নানা জটিলতার পর অবশেষে আরটি-পিসিআর ল্যাব বসছে দেশের প্রবেশমুখ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে।
বিদেশগামী যাত্রীদের করোনা শনাক্তে আরটি-পিসিআর ল্যাব স্থাপনের জন্য সাতটি প্রতিষ্ঠানকে অনুমোদন দিয়েছে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়। আগামী সপ্তাহের মধ্যেই সবগুলো প্রতিষ্ঠানের ল্যাব স্থাপন হয়ে যাবে।
যে সাতটি প্রতিষ্ঠান অনুমতি পেয়েছে, এদের মধ্যে দুটির বিরুদ্ধে করোনার ভুয়া সনদ দেয়ার অভিযোগ রয়েছে।
সাতটি প্রতিষ্ঠান হলো স্টেমজ হেলথ কেয়ার (বিডি) লিমিটেড, সিএসবিএফ হেলথ সেন্টার, এএমজেড হাসপাতাল, আনোয়ার খান মডার্ন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, জয়নুল হক সিকদার ওমেন্স মেডিক্যাল কলেজ অ্যান্ড হসপিটাল, গুলশান ক্লিনিক লিমিটেড এবং ডিএমএফআর মলিকুলার ল্যাব অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক।
এগুলোর মধ্যে স্টেমজ হেলথ কেয়ার (বিডি) লিমিটেড ও সিএসবিএফ হেলথ সেন্টার করোনার ভুয়া সনদ দেয়ার কারণে তাদের কার্যক্রম বন্ধ রেখেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে আগামী পাঁচ দিনের মধ্যে এসব প্রতিষ্ঠান আরটি-পিসিআর ল্যাব স্থাপন করবে। আর একেকটি প্রতিষ্ঠান একেক রকমের ফি নেবে।
একটি প্রতিষ্ঠান করোনা পরীক্ষার জন্য সর্বনিম্ন ১ হাজার ৭০০ টাকা ফি নেবে। আর সবচেয়ে বেশি নেবে যে প্রতিষ্ঠান, তাদের ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ২ হাজার ৩০০ টাকা।
ভুয়া সনদ দেয়া প্রতিষ্ঠানকে পিসিআর ল্যাব স্থাপন আর একেক প্রতিষ্ঠানকে একেক ধরনের ফি আদায়ের বিষয়ে কোনো ব্যাখ্যা দেয়া হয়নি।
কোন প্রতিষ্ঠান কবে স্থাপন করবে, ফি কত
সাতটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে স্টেমজ হেলথ কেয়ার সবচেয়ে কম সময়ে ল্যাব স্থাপন করবে বলে জানানো হয়েছে । প্রতিটি করোনা নমুনা পরীক্ষা করতে প্রতিষ্ঠানটি নেবে দুই হাজার টাকা।
পরীক্ষার জন্য সবচেয়ে কম ১ হাজার ৭০০ টাকা ফি নেবে সিকদার মেডিক্যাল। তারা পিসিআর ল্যাব স্থাপনে ছয় দিন সময় চেয়েছে।
১ হাজার ৭৫০ টাকা নেবে গুলশান ক্লিনিক। তাদের ল্যাব বসাতে লাগবে পাঁচ দিন।
১ হাজার ৮০০ টাকা নেবে এএমজেড হাসপাতাল। তারা ল্যাব বসাবে পাঁচ দিনে ।
১ হাজার ৮৫০ টাকা নেবে সিএসবিএফ। তাদের ল্যাব বসাতে লাগবে পাঁচ দিন।
আনোয়ার খান মডার্ন নমুনা পরীক্ষা করতে নেবে ২ হাজার টাকা। তারা ল্যাব স্থাপন করবে চার দিনে।
সবচেয়ে বেশি ২ হাজার ৩০০ টাকা ফি নেবে ডিএমএফআর। তারাও চার দিনে ল্যাব স্থাপন করবে।
বিমানবন্দরে আরটি পিসিআর-ল্যাব স্থাপনের দাবিতে মঙ্গলবার প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে অনশন করেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা
আরটি-পিসিআর ল্যাব কেন জরুরি
করোনাভাইরাসের কারণে যেসব দেশ বাংলাদেশের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল, তাদের মধ্যে কয়েকটি দেশ সম্প্রতি নিষেধাজ্ঞা শিথিলের ঘোষণা দেয়। নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা হলেও বেশ কিছু শর্ত মানতে বলা হয়, বাংলাদেশ থেকে যাওয়া যাত্রীদের, এর মধ্যে যাত্রার ছয় ঘণ্টার মধ্যে বিমানবন্দরে পিসিআর টেস্ট উল্লেখযোগ্য।
বিমানবন্দরে করোনাভাইরাসের আরটি-পিসিআর টেস্টের সুবিধা না থাকায় সম্প্রতি বাংলাদেশ থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতগামী (ইউএই) যাত্রীদের নেবে না বলে জানিয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশটির পতাকাবাহী বিমান পরিবহন সংস্থা এমিরেটস।
এই অবস্থায় প্রবাসী বাংলাদেশিরা প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে অবস্থান নিয়ে মঙ্গলবার অনশন করে। দাবি পূরণ না হওয়ার পর্যন্ত অবস্থানের ঘোষণা দেয়ার পর বুধবারের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেয়ার আশ্বাস দেয় কর্তৃপক্ষ। সেই অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেয়।
করোনাভাইরাস শনাক্তে এখন পর্যন্ত বিশ্বে যে কটি নমুনা পরীক্ষা পদ্ধতি আছে, তার মধ্যে আরটি-পিসিআর পরীক্ষাই সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য। এই পদ্ধতিতে রোগীর নাসারন্ধ্র বা মুখের ভেতর থেকে মিউকাস বা লালা সংগ্রহ করা হয়।
আরটি-পিসিআর পদ্ধতিতে নমুনা পরীক্ষায় এন্টিজেন টেস্টের চেয়ে একটু সময় লাগলেও অনেকটা নিখুঁত ফল পাওয়া যায়। এতে প্রায় ৪০ মিনিটের মতো সময় লাগে।
বিশ্বে বাংলাদেশের যে শ্রমবাজার রয়েছে, তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো। গত ২০২০-২১ অর্থবছরে মধ্যপ্রাচ্যের আটটি শ্রমবাজার থেকে রেমিট্যান্স এসেছে এক হাজার ২৪৫ কোটি ডলার। চলতি বছরের জুলাই মাসে এসেছে ১০৬ কোটি ৩০ লাখ ডলার আর আগস্ট মাসে এসেছে ১০২ কোটি ৬৪ লাখ ডলার। এই বাজারের কর্মীরা কোনো কারণে সংকটে পড়লে তার প্রভাব পড়তে পারে দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহে।