নদীর পাড় দখল করে গড়ে ওঠা শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোকে দখল ছাড়তে ‘কিছুটা’ সময় ও সুযোগ দিতে চান নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।
বুধবার সচিবালয়ে বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরামের (বিএসআরএফ) সংলাপে অংশ নিয়ে তিনি এ কথা বলেন।
এ সময় নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘নদীর পাড়ে অনেক ভারী শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। এগুলো সরিয়ে নিতে তাদের কিছুটা সময় ও সুযোগ দিতে চাই। কারণ এক সময় অনেকে ভাবেননি নদীরও নিজস্ব জায়গা আছে। এই ভাবনার জায়গাটা তৈরির দায়িত্ব ছিল রাষ্ট্রের। রাষ্ট্র অনেক দিন সেই জায়গাটা তৈরি করেনি।
‘নদীর সীমানা পিলারের মধ্যে যেসব প্রতিষ্ঠান রয়েছে ভবিষ্যতে তাদের প্রতিষ্ঠান সরাতে হবে। আমরা পিলার দিচ্ছি। পিলার দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো কম্পোমাইজ করা হয়নি। কাজ করতে অনেক চ্যালেঞ্জ থাকে। আমাদের স্বদিচ্ছা, সাহস ও প্রেরণা আছে।’
তিনি বলেন, ‘নদীর পাড়ে থাকা এসব প্রতিষ্ঠান হঠাৎ বন্ধ করে দিলে তারা যেসব জিনিস উৎপাদন করে সেসবের দাম বেড়ে যাবে। তার মানে এই না আমরা তাদের সঙ্গে কম্প্রোমাইজ করছি। নারায়ণগঞ্জে অনেকগুলো দূর্বল শিল্প প্রতিষ্ঠান ছিল, যেগুলো অল্প দামে বিনিয়োগকারীদের কাছে ছেড়ে দেয়া হয়েছিল। এখন সেগুলো আবাসিক প্লটে পরিণত করা হয়েছে।
‘যে মানুষটি সেখানে ফ্ল্যাট কিনেছেন তার কি অপরাধ? এসব দেখা রাষ্ট্রের দায়িত্ব ছিল। সেই দায়িত্ব রাষ্ট্র পালন করেনি বলে এই সরকারের ওপর এখন বিরাট বোঝা পড়েছে। আমরা বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি না করে ধারাবাহিকভাবে সমাধানের চেষ্টা করছি। কোনো কম্প্রোমাইজ করছি না।’
নৌপ্রতিমন্ত্রীর মতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নদীর জায়গা দখল হয়েছে অসাবধানতার কারণে। তিনি বলেন, ‘শুধু রাঘববোয়াল নয়, সাধারণ মানুষও নদী দখল করে আছেন। সাধারণ মানুষ হয়ত জানেনই না নদী দখল করে আছেন। অনেকে নদীর ২০০ ফুট ভেতরে চলে গেছেন অসাবধানতার কারণে। জোর যার মুল্লুক তার ছিল। এখন আর তা নেই।
‘ক্ষতিগ্রস্ত সাধারণ মানুষ সরকারের কাছে আবেদন করলে ঘর নির্মাণ করে দেয়া হবে। যারা শিল্পপ্রতিষ্ঠান নির্মাণ করেছে তাদের আমরা সুযোগ দিয়েছি। তারা সুযোগের সঠিক মূল্যায়ন না করলে অনেক কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হতে পারে।’
নদী দখলের বিষয়ে সরকার শুন্য সহনশীলতা নীতি অনুসরণ করছে বলেও জানান তিনি। খালিদ মাহমুদ বলেন, ‘শুধু নদীর জায়গা নয়, যে কোনো অবৈধ দখল দমনে সরকারের রয়েছে জিরো টলারেন্স নীতি। ঢাকার চারপাশের নদীর পাড় থেকে অবৈধ দখলদারদের এখনও পুরেপুরি উচ্ছেদ করা হয়নি।
‘কিছু মামলা মোকদ্দমা আছে, সেগুলো নিয়ে আইনজীবীরা কাজ করছেন। আমরা আশা করি সফলতা দেখাতে পারব।’
এবারের বিশ্ব পরিবেশ দিবসে হবিগঞ্জের খোয়াই নদী সংলগ্ন খালে দখল ও বর্জ্য নিক্ষেপ বন্ধের দাবিতে নদী তীরবর্তী সভা ও মানববন্ধনে বক্তারা। ফাইল ছবি
হারানো নৌপথ সচলে বিনিয়োগ
দেশের ১০ হাজার কিলোমিটার নৌপথ ফিরিয়ে আনতে তিন হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে বলে জানান নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘ড্রেজিং হচ্ছে। এর সুফলও আমরা পেতে শুরু করেছি। অতি বৃষ্টি ও উজান থেকে আসা পানি এবার বন্যায় রূপ নেয়নি। পানির প্রবাহ নিশ্চিত হয়েছে।
‘১০ হাজার কিলোমিটার নৌপথ তৈরি ও নদীকে ঘিরে সরকারের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারলে বন্যা ও নদী ভাঙন থেকে রক্ষা পাব। যমুনা ও তিস্তা নদীর ভাঙনরোধে প্রকল্প নেয়া হচ্ছে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারলে নদীর ভাঙন থেকে স্থায়ী সমাধান পাওয়া যাবে। সঙ্গে লাখ লাখ হেক্টর কৃষি জমি পাওয়া যাবে। নদী শাসন নয়, সঠিকভাবে নদী ব্যবস্থাপনা করার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
এ সময় পদ্মা সেতুর স্প্যানে ফেরির মাস্তুলের ধাক্কার প্রসঙ্গেও কথা বলেন প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘ধাক্কা লাগার কথা বলা হলেও সেই তথ্য ঠিক ছিল না। মাস্তুল নয়, সিগন্যাল লাইট নামানোর সময় ভিডিওটি ধারণ করা হয়েছিল। স্প্যানে ধাক্কা লাগেনি।
‘যে সাংবাদিক ভিডিওটি করেছিলেন আরেকটু যাচাই করে নিউজ করতে পারতেন। পদ্মা সেতুর নিরাপত্তার জন্য আমরা যে কোনো ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত আছি।’