ইভ্যালির বিরুদ্ধে যত দ্রুত সম্ভব আইনি পদক্ষেপে যাওয়ার সুপারিশ করেছে ই-কমার্স বিষয়ক জাতীয় কমিটি।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে মঙ্গলবার প্রায় দেড় ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক শেষে এমন সিদ্ধান্তের কথা জানান ডিজিটাল ই-কমার্স সেলের প্রধান ও মন্ত্রণালয়ের ডব্লিউটিও সেলের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মো. হাফিজুর রহমান।
ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, ইভ্যালি ইস্যুতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আর সময় নিতে চায় না। এ বিষয়ে কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী আইনি পদক্ষেপ হিসেবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে চিঠি দেয়া হবে। তবে আইনি পদক্ষেপ হিসেবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ইভ্যালির বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগে মামলা করবে কিনা সে বিষয়ে মন্ত্রণালয় নিজেদের মতো করে সিদ্ধান্ত নিয়ে পরবর্তীতে জানাবে।
সর্বসম্মত পর্যালোচনা ও মতামতের ভিত্তিতে বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়।
বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন মো. হাফিজুর রহমান। মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ছাড়াও বৈঠকে ভার্চুয়ালি যোগ দেন ব্যবসাবিষয়ক আইনজীবী ব্যারিস্টার তানজীব উল আলমসহ এনবিআর, বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, ই-ক্যাব সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা।
ইভ্যালিসহ ১০ ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানে থার্ড পার্টি অডিটর নিয়োগ করে প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রকৃত আর্থিক অবস্থা জানতে আলাদা নিরীক্ষা করার সুপারিশ জানিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ওই চিঠিতে ইভ্যালি ছাড়া অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো হলো ধামাকা, ই-অরেঞ্জ, সিরাজগঞ্জ শপ, আলাদীনের প্রদীপ, কিউকম, বুমবুম, আদিয়ান মার্ট, নিউ ডটকম ডটবিডি ও আলেশা মার্ট।
হাফিজুর রহমান বলেন, প্রাথমিকভাবে ইভ্যালি ইস্যুতে আইনি পদক্ষেপে গেলেও পরবর্তীতে ই-অরেঞ্জ, ধামাকা, বুমবুম, সিরাজগঞ্জ শপ, আলাদিনের প্রদীপ, কিউ কম, আদিয়ান মার্ট, নেট ডটকম এবং আলিশা মার্টের একই পদক্ষেপে যাবে মন্ত্রণালয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সুপারিশ অনুযায়ী অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোতে থার্ড পার্টি অডিটর নিয়োগ প্রসঙ্গে হাফিজুর রহমান জানান, ই-কমার্স সংক্রান্ত কমিটি মতামত দিয়ে বলেছে থার্ড পার্টি অডিটর নিয়োগের এখতিয়ার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নেই। কারণ মন্ত্রণালয় থেকে সব প্রতিষ্ঠান নিবন্ধন বা ব্যবসায়িক লাইসেন্স নেয়নি।
তিনি বলেন, ‘তবে গ্রাহকের স্বার্থ রক্ষায় সংকটকালে সরকার অনেক কিছুই সিদ্ধান্ত নেয়। সেক্ষেত্রে মন্ত্রণালয় তার লিগ্যাল ফরম্যাট আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখবে। প্রয়োজনে আদালতের অনুমতি নিয়ে থার্ড পার্টি অডিটর দিয়ে কোম্পানিগুলোর প্রকৃত আর্থিক চিত্র বের করে আনা হবে।’
ইভ্যালির বিরুদ্ধে প্রতারণার ধরন কী, এমন প্রশ্নের জবাবে হাফিজুর বলেন, তারা গ্রাহকের কাছ থেকে আগাম টাকা নিয়ে নির্দিষ্ট সময়ে পণ্য দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে আজ পর্যন্ত পণ্য দেয়নি। এটা একটি প্রতারণা। মার্চেন্টের পাওনাও তারা পরিশোধ করেনি। তা ছাড়া, তিন দফায় মন্ত্রণালয় ইভ্যালির কাছ থেকে আর্থিক বিবরণী সংক্রান্ত যে তথ্য চেয়েছে তার জবাব তারা দিয়েছে; কিন্তু ইভ্যালির দেয়া জবাবে মন্ত্রণালয়ের হাতে থাকা তথ্য-উপাত্তের সঙ্গে গরমিল রয়েছে। তারা ভুল তথ্য দিয়েছে। এটাও এক ধরনের প্রতারণা।’
তাহলে গ্রাহকের পাওনা উদ্ধারের প্রক্রিয়াটি কী হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি আইনি পদক্ষেপে যেতে হবে। তবে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহক ভোক্তা অধিকার আইনে মামলা করতে পারেন। সংক্ষুব্ধরা ফৌজদারি আইন ও যেকোনো থানায় মামলা করতে পারেন। আর মন্ত্রণালয় মামলা করবে কি না সেটি নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্তের বিষয়। মন্ত্রণালয়ের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী বৈঠকে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এ বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন দায়িত্বশীল এমন একাধিক সূত্র জানায়, বৈঠকে ভার্চুয়ালি অংশ নিয়ে ব্যারিস্টার তানজীব নিজের মতামত তুলে ধরে বলেন, ইভ্যালি ইস্যুতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে আর দায়িত্ব নেয়া উচিত হবে না। ইভ্যালিকে বর্তমান ধারায় চলতে দিলে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হবে। তাই সময় নষ্ট না করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার দায়িত্ব ল অ্যান্ড এনফর্সমেন্ট এর হাতে ছেড়ে দেয়া উচিত।
তিনি বলেন, মন্ত্রণালয়ের এখন উচিত আইনি পদক্ষেপ নেয়া। সিদ্ধান্তটি আদালতের হাতে ছেড়ে দিলে ভালো হবে। কারণ, আদালতে মামলা একদিনে শেষ হয় না। সেক্ষেত্রে আদালত প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেবে এবং গ্রাহকের পাওনা অর্থ কীভাবে উদ্ধার হবে তার একটি রূপরেখা নিশ্চয়ই দেবেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরামর্শ অনুযায়ী থার্ড পার্টি অডিটর নিয়োগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, থার্ড পার্টি অডিটর নিয়োগের এখতিয়ার মন্ত্রণালয়ের নেই। কোম্পানি আইনও সেটি অ্যালাও করেনা।
সূত্র আরও জানায়, বৈঠকে কয়েকজন বিশেষজ্ঞ ব্যক্তি তাদের মতামতে বলেছেন, ইভ্যালি এখন ডেসপারেট। এ প্রতিষ্ঠানটিকে আর সুযোগ দেয়ার স্কোপ নেই। তারা যথেষ্ট সময় নিয়েছে, কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। এখন অন্যরাও চাচ্ছে। ইভ্যালি সময় পাওয়ায় অন্যরা উৎসাহিত হচ্ছে। ই-কমার্স খাতের প্রতারণা এখন সময়ের সবচেয়ে বড় ইস্যু। সরকারের উচিত নয় কারো প্রতি দক্ষিণা না দেখিয়ে দ্রুত অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ এ যাওয়া। শক্ত হাতে দমন করা। তা না হলে ই-কমার্স খাত ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে চলে যাবে।