নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার কুতুবাইলে ফ্যাক্টরি, তক্কার মাঠে জমি, পিলকুনিতে ৪টি প্লট রয়েছে। এ ছাড়া তিনি নোয়াখালীতে পৈতৃক সূত্রে অনেক জমিজমা লাভ করেন। তার মৃত্যুর পর এই সম্পত্তিগুলো কাঞ্চনসহ সবার মধ্যে বণ্টন হয়, যা প্রত্যেকের সচ্ছল জীবনযাপনের জন্য যথেষ্ট।

‘আমার স্বামী আমার জন্যও আলাদা কিছু সম্পত্তি কিনেছিলেন। আমার ও স্বামীর ইচ্ছা অনুযায়ী, কিছু জমি মাদ্রাসা ও এতিমখানায় দান করার নিয়ত করেছিলাম। কিন্তু আমার দানের বিষয়টি অন্য সন্তানরা মেনে নিলেও কাঞ্চন মানতে পারেনি। সে চাপ প্রয়োগ করতে থাকে যেন আমি আমার ভাগের সম্পত্তিটুকু পুরোটাই তাকে লিখে দিই; কোনোভাবেই যেন মাদ্রাসায় জমি দান না করি। কাঞ্চন সম্পত্তির ওপর লোভ সামলাতে পারে না পেরে অন্য এক মহিলাকে মা বানিয়ে আমার জমির জাল দলিল তৈরি করে। ওই জাল হেবা দলিলের জন্য আমরা ২০০৯ সালে একটি মামলাও করেছিলাম যার নং ১৩৯২৬।’

কমরের নাহার বলেন, ‘…এক যুগ আগে কাঞ্চন আমাকে মৃত দেখিয়ে এবং তার একমাত্র বোন ফাতেমা আক্তারকে বাদ দিয়ে সকল সম্পদের ওয়ারিশনামা তৈরি করে। কাঞ্চনের বানানো জাল দলিল বাতিল করতে এবং আমার মেয়ের ওয়ারিশসত্ব ফিরিয়ে আনতে আমি আদালতের দ্বারস্থ হই। তখন কাঞ্চন ক্ষিপ্ত হয়ে আমাদের বিরুদ্ধে মামলা করা শুরু করে। আমি তার মা হওয়া সত্ত্বেও আমার বিরুদ্ধে দুটি, বড় ভাই আকতার ই কামালের বিরুদ্ধে সাতটি, বোনের বিরুদ্ধে তিনটি এবং তার মামাতো ভাই শাকেরুল কবিরের বিরুদ্ধে চারটি মামলা করে।’

২০১৪ সালে নিজের অংশ থেকে মুহম্মদীয়া জামিয়া শরীফ মাদ্রাসার নামে ৭৬ শতাংশ জমি দান করেন বলে উল্লেখ করেন কমরের নেহার।

তিনি বলেন, ‘এটা কাঞ্চন মেনে নিতে পারেনি। সে ওই জমিসহ আমার অংশের সম্পদ তার নামে লিখে দিতে আমাকে চাপ দিতে থাকে। সেই সাথে দানের জমি ফিরিয়ে দিতে রাজারবাগ দরবার শরিফ ও মুহম্মদীয়া জামিয়া শরিফ মাদ্রাসার সংশ্লিষ্ট লোকজনের ওপর মামলা-হামলা করতে থাকে। অনেককে সে রক্তাক্ত করে হাসপাতালে পাঠায়। এমনকি মাদ্রাসায় যাওয়া বোরকা পরিহিতা নারীদেরও সে উত্ত্যক্ত করত। এরপর সে রাজারবাগ পিরের সম্পর্কে উল্টাপাল্টা বক্তব্য প্রচার করতে থাকে।

‘পির সাহেব নাকি আমাকে বাইয়াত করে ভুলভাল বুঝিয়ে আমার সব সম্পত্তি লিখে নিচ্ছেন। আমি নাকি তাদের পৈতৃক সম্পত্তি থেকে তাদের বঞ্চিত করে পির সাহেবকে সব সম্পত্তি লিখে দিচ্ছি। এমন মিথ্যা সে মিডিয়ায় প্রচার করতে থাকে। আমি কোনো সম্পত্তি পির সাহেবকে লিখে দিইনি। যতটুকু সম্পত্তি আমি দান করেছি, সেটা একটা মাদ্রাসা ও এতিমখানার জন্য; পির সাহেব বা দরবার শরিফের নামে নয়। আমি স্বেচ্ছায় ওই সম্পদ দান করেছি।’

পিরের বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে কাঞ্চন কুৎসা রটাচ্ছেন উল্লেখ করে কমরের নেহার বলেন, ‘সে প্রচার করে, আমি নাকি আমাদের শান্তিবাগের বাড়ি পির সাহেবকে লিখে দিয়েছি, পির সাহেবের মেয়ের বিয়েতে স্বর্ণের মুকুট দিয়েছি, জাপান থেকে তার পাঠানো একটা গাড়ি পির সাহেবকে দিয়ে দিয়েছি। এসবই ভিত্তিহীন, মিথ্যা কথা। কাঞ্চনের সাথে আমাদের পারিবারিক বিরোধ। সেটার সাথে পিরকে জড়িয়ে মাদ্রাসার জায়গাটা দখল করতে চায় সে।’

