দেশি এয়ারলাইনসগুলোর সংগঠন অ্যাভিয়েশন অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন (এওএবি) মাসিক সারচার্জ ১ শতাংশে নামিয়ে আনার দাবি জানিয়েছে।
যৌক্তিক হারে সারচার্জ নির্ধারনের জন্য এওএবি রোববার চিঠি দিয়েছে বেসরকারি বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলীকে। মাত্রাতিরিক্ত সারচার্জের কারণে অনেক এয়ারলাইনস দেনা শোধ করতে পারছে না বলেও উল্লেখ করা হয়েছে সে চিঠিতে।
এওএবির সেক্রেটারি জেনারেল মফিজুর রহমানের সই করা চিঠিতে তুলে ধরা হয়েছে বেসরকারি এয়ারলাইনসের দুর্দশার চিত্র। বলা হয়েছে, মাত্রাতিরিক্ত সারচার্জের কারণে অনেক এয়ারলাইনস দেনা শোধ করতে পারছে না। দেনার চাপে দেউলিয়া হচ্ছে। অন্য দেশের তুলনায় বেবিচকের সারচার্জের হার বহুগুণ বেশি।
এওএবি জানায়, নির্দিষ্ট সময়ে বকেয়া দিতে ব্যর্থ হলে এয়ারলাইসগুলোর ওপর প্রতি ৩০ দিনে ৬ শতাংশ সারচার্জ আরোপ করে ২০১৩ সালের ৭ জুলাই প্রজ্ঞাপন জারি করে বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয়।
এ অবস্থায় কোনও এয়ারলাইনস এক বছর বকেয়া দিতে না পারলে তাকে মূল বকেয়ার ওপর বছরে ৭২ শতাংশ পর্যন্ত সারচার্জ দিতে হচ্ছে। এই সরচার্জকে অযৌক্তিক দাবি করে অনেক দিন ধরেই প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে এয়ারলাইনসগুলো।
চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, বিশ্বের যেকোনো অর্থনৈতিক বিপর্যয়, জ্বালানি মূল্যের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি বা মহামারির কারণে এভিয়েশন ব্যবসা প্রথমেই বিরাট ঝুঁকিতে পড়ে। চলমান করোনা মহামারিতে এ অবস্থা আরও ঘনীভূত হচ্ছে, যার কারণে বাংলাদেশের এভিয়েশন খাত অত্যন্ত সংকটজনক অবস্থায় রয়েছে। এয়ারলাইনসগুলো তাদের পাওনা সময়মতো পরিশোধ করতে পারছে না, এরপর অতিরিক্ত সারচার্জ পরিস্থিতি আরও সংকটপূর্ণ করে তুলছে।
চিঠিতে কয়েকটি দেশের বার্ষিক সারচার্জের চিত্র তুলে ধরা হয়।
এতে বলা হয়েছে, ভারতে সারচার্জ ১২ থেকে ১৮ শতাংশ, মালয়েশিয়ায় ১২ শতাংশ, ওমানে ১০ শতাংশ এবং পাকিস্তানে মাত্র ২ শতাংশ। এ অবস্থায় বাংলাদেশে সারচার্জ মাসিক ৬ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১ শতাংশে নামিয়ে আনার দাবি জানিয়েছে এওএবি।
দেশি এয়ারলাইনসের কাছে সারচার্জ সহ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের পাওনার একটি হিসাবও তুলে ধরেছে এওএবি।
এতে বলা হয়েছে, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের কাছে মোট পাওনার পরিমাণ ৪ হাজার ৩১৫ কোটি ১১ লাখ টাকা। এর মধ্যে মূল পাওনার পরিমাণ ৯২০ কোটি ১৭ লাখ টাকা। বাকি ৩ হাজার ৩৯৪ কোটি ৯৪ লাখ টাকাই সারচার্জ।
বন্ধ হয়ে যাওয়া জিএমজি এয়ারলাইনসের কাছে বেবিচকের পাওনা ৩৬৮ কোটি ২৯ লাখ টাকা। এর মধ্যে মূল পাওনার পরিমাণ ৫৬ কোটি ৯৮ লাখ টাকা, বাকি ৩১১ কোটি ৩০ লাখ টাকাই সারচার্জ ও অন্যান্য।
ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের কাছে বেবিচকের পাওনা ৩৫৫ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে মূল পাওনার পরিমাণ ৫৬ কোটি ৮৮ লাখ টাকা, বাকি ২৯৮ কোটি ৪৯ লাখ টাকা সারচার্জ ও অন্যান্য।
রিজেন্ট এয়ারের কাছে বেবিচকের পাওনা ২৮৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে মূল পাওনার পরিমাণ ১৩৬ কোটি ১৮ লাখ টাকা, বাকি ১৪৭ কোটি ২০ লাখ টাকাই সারচার্জ ও অন্যান্য।
দেশে প্রায় দুই যুগে ১০টি বেসরকারি এয়ারলাইনস বিভিন্ন সময়ে যাত্রা শুরু করেছে। কিন্তু টিকে আছে মাত্র দুটি। এ সময়ের মধ্যে একে একে পাখা গুটিয়েছে অ্যারো বেঙ্গল, এয়ার পারাবত, রয়্যাল বেঙ্গল, এয়ার বাংলাদেশ, জিএমজি এয়ারলাইন্স, বেস্ট এয়ার ও ইউনাইটেড এয়ার।
গত বছরের মার্চে করোনা সংক্রমণ শুরুর পর থেকে ফ্লাইট স্থগিত রেখেছে রিজেন্ট এয়ার। তাদের ফ্লাইটে ফেরা অনেকটাই অনিশ্চিত।
এখন ফ্লাইটে না থাকা এয়ারলাইনসগুলোর মধ্যে রিজেন্ট, জিএমজি ও ইউনাইটেড আন্তর্জাতিক রুটেও ফ্লাইট চালাত।