শেরপুরের নকলায় কথিত ‘জিনের বাদশাহ’র খপ্পরে পড়ে সর্বশান্ত হওয়ার অভিযোগে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন এক নারী।
নকলা থানায় রোববার এই ডায়েরি করেন বানেশ্বরদী ইউনিয়নের বানেশ্বরদী গ্রামের হবিরণ বেগম।
জিডিতে তিনি উল্লেখ করেন, ১ সেপ্টেম্বর রাতে তার ফোনে একটি অচেনা নম্বর থেকে কল আসে। রিসিভ করার পর অপরপ্রান্ত থেকে এক ব্যক্তি নিজেকে মসজিদের ইমাম বলে পরিচয় দেয়। এর পর তিনি বলেন, তার একটি জায়নামাজ প্রয়োজন। এ জন্য ৭০০ টাকা লাগবে, যা বিকাশের মাধ্যমে দিতে বলা হয়। নেকির আশায় হবিরন টাকা বিকাশ করেন।
দুদিন পর ৩ সেপ্টেম্বর তার কাছে আবার ফোন আসে। এবার হবিরনকে ভয় দেখানো হয়। ‘জিনের বাদশাহ’ পরিচয়ে বলা হয়, তার ছেলে ও নাতির অনেক বিপদ। তার কথামতো কাজ করলে বিপদ কেটে যাবে। শুধু তাই নয়, পাবেন স্বর্ণের কলস ও অলংকার। আর না শুনলে তার পরিবারের লোকজন মারা যাবে।
তখন তাকে বলা হয়, ২৮ হাজার ৬০০ টাকা বিকাশ করতে। প্রিয়জন হারানোর ভয় আর স্বর্ণের লোভে ছেলের জমানো টাকা তিনি বিকাশ করেন।
পরদিন আবারও ফোনে তার কাছে টাকা চাওয়া হয়। বালামসিবত দূর করার পাশাপাশি সংসারে স্বচ্ছলতা ফেরাতে এবার তার কাছে দাবি করা হয় ৫১ হাজার ৪০০ টাকা। ধারদেনা করে সেই টাকাও বিকাশ করেন হবিরন। টাকা পাঠানোর পর সেই নম্বরটি বন্ধ করে দেয়া হয়।
হবিরনের ছেলে সাদ্দাম হোসেন জানান, জমানো টাকা হারিয়ে মা পাগলের মতো হয়ে গেছেন। তাকে নিয়ে এখন দুচিন্তায় আছেন। প্রতারককে দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জানান তিনি।
শুধু হবিরন নয় এ ধরনের প্রতারণার শিকার হয়েছেন এই গ্রামের আরও অনেকে।
ক্ষতিগ্রস্ত আরেক নারীর স্বামী আসাদুজ্জামান। তিনি জানান, কয়েক মাস আগে তার স্ত্রীর কাছ থেকে একই কৌশলে ৭৮ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয় প্রতারকচক্র।
তিনি বলেন, ‘আমরা অল্প আয়ের খেটে খাওয়া মানুষ। আমাগোর অশিক্ষার সুযোগ নিয়া গুপ্তধন পাইয়ে দেওয়ার লোভ দেহাইয়ে, পরিবারের সদস্যদের মৃত্যুর ভয় দেহাইয়ে প্রতারণা কইরে টেহা গুন্নে নিতাছে গা। এগোরে কি বিচার করন যায় না।’
বানেশ্বরদী এলাকার সমাজ সেবক মাফিজুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের জেলায় অনেক মানুষ এভাবে প্রতারকের খপ্পরে পড়ে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা পাঠাচ্ছে। আমরা এর বিচার চাই।’
নকলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুশফিকুর রহমান জানান, হবিরন বেগম একটা জিডি করেছেন। এটা সংঘবদ্ধ দল। উত্তরাঞ্চলের লোক তারা। তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।