পদ্মায় পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে রাজবাড়ীতে দেখা দিয়েছে ভাঙন। এতে ঝুঁকিতে রয়েছে নদী তীরের শতাধিক বসতভিটা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, স্কুলসহ নানা স্থাপনা। রাজবাড়ী শহর থেকে তিন কিলোমিটার দূরে চর সিলিমপুর গ্রাম। নদী থেকে মাত্র কয়েক হাত দূরে এই গ্রামের একমাত্র চর সিলিমপুর সরকারি বিদ্যালয়টি ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকালে স্কুলের পেছনের ব্লক নদীতে বিলীন হতে শুরু করে। এর আগে বুধবার সকালে স্কুলটি থেকে ১০ গজ দূরে ভাঙনে প্রায় ৬০ মিটার নদীতে চলে যায়। এরইমধ্যে জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন ঠেকাতে কাজ শুরু করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
ভাঙন আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটছে এখানকার বাসিন্দারা। চর সিলিমপুর গ্রামের বাসিন্দা মমতাজ বেগম বলেন, ‘রাইত জাইগা চেরা (প্রদীপ) জালাইয়া গাংয়ের (নদীর) পাশে বইসা থাকি। আমাগের সব শ্যাষ (শেষ)। আছে শুধু ঘরডা। তাও মনে অয় (হয়) চইলা যাইব।’ভাঙন ঝুঁকিতে থাকা চর সিলিম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র রনি বলে, ‘স্কুলের পাশেই আমার বাড়ি। স্কুলটি ভেঙে গেলে আমরা পড়ব কোথায়? আর বাড়ি ভেঙে গেলে থাকবো কোথায়?’রনির সঙ্গে কথা বলতে বলতে আরও দুই শিক্ষার্থী আসে। তারাও স্কুল নিয়ে উদ্বেগের কথা জানায়।
আরেক বাসিন্দা সেকেন সরদার বলেন, ‘বৃহস্পতিবার ভোর থেকে ভাঙন বেড়েছ। চর সিলিমপুর সরকারি বিদ্যালয়টি একদম নদী পাড়ে। যে কোন সময় এটি বিলীন হয়ে যাবে। আমার ছেলেও এই স্কুলে পড়ে। ছেলেকে স্কুলে পাঠাইতেও ভয় লাগে।’
চর সিলিমপুর স্কুলের প্রধান শিক্ষক ইমান আলী ফকির নিউজবাংলাকে বলেন, ‘স্কুল ভবন থেকে অফিস সরিয়ে পাশের টিনশেট রুমে নেয়া হয়েছে। ওখানেই ক্লাস নেয়া হচ্ছে। এই স্কুলে প্রথম শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ১০৮ জন রয়েছে। এবারের ভাঙনে স্কুলটা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে। স্কুলের কিছু হলে শিক্ষার্থীদের কী হবে তা নিয়ে চিন্তায় আছি।’স্থানীয় রেহেনা বেগম বলেন, ‘এই গ্রামে বিয়ে হইছে প্রায় ৫০ বছর অইয়া গেল। এহান থেইক্যা গাং ছিল মেলা দূরে। মেলা ঘর ছিল, সব এহন গাংয়ে (নদীতে) চইলা গেছে। এই ইস্কুল ডাও মনে অয় এইবার বাইংগা (ভেঙে) যাইব।’রাজবাড়ী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল আহাদ বলেন, ‘ভাঙনের বিষয় নিয়ে পানি সম্পদ সচিবের সঙ্গে কথা হয়েছে। পদ্মার পাড় সংস্কার কাজের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধে কাজ করছে।’