পড়ার টেবিলে সাজানো আছে বই, আলনায় স্কুলের ইউনিফর্ম। তবে এগুলো আর কোনো কাজে আসবে না রিচি ও রিয়ার।
খালে গোসলে গিয়ে দুই বোনেরই একসঙ্গে মৃত্যু হয়েছে। এমন মৃত্যু মেনে নিতে পারছে না পরিবার। সান্ত্বনা জানাতে এসে স্বজনরাও কান্নায় ভেঙে পড়ছেন।
১৪ বছরের সাদিয়া আক্তার রিচি ছিল ভাওয়াল মির্জাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ও নয় বছরের রিয়া আক্তার শম্পা মডেল অ্যাকাডেমির তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী ছিল।
তাদের বাড়ি গাজীপুর সদর উপজেলার ভাওয়াল মির্জাপুর ইউনিয়নের পানশাইল গ্রামে।
দুই বোনের মা আকলিমা বেগম বলেন, ‘দুই মেয়েকে কখনও একা কোথাও যেতে দেই নাই। আত্মীয়দের বাড়িতে কিংবা মার্কেটে গেলেও তাদের সঙ্গে যেতাম। সোমবার দুপুরে বাড়ির পাশের খালে গোসল করতে যাওয়ার বায়না ধরে দুই মেয়ে। আমি বারবার তাদের বারণ করেছিলাম।
‘খালের পানি আমার দুইটা নয়নের মনিকে কেড়ে নিয়ে গেছে। আমার তো আর কেউ রইল না৷ আমি কীভাবে বাঁচব?’
বাবা সোলায়মান মিয়া জানান, মেয়েদের বড় মামা একজন প্রকৌশলী। ছোটবেলা থেকেই মামাকে দেখে প্রকৌশলী হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন রিচি। রিচির দেখাদেখি ছোট বোন রিয়াও স্বপ্ন দেখতেন প্রকৌশলী হওয়ার।
দুই বোন লেখাপড়ায় ছিল খুবই মনোযোগী। প্রতিটি শ্রেণিতে তারা প্রথম হতো। রিচি সমাপনী পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছে। নবম শ্রেণিতে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হয়েছিল।
- আরও পড়ুন: ৩ কিশোরীর পর খালে ভাসল শিশুর মরদেহ
স্থানীয় দোকানি অতল চন্দ্র দাস বলেন, ‘ছোট মেয়েটা চঞ্চল প্রকৃতির হলেও বড় মেয়ে রিচি ছিল খুবই শান্ত। এভাবে মেয়ে দুইটা দুনিয়া থেকে হারায়ে যাবে ভাবিনি। বারবার তাদের চেহারা ভেসে উঠছে।’
গত সোমবার দুপুর দেড়টার দিকে প্রতিবেশীদের সঙ্গে বাড়ির পাশের লবণদহ খালে গোসল করতে যায় দুই বোন। হঠাৎ স্রোতের টানে ভেসে যেতে থাকে রিচি। তাকে বাঁচাতে পানিতে ঝাঁপ দেয় রিয়া। তাদের বাঁচাতে ডুবে যায় প্রতিবেশী দুই কিশোরী আইরিন আক্তার ও মায়া আক্তারও।
স্থানীয় লোকজন এক ঘণ্টা পর রিচির মরদেহ উদ্ধার করে। ফায়ার সার্ভিস বিকেল সোয়া ৪টার দিকে উদ্ধার করে আইরিন ও মায়ার মরদেহ। এরপর মঙ্গলবার বিকেলে ভেসে ওঠে রিয়ার মরদেহ।
আইরিন ও মায়ার বাড়িও শোকে স্তব্ধ হয়ে আছে। তারা কোনো গণমাধ্যমকর্মীর সঙ্গে কথা বলতে চাননি।