মোর গরুলাও গেল, বাড়িও গেল। মোর আর থাকার কুনু জায়গা নাই। কথাগুলো ঠাকুরগাঁও হরিপুর উপজেলার আলিয়ারা খাতুনের।
হরিপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল করিম ও তার শ্যালক তানভীন হাসানের বিরুদ্ধে টাকা নিয়েও আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর থেকে বের করে দেয়ার অভিযোগ এনে সাংবাদিকদের কাছে কথাগুলো বলেন তিনি।
বিচারের দাবিতে মঙ্গলবার দুপুরে সাংবাদিক খুঁজতে ঠাকুরগাঁও প্রেসক্লাবে যান আলিয়ারা। সেখানে ঘর থেকে বের করে দেয়া ছাড়াও শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ করেন তিনি।
আলিয়ারা জানান, তার বাবার বাড়ি হরিপুরের জীবনপুর কুশলগাঁও এলাকা। প্রায় দুই বছর আগে স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদ হয় তার। পরে এক সন্তান নিয়ে সরকারি খাস জমিতে তার দুলাভাইয়ের নির্মাণ করা বাড়িতে আশ্রয় নেন। ভূমিহীনদের জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘর দেয়া হবে জানতে পেরে যোগাযোগ শুরু করেন তিনি।
তার অভিযোগ, নিজের বলতে তার সম্বল ছিল দুটি গরু। খাস জমিতে থাকায় তিনি চাচ্ছিলের মাথা গোঁজার একটি নিশ্চিত ঠিকানা। সেই আশাতেই নিজের শেষ সম্বল বিক্রি করে ৬০ হাজার টাকা ইউএনওর শ্যালককে দিয়ে তিনি আশ্রয়ণ প্রকল্পের একটি ঘরে উঠেন। তবে সেখানে ওঠার চার মাস পরই তাকে বের করে দেয়া হয়।
টাকা জোগাড় করতে তাকে গরু বিক্রির পরামর্শ দেয় আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণ কাজ তদারককারী তরিকুল এবং উপজেলা ভূমি অফিসের কর্মচারী মানিক। তাদের কথা কথা মতো সেই টকা সরাসরি ইউএনওর শ্যালক তানভীন হাসানকে দেন জানিয়ে আলিয়ারা বলেন, টাকা দেয়ার পর তাকে তারবাগান এলাকার আশ্রয়ণ প্রকল্পের ২ নম্বর ঘরটির দখল বুঝিয়ে দেয়া হয়। সেই ঘরেই প্রায় চার মাস ধরে তিনি সন্তানকে নিয়ে বসবাস করছিলেন।
তিনি অভিযোগ করেন, ঘরে উঠার পর তরিকুল ও মানিক তার কাছে ফের ২০ হাজার টাকা দাবি করেন। টাকা না দিলে ঘর থেকে বের করে দেবে বলে হুমকিও দেয়। সেই টাকা দিতে না পারায় গত ১ সেপ্টেম্বর তাকে ঘর থেকে বের করে দেয়া হয়।
এ বিষয়ে গত ৫ তারিখ ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন জানিয়ে আলিয়ারা বলেন, অভিযোগের বিষয়টি জানার পর সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তাকে নিজ কার্যালয়ে ডেকে পাঠান ইউএনও আব্দুল করিম। সেখানে পুলিশ ও নিজ কার্যালয়ের কর্মচারীদের দিয়ে তাকে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করেন তিনি। এ ছাড়া তাদের কথা মতো জবানবন্দি না দিলে বড় ধরনের ক্ষতির হুমকিও দেন।
তিনি অভিযোগ করেন, ওই সময় জোর করে তারা আলিয়ারার কাছ থেকে তাদের মতো করে স্বীকারোক্তিমূলক ভিডিও ধারণ করেন এবং সাদা কাগজে সই নেন।
এরপর সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা চেয়ে মঙ্গলবার প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের কাছে সাহায্য চান আলিয়ারা।
এ বিষয়ে ইউএনওর শ্যালক তানভিন হাসানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এই বিষয়ে কিছু বলতে অস্বীকৃতি জানান।
হরিপুর উপজেলার ইউএনও আব্দুল করিম বলেন, ‘ওই নারী অনেক খারাপ ও মিথ্যে কথা বলে। তাকে শারীরিক নির্যাতন করা হয়নি। আমার পা জড়িয়ে ধরলে আমার লোকেরা তাকে টেনে সরিয়ে দিয়েছে।
‘আর আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে টাকা লেনদেনের কোনো সুযোগ নেই। সে যদি টাকা দিয়ে থাকে তাহলে এই দায় তার নিজের। লিখিত অভিযোগ পেলে বিষয়টি খোঁজ নিব।’