কাঞ্চনের মায়ের দাবি, জাপান থেকে ফিরে এসে তার ছেলে ১৯৯৫ সালে রাজারবাগ পিরের মুরিদ হন। এমনকি তার দ্বিতীয় বিয়ের অনুষ্ঠানও রাজারবাগ দরবার শরিফে হয়।

ছেলের বিরুদ্ধে দীর্ঘ অভিযোগ পাঠ করার পর কমরের নেহার ও তার পরিবারকে প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন করতে চাইলে তারা জানান, কোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে তারা সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেননি। তারা শুধু তাদের বক্তব্য তুলে ধরতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন।

এরপরও কাঞ্চনের জাল হেবা দলিল সংক্রান্ত মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে তারা কোনো উত্তর না দিয়ে সংবাদ সম্মেলনস্থল ছাড়েন।

পরিবারের সব অভিযোগ নিয়ে জানতে চাইলে একরামুল আহসান কাঞ্চন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার মা-ভাই-বোন পির সাহেব দ্বারা প্রভাবিত হয়ে আমার বিরুদ্ধে এই সংবাদ সম্মেলন করেছেন। পিরের কয়েকজন সহযোগী মাদ্রাসার দানের বাইরেও আমাদের আরও জায়গা হাতিয়ে নিবার পাঁয়তারা করছিল, এটা আমি বুঝতে পেরেছিলাম। তখন আমি বাধ্য হয়ে আমার মায়ের কাছ থেকে গোপনে স্বাক্ষর নিয়ে আমাদের নারায়ণগঞ্জের ১৭১ শতাংশ জায়গার হেবা দলিল তৈরি করি। আর তাতে উল্লেখ করা হয়, আমার মায়ের মৃত্যুর পর আমার মায়ের অংশের ওই জমির মালিক হব আমি, আমার বড় ভাইয়ের দুই ছেলে ও আমার ছোট ভাই বাদল।

‘আমার মা, বড় ভাই ও বোন যেহেতু পিরের মুরিদ। আর তারা ওই সম্পদ পিরকে দিয়ে দিবার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, তাই আমি এই কাজ করেছিলাম। আমার যদি সম্পদের প্রতি লোভ থাকত তাহলে তো সব আমার নিজ নামেই নিতাম। আমার ছোট ভাই আর ভাতিজাদের নাম রাখতাম না।’

কাঞ্চনের দাবি, ‘পিরের লোকেরা যে আমাদের সম্পদ নিয়ে যাচ্ছিল তার প্রমাণও মিলে ওই হেবা দলিল করার কিছুদিন পর। আমার মায়ের কাছ থেকে ওই ১৭১ শতাংশ জমির পাওয়ার অব অ্যাটর্নি নিয়ে নেয় পিরের লোকজন। তখন তারা সেই অংশের কিছু জমি একজনের কাছে বিক্রি করে দেয়।

‘তখন আমার তৈরি করা হেবা দলিল সামনে আসলে তারা বিপদে পড়ে যায়। তখন মাকে দিয়ে আমিসহ আমার ছোট ভাই ও দুই ভাতিজার নামে দুটি মামলা করানো হয়। একটি মামলায় জমি ফিরিয়ে দেয়ার শর্তে মায়ের সাথে আমাদের আপস হয়। অন্যটি এখনও চলছে।’

মাকে মৃত দেখিয়ে বোনের অংশ বাদ দিয়ে ওয়ারিশনামা তৈরির অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে কাঞ্চন বলেন, ‘এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা। যদি এমনটা হতো তাহলে তো আমার মা আমার বিরুদ্ধে মামলা করত। তাদের জিজ্ঞেস করেন মামলা কেন করল না।’

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্যের শেষ দিকে কমরের নেহার বলেন, ‘সম্পত্তি নিয়ে পারিবারিক এই বিরোধে কাঞ্চন একটি পক্ষে অবস্থান করছেন। অন্যদিকে পুরো পরিবার এক আছেন।’

সংবাদ সম্মেলনে কমরের নেহারের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন তার বড় ছেলে, মেয়ে, ভাগ্নে, ভাগ্নিরা। তিনি দাবি করেছিলেন, ভিডিও কলের মাধ্যমে ওই সংবাদ সম্মেলনে যুক্ত ছিলেন ছোট ছেলে কামরুল আহসান বাদল ও তার পরিবারের সদস্যরা। তবে বাদল ও তার পরিবারের সদস্যদের সেখানে যুক্ত থাকার দৃশ্য চোখে পড়েনি।

নিউজবাংলা যোগাযোগ করে বাদলের পরিবারের সঙ্গে। টেলিফোনে কথা হয় বাদলের স্ত্রী তসলিমার সঙ্গে।

তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা ওই সংবাদ সম্মেলনে যুক্ত ছিলাম না। আমাদের কাছে তো ভিডিও কল করার মতো কোনো ফোনই নাই।’

ভিডিও কলে যুক্ত থাকার কথা কেন বলা হলো, তা জানতে চাইলে তসলিমা বলেন, ‘তা বলতে পারব না। আমরা কাঞ্চন ভাই বা আমার শাশুড়ির বিষয়ে কিছু বলতে চাই না। আমাদের এসব থেকে দূরে রাখেন।’

এ বিভাগের আরো খবর