বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

টেকনোলজিস্টের ওষুধে রাফির শরীরজুড়ে ফোসকা

  •    
  • ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ১৮:২১

চোখ ছাড়া পুরো শরীরজুড়ে ক্ষত দেখা দিয়েছে রাফির। ফোসকা পড়লে যেমন হয়, ঠিক সে রকম ক্ষত। শরীরের কোথাও কোথাও চামড়া উঠে গেছে। ঠোটের ওপরেও ক্ষতের কারণে শিশুটি কিছু খেতে পারছে না। টানা কয়েকদিন কথাও বলতে পারেনি সে। শরীরে তার মলম লাগিয়ে রাখা হয়েছে।

দাঁতের ব্যথা সারাতে গিয়ে টেকনোলজিস্টের দেয়া ওষুধ খেয়ে এক অস্বাভাবিক অসুস্থতায় ভুগছে সাত বছরের শিশু আব্দুর রাফি। গত বৃহস্পতিবার থেকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বিছানায় ছটফট করছে সে।

চোখ ছাড়া তার পুরো শরীরজুড়ে ক্ষত দেখা দিয়েছে। ফোসকা পড়লে যেমন হয়, ঠিক সে রকম ক্ষত। শরীরের কোথাও কোথাও চামড়া উঠে গেছে। ঠোটের ওপরেও ক্ষতের কারণে শিশুটি কিছু খেতে পারছে না। টানা কয়েকদিন কথাও বলতে পারেনি সে। শরীরে তার মলম লাগিয়ে রাখা হয়েছে।

রাজশাহীর কাঁটাখালীতে কথিত মেডিক্যাল টেকনোলজিস্টের পরামর্শে ওষুধ সেবন করে শিশুটি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

নিজেকে মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট দাবি করা ওই ব্যক্তির নাম মফিজুল হক। কাটাখালী বাজারে তার একটি চেম্বার আছে। সেখানে তিনি নিয়মিত রোগীদের চিকিৎসা দেন।

অভিযুক্ত মেডিক্যাল টেকনোলজিস্টের দাবি, রাজশাহী ইনস্টিটিউট অফ হেলথ টেকনোলজি (আইএইচটি) থেকে ২০০৭ সালে ডেন্টাল বিভাগ থেকে উত্তীর্ণ হয়েছেন তিনি। অবশ্য রাজশাহী আইএইচটির অধ্যক্ষ ফারহানা হক বলেছেন, ডেন্টাল বিভাগের মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট হিসেবে উত্তীর্ণ হলেও কেউ রোগী দেখতে পারেন না। তিনি শুধু একজন ডেন্টাল সার্জনকে সহায়তা করতে পারেন।

মফিজুল হকের চেম্বার আছে রাজশাহীর পবা উপজেলার কাটাখালী বাজারে। প্যাডে তিনি ব্যবস্থাপত্রও দেন। তার প্যাডে নিজের নামের নিচে পদবি হিসেবে লিখেছেন, মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট (ডেন্টাল), এফটি রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, বাংলাদেশ রাষ্ট্রীয় চিকিৎসা অনুষদ রেজিস্ট্রেশন নম্বর- ৭৬৫৩।

এই নিবন্ধন নম্বরের ব্যাপারে জানতে বাংলাদেশ রাষ্ট্রীয় চিকিৎসা অনুষদের সচিব জাহিদুর রহমান বলেন, ‘এ ধরনের কোনো নিবন্ধন নম্বর আমরা মেডিক্যাল টেকনোলজিস্টদের দেই না, যা দিয়ে তারা রোগী দেখতে পারেন। রোগী শুধু এমবিবিএস চিকিৎসক ও ডেন্টাল সার্জনরাই দেখতে পারেন। আর তাদের নিবন্ধন দেয় বাংলাদেশ মেডিক্যাল কাউন্সিল। তাই বলতেই পারি মফিজুলের ওই নিবন্ধন নম্বর ভুয়া।’

রাজশাহীতে টেকনোলজিস্টের দেয়া ওষুধ খেয়ে অসুস্থতায় ভুগছে সাত বছরের শিশু আব্দুর রাফি। ছবি:সংগৃহীত

শিশু রাফির দাঁতে পোকা লাগার কারণে আগস্ট মাসের শেষের দিকে মফিজুলের চেম্বারে নিয়ে গিয়েছিলেন তার বাবা আয়নাল হক। মফিজুল হক তখন একটি দাঁত তুলে ফেলেন। এরপর কয়েকদিনেও ব্যথা না কমার কারণে আয়নাল গত ২৬ আগস্ট রাফিকে নিয়ে আবার মফিজুলের চেম্বারে যান।

আয়নাল জানান, মফিজুল তার বাচ্চাকে এনলেপটিক নামের একটি সিরাপ লিখে দেন। দিনে দুবার এই ওষুধ খাওয়াতে বলা হয়। বাড়ি যাওয়ার পর আয়নাল রাত ৮টার দিকে রাফিকে সিরাপটি খাওয়ান। এর আধাঘণ্টা পরই সারাশরীর চুলকাতে শুরু করে। সকালের মধ্যেই শরীর তার ফুলে ফোসকা পড়ে যায়।

এরপর রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগে নিয়ে রাফির চিকিৎসা করানো হয়। তারপরও কোনো উন্নতি হয়নি; বরং দিন দিন অবস্থা খারাপের দিকে যেতে থাকে। তাই গত ৯ সেপ্টেম্বর তাকে হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে।

শিশুটির এ অবস্থা নিয়ে জানতে চাইলে মফিজুল হক বলেন, ‘এ রকম যে কেন হলো বুঝতে পারছি না। আর শিশুর বাবার সঙ্গে কথা হয়েছে। তিনি তো কাউকে বিষয়টি জানানোর কথা নয়।’ মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট ব্যবস্থাপত্র দিতে পারেন কি না সে প্রশ্ন তিনি এড়িয়ে যান। বাংলাদেশ রাষ্ট্রীয় চিকিৎসা অনুষদের ভুয়া নিবন্ধন নম্বর ব্যবহারের বিষয়েও মন্তব্য করেননি। তবে প্যাডে রাজশাহী মেডিক্যাল হাসপাতাল লিখে রাখার বিষয়ে তিনি দাবি করেন, সেখানে তিনি ইন্টার্নশিপ করেছেন। তাই লিখেছেন।

হাসপাতালের শিশু বিভাগের প্রধান বেলাল উদ্দিন বলেন, ‘‘বাচ্চাটাকে যে ওষুধ দেয়া হয়েছিল, সেটা খিঁচুনির। কিন্তু তার খিঁচুনি ছিল না। দাঁতব্যথা ছিল। সে কারণে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও দেখা দিয়েছে। একে ‘স্টভেন জনসন সিনড্রম’ বলে। বাচ্চাটার শারীরিক অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। এখন একটু ইমপ্রুভ করছে।’’

শিশুটির বাবা আয়নাল হক জানান, মঙ্গলবার তার ছেলের অপচিকিৎসার ব্যাপারে তিনি মামলা করার জন্য কাটাখালী থানায় গিয়েছিলেন। কাটাখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সিদ্দিকুর রহমান তাকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অভিযোগ দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। সেখানে অভিযোগ দিলে তিনি তাৎক্ষণিক ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ব্যবস্থা নিতে পারেন।

এ বিভাগের আরো খবর