ডিজিটাল উপায়ে জনসংখ্যা হালনাগাদের মাধ্যমে দেশের প্রকৃত জনসংখ্যা জানার অপেক্ষা আরও বাড়ছে।
জনশুমারির কাঠামো নিয়ে আয়োজিত এক কর্মশালায় মঙ্গলবার এ কথা জানান পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।
মন্ত্রী বলেন, ‘দেশের প্রকৃত মানুষের সংখ্যা কত তা জানতে শুমারি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু করোনা তা পিছিয়ে দিচ্ছে। অক্টোবরে শুরুর কথা থাকলেও তা হচ্ছে না। এখন প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি দিয়ে নতুন করে একটা তারিখ ঠিক করা হবে।’
এ বছরের মধ্যেই শুমারি শুরুর আশা করেন মন্ত্রী।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) সূত্রে জানা যায়, প্রথমবারের মতো শুমারির তথ্য ডিজিটালি সংরক্ষণ করতে প্রকল্পের আওতায় ৩ লাখ ৯৫ হাজার ট্যাব কিনতে একটি প্রস্তাব সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে তোলা হয়।
ডিজিটাল উপায়ে জনশুমারি ও গৃহগণনা-২০২১ প্রকল্পের আওতায় প্রায় চার লাখ ট্যাব কেনার প্রস্তাব করা হয়। কিন্তু দরপত্রে ট্যাবগুলোর দাম বেশি হওয়ায় সেটি বাতিল করে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। ট্যাব হাতে না পাওয়ায় নির্ধারিত সময়ে সম্ভব হবে না হালনাগাদের কার্যক্রম।
দরপত্র দেখে বেশি দামে বিবিএসের ট্যাব কেনার সমালোচনা করে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম। এর পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে কমিটি ফের দরপত্রের আহ্বান করে।
এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব শামসুল আরেফিন বলেন, বিবিএস বেশি দামের দরদাতার কাছ থেকে ট্যাব কেনার সুপারিশ করেছিল। তাই এটি বাতিল করে রিটেন্ডারের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ডিজিটাল শুমারির জন্য ৩ লাখ ৯৫ হাজার ট্যাব এবং ৭২টি এসি কিনতে দরপত্র আহ্বান করে পরিসংখ্যান ব্যুরো। এতে দুটি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়।
একটি প্রতিষ্ঠান ৫৪৮ কোটি ৭৩ লাখ ১৭ হাজার ৭০ টাকায় দর করে। অন্য প্রতিষ্ঠান ৪০২ কোটি টাকায় দরপত্রে অংশ নেয়।
ই-জিপির নিয়ম অনুযায়ী সর্বনিম্ন দরদাতা কাজ পাওয়ার ক্ষেত্রে এগিয়ে থাকে। কিন্তু বিবিএস বেশি দরের কোম্পানি থেকে ট্যাব কেনার সিদ্ধান্ত নিয়ে কমিটিতে প্রস্তাব পাঠায়।
এদিকে দেরিতে শুমারি হওয়ার বিষয়ে বিবিএস জানায়, নতুন দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে ট্যাব হাতে আসার পর মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। এতে প্রায় মাসখানেক সময় লাগতে পারে।
সব মিলিয়ে আগামী জানুয়ারিতে কাজ শুরু করা যাবে। তবে ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে শুরুর চেষ্টা থাকবে বলে জানায় প্রতিষ্ঠানটি।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে সপ্তাহব্যাপী জনশুমারি ও গৃহগণনার কথা ছিল। করোনার কারণে তারিখ পিছিয়ে ২৫ থেকে ৩১ অক্টোবর নির্ধারণ করা হয়।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো জানায়, ২০২১ সালের মধ্যেই শুমারি পরিচালনার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তবে করোনা পরিস্থিতির অবনতি হলে এটি ২০২২ সালেও চলে যেতে পারে।
করোনা পরিস্থিতিতে বাংলাদেশসহ কয়েকটি দেশ জনশুমারি পেছানোর সিদ্ধান্ত নিলেও কিছু দেশ এ সংকটের মধ্যেই কাজটি সম্পন্ন করেছে। যুক্তরাষ্ট্রে এপ্রিলে করোনার তীব্র সংকট চলাকালেই জনশুমারির কাজ করা হয়। সিঙ্গাপুরে হয়েছে জুনে। ইন্দোনেশিয়ায় জুলাইয়ে। দেশগুলোতে ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে শুমারি করা হয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা যায়, জনশুমারি ও গৃহগণনা প্রকল্পে খরচ ধরা হয়েছে ১ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ব্যয় হবে ১ হাজার ৫৭৮ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। বৈদেশিক সহায়তা আসবে ১৮৩ কোটি ১১ লাখ টাকা।
এবারের শুমারিতে আইসিআর প্রশ্নপত্রের পাশাপাশি মাল্টি মোড (ট্যাব, পিক অ্যান্ড ড্রপ, টেলিফোন ইন্টারভিউ) পদ্ধতিতে তথ্য সংগ্রহ করা হবে। এ ছাড়া এবারই প্রথম বিদেশে অবস্থানকারী প্রবাসী বাংলাদেশিদের তথ্য সংগ্রহ করা হবে।
জনশুমারি ও গৃহগণনা চারটি ধাপে অনুষ্ঠিত হবে।
পর্যায়-১: এর আওতায় শুমারির ব্লক এলাকা প্রণয়ন, জিআইএস পদ্ধতি ব্যবহার করে দেশের সব এলাকা ম্যাপ এবং জিও কোডের আওতায় স্বতন্ত্র শনাক্তকরণ হবে।
পর্যায় ২: এর আওতায় দেশের সব খানা, ব্যক্তি ও আবাসন ইউনিট গণনা করা হবে।
পর্যায় ৩: এর আওতায় শুমারি-পরবর্তী জরিপ পরিচালনা ও শুমারির গুণগত মান পরিমাপ করা হবে।
পর্যায় ৪: এর আওতায় আর্থ-সামাজিক ও জনমিতিক জরিপ পরিচালনা, খানা ও জনসংখ্যা সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করা হবে।
২০১১ সালের সর্বশেষ (পঞ্চম আদমশুমারি) হিসাব অনুযায়ী, দেশের মোট জনসংখ্যা ছিল ১৫ কোটি ২৫ লাখ।