জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব থেকে পৃথিবীকে রক্ষায় বিশ্বের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টাকে জোরদার করতে নিজের দেয়া পাঁচ প্রস্তাবে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
কপ-২৬ সম্মেলনে বিশ্ব নেতারা এই প্রস্তাবের আলোকে বেশি দায়ী দেশগুলোকে জবাবদিহি, সাম্য ও ন্যায়বিচারের আলোকে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় ঐক্যবদ্ধ পরিকল্পনা গ্রহণে সচেষ্ট হবেন বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।
বুধবার জাতীয় সংসদে টেবিলে উত্থাপিত প্রশ্নোত্তর পর্বে এ কথা জানান সরকারপ্রধান।
সংসদকে তিনি বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব থেকে পৃথিবীকে রক্ষা করতে সারা বিশ্বের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় আমার উত্থাপিত পাঁচটি প্রস্তাব ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে।
‘এরই ধারাবাহিকতায়, বিশ্ব নেতারা আসন্ন কপ-২৬ সামিটে এই প্রস্তাবের আলোকে অধিকতর দায়ী দেশগুলোকে জবাবদিহি, সাম্য ও ন্যায়বিচারের আলোকে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় ঐক্যবদ্ধ পরিকল্পনা গ্রহণ করতে সচেষ্ট ও আন্তরিক ভূমিকা রাখবেন বলে আশা করা যাচ্ছে।’
কপ-২৬ এবং সিভিএফকে যৌথ প্রকল্প নেয়ার আহ্বান জানিয়ে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রীর পাঁচ প্রস্তাব হলো:
১. বৈশ্বিক গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধিকে ১.৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের নিচে রাখতে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন রোধে প্রতিটি দেশকে উচ্চাকাঙ্ক্ষী লক্ষ্য অনুসরণ করতে হবে।
২. উন্নত দেশগুলোকে সিভিএফ-ভি-২০ দেশের সবুজ পুনরুদ্ধারের সুযোগ সৃষ্টি এবং মূলধনের ব্যয় হ্রাসে অব্যাহত সমর্থন ও বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণে উৎসাহিত করতে হবে।
৩. তহবিলের প্রবাহ অবশ্যই অনুমানযোগ্য ভারসাম্যপূর্ণ, উদ্ভাবনী ও বর্ধনশীল হতে হবে। উন্নয়ন অংশীদার ও আন্তর্জাতিক আর্থিক সংস্থাগুলো তহবিল বরাদ্দ ও বিতরণে ব্যবহারকারীবান্ধব প্রক্রিয়া গ্রহণ করবে এবং বিভিন্ন জলবায়ু তহবিলের মধ্যে সমন্বয় করতে হবে।
৪. জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ জলবায়ু রক্ষায় ধনী দেশগুলোকে অবশ্যই বিদ্যমান অর্থনৈতিক দূরত্ব ঘুচিয়ে সিভিএফ-ভি-২০ দেশগুলোর সহায়তায় এগিয়ে আসতে হবে।
৫. চূড়ান্তভাবে প্রতিটি ঝুঁকিপূর্ণ দেশকে আমাদের মুজিব ক্লাইমেট প্রসপারিটি প্ল্যানের মতো একটি জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা গ্রহণের কথা সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করতে পারে।
সিভিএফ-ভি-২০ গ্রুপের ৪৮ সদস্য রাষ্ট্র বৈশ্বিক নিঃসরণের মাত্র ৫ শতাংশের জন্য দায়ী উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অথচ তারাই এই মানবসৃষ্ট দুর্যোগে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। এ ছাড়া লাখ লাখ মানুষের জীবন-জীবিকাকে ক্ষতিগ্রস্ত করার মাধ্যমে চলমান কোভিড-১৯ মহামারি নতুন করে আরও দুর্ভোগ সৃষ্টি করেছে।’
ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের চেয়ারপারসন হিসেবে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত স্বল্পোন্নত দেশগুলোর পক্ষ হয়ে রাখা প্রস্তাব জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বাংলাদেশের বলিষ্ঠ নেতৃত্বকে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছে বলেও মনে করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় সারা বিশ্ব যখন ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার জন্য কপ-২৬ সামিটের দিকে তাকিয়ে আছে, তার আগেই উন্নত দেশগুলোর প্রতি বাংলাদেশ প্রস্তাবিত সুনির্দিষ্ট এই পাঁচটি প্রস্তাব জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি মোকাবিলায় স্বল্পোন্নত কিন্তু সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর জন্য আশা জাগিয়েছে।’
ওই সম্মেলনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও উন্নত দেশগুলোকে তাদের ঐতিহাসিক দায়িত্ব এবং নৈতিক ও আইনি বাধ্যবাধকতা পালনসহ চলমান, ভবিষ্যতের সংকট মোকাবিলায় ঐক্য গড়ে তুলে সহযোগিতা বাড়ানোর আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।