বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বাবা-ছেলে মিলে তুলছেন বালু, কাটছেন পাহাড়

  •    
  • ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০৯:২৭

স্থানীয়রা জানান, দলীয় ক্ষমতা ব্যবহার করে ডায়লং পাড়ার প্রবেশমুখের পাশের খাল থেকে কয়েক বছর ধরে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন এবং গত এক বছর ধরে পাহাড় কাটছেন উপজেলার জাতীয় পার্টির সাবেক সাধারণ সম্পাদক সুলতান। এ কাজে তার সঙ্গে যোগ দিয়েছেন ছেলে জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি মনির।

রাঙামাটি উপজেলার কাউখালীতে খাল থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের অভিযোগ উঠেছে বাবা-ছেলের বিরুদ্ধে। বালু রাখতে পাহাড় কেটে জায়গা তৈরিও করেছেন তারা।

কাউখালী উপজেলার ১ নম্বর বেতবুনিয়া মডেল ইউনিয়নের ডায়লং পাড়ার সুলতান আহম্মদ ও তার ছেলে নওশাদ ইকবাল মনিরের বিরুদ্ধে উঠেছে এমন অভিযোগ।

সুলতান কাউখালী উপজেলার জাতীয় পার্টির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং মনির জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি।

রাজনৈতিক পরিচয়ে বাবা-ছেলের এমন কাজে ওই এলাকার বাসিন্দারা নানা ভোগান্তি পোহালেও প্রতিবাদ করতে পারছেন না।

ডায়লং পাড়ার প্রবেশ মুখে সুলতান আহম্মদ শ্রমিক দিয়ে খাল থেকে বালু তুলছেন। ছবি: নিউজবাংলা

স্থানীয়রা জানান, দলীয় ক্ষমতা ব্যবহার করে ডায়লং পাড়ার প্রবেশমুখের পাশের খাল থেকে কয়েক বছর ধরে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন এবং গত এক বছর ধরে পাহাড় কাটছেন সুলতান। এক বছর আগে বাবার সঙ্গে যুক্ত হন মনির।

তারা আরও জানান, বাবা-ছেলের অপরিকল্পিত ও অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কারণে ওই এলাকায় অনেকের জমি খালে বিলীন হয়েছে। ভারী ট্রাকে বালু নিয়ে যাওয়ায় রাস্তার অবস্থাও বেহাল। এ নিয়ে একাধিকবার অভিযোগ করা হলেও কোনো কাজ হয়নি।

ওই এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, কাউখালীর ডায়লং পাড়া প্রবেশমুখেই খাল থেকে তোলা হচ্ছে বালু। সেই বালু রাখা হচ্ছে পাহাড় কেটে তৈরি করা স্থানে। আরেক দিক থেকে ট্রাকে তোলা হচ্ছে সেই বালু।

বালু উত্তোলন করতে দেখা যায় ৫-৬ জন শ্রমিককে। পুরোটাই দেখাশোনা করছিলেন সুলতান।

প্রতিবেদককে দেখেই চমকে যান তিনি। পরে পাহাড় কাটার বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি অস্বীকার করে বলেন, ‘আমরা পাহাড় কাটিনি। এর আগে যারা বালু উত্তোলন করত তারাই পাহাড় কেটেছে।’

ট্রাকভর্তি বালু পরিবহনের কারণে রাস্তার বেহাল অবস্থা দেখা গেছে। যান চলাচল দূরের কথা হেঁটে চলাও এ রাস্তায় কঠিন।

স্থানীয়রা জানান, ডায়লং পাড়ায় ৭০টিরও বেশি পরিবার বাস করে। এ ছাড়া শিলছড়ি, ডাক্তার শোলাসহ কয়েক গ্রামের বাসিন্দারা এ রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করে।

ডায়লং পাড়ার অটোরিকশাচালক নিচাউ মারমা জানান, প্রতিদিন বালুভর্তি ট্রাক আসা যাওয়ার কারণে রাস্তাগুলোর অবস্থা বেহাল হয়ে পড়েছে। এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে বার বার বলার পরও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

মোহাম্মদ মিয়া নামে আরেকজন বলেন, ‘বাপ ও ছেলে দুজনই বড় নেতা। দলীয় ক্ষমতা দেখিয়ে অনেক বছর ধরে এ অবৈধকাজ করে যাচ্ছে। দোশাল্যা পাড়া ও ডায়লং পাড়া দুই এলাকা থেকে এরা বালু উত্তোলন করে।

