কোরআন অবমাননার অভিযোগে লালমনিরহাটের বুড়িমারী উপজেলার শহিদুন্নবী জুয়েলকে পিটিয়ে হত্যার পর মরদেহ আগুন দিয়ে পোড়ানোর ঘটনায় করা মামলায় গোলাম মর্তুজা নামের এক ব্যক্তিকে হাইকোর্টের দেয়া জামিন বহাল রেখেছে আপিল বিভাগ।
ওই ব্যক্তির জামিন বাতিল চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদন খারিজ করে দিয়েছে আপিল বিভাগ। এ আদেশের ফলে ওই ব্যক্তির জামিন বহাল রয়েছে।
সোমবার প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনসহ আপিল বিভাগ এ আদেশ দেয়।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে আইনজীবী ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবনাথ। গোলাম মর্তুজার পক্ষে আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট মো. হাসান রাজিব প্রধান।
শহিদুন্নবী জুয়েল গত বছর ২৯ অক্টোবর বিকেলে সুলতান রুবায়াত সুমন নামে এক সঙ্গীসহ বুড়িমারী বেড়াতে যান। বিকেলে বুড়িমারী কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে আসরের নামাজ আদায় করেন তারা। কিন্তু কোরআন অবমাননার অভিযোগে সন্দেহবশত জুয়েলকে হত্যার পর তার মরদেহ পুড়িয়ে ফেলার ঘটনায় আলাদা তিনটি মামলা হয়।
এরমধ্যে একটি মামলায় গোলাম মর্তুজাকে গত ১৮ এপ্রিল গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর গত ১ জুন হাইকোর্ট তাকে জামিন দেয়। এই জামিনের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ।
নিহত শহিদুন্নবী জুয়েল রংপুর শহরের শালবন মিস্ত্রীপাড়া এলাকার আব্দুল ওয়াজেদ মিয়ার ছেলে। তিনি রংপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের সাবেক গ্রন্থাগারিক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র। গতবছর চাকরিচ্যুত হওয়ায় মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন।
শহিদুন্নবী জুয়েল গত বছর ২৯ অক্টোবর বিকেলে সুলতান রুবায়াত সুমন নামে এক সঙ্গীসহ বুড়িমারী বেড়াতে যান। বিকেলে বুড়িমারী কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে আসরের নামাজ আদায় করেন তারা। ওই মসজিদেই কোরআন অবমাননার অভিযোগে সন্দেহবশত জুয়েল ও সুলতান রুবায়াত সুমনকে পাশ্ববর্তী ইউনিয়ন পরিষদ ভবনের একটি কক্ষে আটকে রাখে স্থানীয় জনতা।
খবর পেয়ে পাটগ্রাম উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউএনও, ওসি বুড়িমারী ইউনিয়ন পরিষদে উপস্থিত হন। কোরআন অবমাননার দায়ে দুই যুবককে আটক করার গুজব ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় উত্তেজিত হয়ে বিক্ষুব্ধ জনতা ইউনিয়ন পরিষদ ভবনের দরজা জানালা ভেঙে প্রশাসনের কাছ থেকে জুয়েলকে ছিনিয়ে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করে। পরে মরদেহ টেনে পাটগ্রাম বুড়িমারী মহাসড়কে নিয়ে আগুনে পুড়িয়ে ছাই করে দেয়।
এ ঘটনায় জাতীয় মানবধিকার কমিশনের তদন্ত দল গতবছর ১ নভেম্বর ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে জানায়, মসজিদে কোরআন অবমাননার কোনো ঘটনা ঘটেনি। এছাড়াও জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটিও কোরআন অবমাননার সত্যতা পায়নি।