ময়মনসিংহের গৌরীপুরের বেকারকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন ভবন নির্মাণ শেষে হস্তান্তরের আগেই ফাটল দেখা দিয়েছে মেঝেতে। এতে শিক্ষার্থী-অভিভাবকসহ শিক্ষকরা ক্ষোভ জানিয়েছেন। তাদের অভিযোগ নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করেছেন ঠিকাদার।
স্থানীয় লোকজন জানায়, নির্মাণের শুরু থেকেই নিম্নমানের ইট, বালু, সিমেন্ট দিয়ে দায়সারা কাজ করেছে ঠিকাদার। বাল্ব থেকে শুরু করে দরজা-জানালা সবই নিম্নমানের।
উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ১১ জানুয়ারি পিইডিপি-৩ প্রকল্পের আওতায় ওই বিদ্যালয়ের নতুন ভবন নির্মাণে প্রাক্কলিত বরাদ্দ মূল্য ছিল ৮৪ লাখ ৮০ হাজার ৯৮৭ টাকা। বিপরীতে চুক্তিমূল্য ধরা হয় ৮২ লাখ ৯৭ হাজার ৬৮৮ টাকা।
টেন্ডারের মাধ্যমে কাজটি পায় নেত্রকোনা জেলার পূর্বধলা উপজেলার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স তালুকদার ট্রেডার্স।
বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা রহিম উদ্দিন বলেন, ‘নির্মাণকাজের শুরু থেকেই নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে কাজ করা হয়েছে। বিষয়টি একাধিকবার ঠিকাদারকে জানানো হলেও তিনি পাত্তা দেননি। এই অনিয়মের তদন্ত দাবি করছি।’
একই অভিযোগ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুবিতা রাণী দাসের। তিনি বলেন, ‘করোনার কারণে নিয়মিত বিদ্যালয়ে যাওয়া হয়নি। এই সুযোগে নিম্নমানের মালপত্র দিয়ে কাজ করেছে ঠিকাদার। এলজিইডি কর্মকর্তা ও ঠিকাদারকে বিষয়টি জানিয়েছি। তারা আমার কথায় কর্ণপাত করেননি।’
নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন উপজেলা এলজিইডির উপসহকারী প্রকৌশলী সুলতান মাহমুদ।
তিনি বলেন, ‘নির্মাণকাজের শুরুতে সামগ্রীগুলোর মান যাচাই করা হয়েছে। এই কাজে অনিয়ম হয়েছে এমন অভিযোগ শুনে ভবনটি দেখতে গিয়েছিলাম। ভবনে বিদ্যুতের কাজ ও সিঁড়ির প্লাস্টারের কাজে সমস্যা আছে। ভবনের মেঝেতে কিউরিং পর্যাপ্ত না হওয়ায় ফাটল দেখা দিয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ঠিকাদার ৭২ লাখ টাকার বিল নিলেও এখনও প্রায় ১১ লাখ টাকা বকেয়া আছে। কাজ বুঝে নিয়ে বাকি বিল পরিশোধ করা হবে।’
ভবন নির্মাণে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ মানতে নারাজ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স তালুকদার ট্রেডার্স।
প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক সাইফুল ইসলাম তালুকদার বলেন, ‘যতটুকু সম্ভব ভালো সামগ্রী দেয়ার চেষ্টা করেছি। তবুও কিছু ত্রুটি থাকলে সমাধান করা হবে।’
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হাসান মারুফ বলেন, ‘ইতিমধ্যে ঘটনাটি শুনেছি। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
স্থানীয় সরকার অধিদপ্তর (এলজিইডি) ময়মনসিংহের নির্বাহী প্রকৌশলী শহীদুজ্জামান খান বলেন, ‘দায়িত্বপ্রাপ্তরা তদারকিতে গাফিলতি করেছেন। তা না হলে কাজ শেষে এমন অভিযোগ ওঠার কথা নয়। এর দায় তাদেরই নিতে হবে।’