ওভার দ্য কাউন্টিার বা ওটিসি মার্কেট থেকে মূল মার্কেটে ফেরার তিন মাস যেতে না যেতেই একটি কোম্পানির শেয়ার মূল্য ১৫ গুণ, একটির ১৩ গুণ, একটির চার গুণ ও একটির তিন গুণ হয়ে যাওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে তদন্তের ঘোষণা দিয়েছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জকে এসব কোম্পানির শেয়ারদর বৃদ্ধির বিষয়টি তদন্ত করতে সোমবার নির্দেশ দিয়েছে পুঁজিবাজারে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি।
কোম্পানিগুলো হলো তমিজউদ্দিন টেক্সটাইল, মনোস্পুল পেপার, পেপার প্রসেসিং অ্যান্ড প্যাকেজিং ও মুন্নু ফেব্রিক্স।
বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র রেজাউল করিম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘শেয়ার দর কেন অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে সেটি তদন্ত করতে বলা হয়েছে। আগামী ২০ কার্যদিবসের মধ্যে ডিএসইকে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।’
দাম বেড়ে যাওয়ার পর তদন্ত কেন- এই প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘চাইলেই একটি বিষয়ে তদন্ত করা যায় না। এর জন্য অনেকগুলো বিষয় নজরদারি করতে হয়।’
এসব কোম্পানির মধ্যে পেপার প্রসেসিংয়ের দর বৃদ্ধির বিষয়ে একটি তদন্ত চলছে। গত ৯ আগস্ট বিএসইসি ৯টি কোম্পানির অস্বাভাবিক দর বৃদ্ধির বিষয়টি তদন্তে যে নির্দেশ দিয়েছে, তার মধ্যে এই কোম্পানিটির নামও আছে।
যেদিন এই আদেশ আসে, সেদিন পেপার প্রসেসিংয়ের শেয়ার দর ছিল ১৬৪ টাকা ৯০ পয়সা। অর্থাৎ এই এক মাসে বেড়েছে ৫১ টাকা।
সে সময়ই প্রশ্ন উঠে চারটি কোম্পানির দরই যখন অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে, তখন কেন কেবল এই একটি কোম্পানিকে বেছে নেয়া হয়েছে।
কত বেড়েছে দাম?
ইলেকট্রনিক শেয়ারে রূপান্তর না করা, লোকসানসহ নানা অনিয়মের কারণে এসব কোম্পানিকে মূল মার্কেট থেকে সরিয়ে ওটিসিতে পাঠানো হয়। সুশাসনের দিক থেকে উন্নতি ও মুনাফায় ফেরার কারণে গত ১৩ জুন সেখান থেকে মূল মার্কেটে আনা হয় কোম্পানিগুলোকে।
এই স্থানান্তরের পর থেকে পাগলা ঘোড়ার মতো ছুটছে কোম্পানিগুলোর শেয়ার দর। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে তমিজউদ্দিনের দর।
মূল মার্কেটে ফেরার দিন তমিজউদ্দিন টেক্সটাইলের শেয়ার দর ছিল ১৩ টাকা। তদন্তের আদেশ আসার দিন দাম ১৮০ টাকা ৪০ পয়সা। তবে এটিই সর্বোচ্চ দর নয়। সর্বোচ্চ ২০২ টাকা উঠেছিল শেয়ার দর। অর্থাৎ শুরুর দিনের তুলনায় দাম এখন প্রায় ১৫ গুণ।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেড়েছে পেপার প্রসেসিংয়ের। এই কোম্পানিটি মূল মার্কেটে ফিরেছে ১৬ টাকায়। সোমবার দাম ২১৫ টাকা ৯০ পয়সা। অর্থাৎ দাম বেড়ে হয়েছে ১৩ গুণের মতো।
পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি
এই দামও কোম্পানিটির সর্বোচ্চ দর নয়। বাড়তে বাড়তে একপর্যায়ে হয়ে যায় ২৪৭ টাকা।
সেই তুলনায় শেয়ার মূল্য ৫০ টাকা নিয়ে মনোস্পুল ও ১০ টাকায় ফেরা মুন্নু ফেব্রিক্সের দর কম বেড়েছে।
মনোস্পুলের দর এখন ২২৩ টাকা ৯০ পয়সা। মূল মার্কেটে আসর পর সাড়ে চার গুণ হয়েছে। সর্বোচ্চ দর ছিল সর্বোচ্চ দর ওঠে ২৪৯ টাকা ৮০ পয়সা।
আর মুন্নু ফেব্রিক্সের দর এখন ২৯ টাকা ৯০ পয়সা। অর্থাৎ বাজারে ফেরার পর হয়েছে তিন গুণ। সর্বোচ্চ দর ছিল ৩৭ টাকা ২০ পয়সা।
আরও এক তদন্তে চার কোম্পানির নাম
যেসব শেয়ারের মূল্য আয় অনুপাত না পিই রেশিও ৪০ এর বেশি, সেগুলো নিয়ে ডিএসইকে তদন্ত করতে বিএসইসি নির্দেশ দেয় গত ৮ সেপ্টেম্বর।
এসব কোম্পানির দর বৃদ্ধির কারণ অনুসন্ধানের পাশাপাশি শেয়ার কেনায় মার্জিন ঋণ দেয়া হচ্ছে কি না, বিষয়টি খতিয়ে দেখতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
কোনো কোম্পানির শেয়ার প্রতি যে আয়, তা দিয়ে কোম্পানির শেয়ারদরকে ভাগ করলে যে ফল আসে, তা মূল্য আয় অনুপাত বা পিই রেশিও নামে পরিচিত।
পুঁজিবাজারে ২৫ পর্যন্ত পিই রেশিওকে নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে ধরা হয়। তবে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এটিই একমাত্র নির্ণায়ক নয়। সম্ভাবনাময় কোম্পানি হলে এরচেয়ে বেশি পিই রেশিওতেও বিনিয়োগ করা যায়।
তমিজউদ্দিনের পিই রেশিও বর্তমানে ১৩৮.০৪। অর্থাৎ কোম্পানিটির যে শেয়ার দর, এই পরিমাণ টাকা আয় করতে কোম্পানিটির লাগবে ১৩৮ বছর।
পুঁজিবাজারে ২৫ পর্যন্ত পিইকে গ্রহণযোগ্য ধরা হয়। আর ৪০ পিইর বেশি কোম্পানিগুলোর শেয়ার কিনতে ঋণ সুবিধাও পাওয়া যায় না।
পেপার প্রসেসিংয়ের পিই রেশিও বর্তমানে ৩৬৮.০১।
মনোস্পুলের পিই রেশিও ৫৯৯.৭৩।
চারটি কোম্পানির মধ্যে দাম সবচেয়ে কম হলেও পিই রেশিও বেশ ঝুঁকিপূর্ণ মুন্নু ফেব্রিক্সের। এর পিই রেশিও ৫৬০.৬৩।