‘সুন্দরের প্রতি আক্রোশ মনে হয় সবসময়ই একটু বেশি। ফুলভর্তি এই কৃষ্ণচূড়া গাছের জন্য গ্রীষ্মে পুরা ক্যাম্পাসটা লাল হয়ে যেত। বৃষ্টির পর পুরো রাস্তাটা লাল ফুলের রাস্তা হয়ে যেত। দেখতে কী যে সুন্দর লাগত! কার কী ক্ষতি করছিল, এই গাছ কে জানে। সব সুন্দর জিনিসগুলো কতগুলো মানুষ নামের প্রাণী উঠেপড়ে লাগে নষ্ট করার জন্য।’
কথাগুলো বলছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনে থাকা বিভাগ পালি অ্যান্ড বুদ্ধিস্ট স্টাডিজের ছাত্রী প্রিয়ন্তী কর্মকার। ভবনের সামনে শোভাবর্ধক গাছটি কেটে ফেলায় আক্ষেপ ঝরে তার কণ্ঠ থেকে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, কলা ভবনের সামনে দুটি ইউক্যালিপটাস গাছের সঙ্গে কাটা হয়েছে কৃষ্ণচূড়া গাছটিও।
এগুলোর বাইরে আর কোনো গাছ আপাতত কাটা হবে না বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
গাছ কাটা নিয়ে শিক্ষার্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করলেও প্রশাসন বলছে, এগুলো ঝুঁকিপূর্ণ। যেকোনো সময় ভেঙে পড়ত। তাই শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে গাছগুলো কেটে ফেলা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গত সোমবার থেকে কলাভবনের আশপাশের গাছগুলো কাটা শুরু হয়েছে।
ওই দিনই গাছ কাটার বিষয়টি শিক্ষার্থীদের নজরে আসে। এরপর থেকেই মূলত শিক্ষার্থীরা এসব কাটা গাছের ছবি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপে পোস্ট করে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের ছাত্র ওবায়দুর রহমান সোহান বলেন, ‘আমাদের ক্যাম্পাসের এমন অনেক গাছ রয়েছে, যাদের বয়স আমাদের দেশের বয়সের চেয়েও বেশি। এইসব বৃক্ষ দেশের ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের প্রতীক, তবে এই বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গা ছাড়া ভাব দেখাচ্ছে।’
এ শিক্ষার্থী আরও বলেন, ‘প্রায় সময়ই দেখি যে, গাছ কাটা হয় এবং প্রশাসন বলে যে, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার জন্য এসব করা হচ্ছে। তারা যদি শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে এতই চিন্তিত, তাহলে এখনও কেন বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দিতে পারছে না? এসব লোক দেখানো বুলির কোনো মানে হয় না।’
স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিউটের ছাত্র মো. মেহরাজ আক্ষেপ করে বলেন, ‘প্রশাসনের মনে হইছে গাছ কাটা দরকার। তাই তারা কাটতেছে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন গাছ কাটতে হলে ‘গাছ কাটা ও নিলাম কমিটি’র অনুমতি নিতে হয়। কলা ভবনের গাছগুলো কাটতে কমিটি অনুমোদন দিয়েছে।
কারণ হিসেবে কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক মিহির লাল সাহা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এই গাছগুলো মূলত ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। গাছগুলো রাস্তার উপরে ছিল। এ ছাড়া যেকোনো সময় গাছগুলো ভেঙে পড়তে পারত। তাই অপসারণ করা ছাড়া বিকল্প কিছু ছিল না, তবে এই জায়গায় আমরা অতি দ্রুত দ্রুতবর্ধনশীল গাছ লাগিয়ে দেবো।’
কৃষ্ণচূড়া গাছ কাটা নিয়ে মিহির লাল বলেন, ‘কৃষ্ণচূড়া গাছটা সোজা থাকার কথা, কিন্তু যেভাবে গাছটি হেলে পড়েছে আর গোড়াটাও নষ্ট হয়ে গিয়েছিল, ফলে যেকোনো সময় এটি উপড়ে যেত। পরে যখন একটা দুর্ঘটনা ঘটবে, তখন একটা বড় ক্ষতি হয়ে যাবে। তাই অপসারণ করতে হয়েছে।’
আপাতত আর কোনো গাছ কাটা হবে না জানিয়ে মিহির লাল বলেন, ‘গাছের প্রতি আমার জীবনের মতোই দরদ অনুভব করি। শিক্ষার্থীরা আমার ওপর বিশ্বাস রাখতে পারে।
‘কোথাও কোনো হেলদি গাছ অপসারণ করা হবে না। সন্তানতুল্য শিক্ষার্থীদের মঙ্গল এবং ভালো রাখার কামনায় আমি সবসময় সচেষ্ট।’