‘প্রতিদিন ৩০টির বেশি ট্রাকে করে বালু নিয়ে যায়। এতে আমাদের জমি, খাল ভেঙে যাচ্ছে। অনেক অসুবিধার মধ্যে আছি।’

স্থানীয় পাইকিউ মারমা বলেন, ‘আমার জমির পাশে বালু উত্তোলনের কাজ করা হয়। এতে আমার জমি ভেঙে নষ্ট হচ্ছে। অনেকবার মানা করা হয়েছিল, কিন্তু কোনো কাজই হয়নি।’

মাহবুব আলম বলেন, ‘কয়েক বছর ধর খাল থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে বাপ-ছেলে। এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে ইউপি চেয়ারম্যানকে বলা হয়েছে। এখনও কোনো সমাধান হয়নি।

‘তারা বালু উত্তোলন করে রাস্তা দিয়ে নিয়ে যায়। যার ফলে রাস্তা ভেঙে গিয়ে বেহাল অবস্থা হয়েছে।’

ক্যাচিমং মারমা নামে একজনের অভিযোগ, এত বছর ধরে তারা অবৈধভাবে পাহাড় কাটছে ও বালু তুলছে কিন্তু ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, এমনকি উপজেলা প্রশাসনও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

এ বিষয়ে ডায়লং এলাকার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য বাবু পালিত বাসুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রতিবেদকের সঙ্গে অসৌজন্যমূলকভাবে আচরণ করেন।

তিনি বলেন, ‘শুধু তো মনির ও তার বাবা খাল থেকে বালু উত্তোলন করছে না। তারা সবে মাত্র এক বছর হচ্ছে বালু উত্তোলনের কাজ করছে। সাত-আট বছর আগে থেকে অনেকে বালু উত্তোলন করছিল। তখন তো কেউ কিছু বলেনি। এখন শুধু মনিরের বিরুদ্ধে বলা হচ্ছে কেন?’

পরে তিনি বলেন, ‘এলাকাবাসী থেকে আরও এক সপ্তাহ সময় দেয়া হয়েছে। এক সপ্তাহ পরে এখানে কেউ বালু উত্তোলন করতে পারবে না।’

সাত-আট বছর ধরে অবৈধভাবে বালু তোলা হলেও ইউনিয়ন পরিষদ থেকে কেন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিস্তারিত জানতে চাইলে চেয়ারম্যানকে কল দেন।’

চেয়ারম্যানের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ধরেননি।

ডায়লং পাড়াতে পাহাড় কেটে খাল থেকে বালু জমা করা হচ্ছে। ছবি: নিউজবাংলা

ছাত্রলীগ নেতা মনিরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আব্দুল জব্বার সুজনের সঙ্গে মোবাইলে কথা বলিয়ে দেন। সুজন এ প্রতিবেদককে সংবাদ প্রকাশ না করতে অনুরোধ করেন।

বালু উত্তোলনের বিষয়ে মনির বলেন, ‘শুধু আমি না। এখান থেকে এর আগে অনেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছিল। এমনকি বেতবুনিয়ার আমতলাতে যে খাল থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে তাদের বিরুদ্ধে কেন অভিযোগ করা হয়নি?

বালু তোলার যন্ত্র কেনার জন্য অনেক টাকা ব্যয় হয়েছি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এ কারণে কাজ বন্ধ করতে পারছি না। তবে আগামী মাস থেকে আর বালু উত্তোলন করব না।’

কাউখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাজমুন আরা সুলতানা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বিষয় নিয়ে আমাকে কেউ এখনও কিছু জানায়নি। বালু উত্তোলনের বিষয় যদি আমার কানে আসত, তাহলে আমি এতদিনে বন্ধ করে দিতাম।’

ইউএনও আরও বলেন, ‘মনির তারা যে দলের হোক না কেন এ কাজ খুবই অপরাধ। অবৈধভাবে খাল থেকে যদি বালু উত্তোলন হয়ে থাকে আর যদি তা কাউখালী উপজেলার মধ্যে পড়ে তাহলে সঠিক তথ্য ও প্রমাণের ভিত্তিতে প্রশাসন থেকে শিগগিরই ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর