উদ্যোক্তা পরিচালকদের হাতে থাকা শেয়ার ছাড়ার আদেশ দেয়ার পর পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বহুজাতিক কোম্পানি বার্জার পেইন্ট, প্রকৌশল খাতের কোম্পানি ওয়ালটন এবং রাষ্ট্রায়াত্ত বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ-আইসিবির শেয়ারে দরপতন হয়েছে।
শেয়ারের সরবরাহ বাড়লে দাম আরও কমে যাবে, এমন আশঙ্কা থেকে কম টাকাতেও শেয়ার ছেড়ে দিতে চেয়েছেন শেয়ারধারীরা।
কোম্পানি তিনটির মধ্যে ওয়ালটন ও আইসিবির সঙ্গে কথা হয়েছে নিউজবাংলার। তারা এই আদেশ বাস্তবায়নে আরও সময় চেয়েছেন।
ওয়ালটন হাইটেক কর্তৃপক্ষের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, শেয়ার দরে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে তারা পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির কাছ থেকে আরও এক বছর সময় চাইবেন। অন্যদিকে আইসিবির মুখপাত্র বলেছেন, বার্ষিক সাধারণ সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনার পরে তারা সিদ্ধান্ত নেবেন।
তিনটি কোম্পানিকেই মোট শেয়ারের ১০ শতাংশ পুঁজিবাজারে ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে। আগামী এক বছরে এই শেয়ার বিক্রি করতে হবে। আর প্রতি মাসে মোট শেয়ারের সর্বোচ্চ এক শতাংশ বিক্রি করা যাবে।
রোববার এই আদেশ দেয়ার পর তিনটি কোম্পানির মধ্যে আইসিবি ৮.৬৬ শতাংশ, ওয়ালটন ৬.২৪ শতাংশ এবং বার্জার পেইন্টসের দর কমেছে ৬.১৩ শতাংশ।
আইসিবি যা বলছে
বিএসইসির আদেশের পর সবচেয়ে বেশি দরপতন হয়েছে আইসিবির শেয়ার দরে।
কোম্পানিটির মোট শেয়ার সংখ্যা ৮০ কোটি ৫৮ লাখ ১৫ হাজার ৫২৭টি। এর মধ্যে ৩.১৯ শতাংশ অর্থাৎ ২ কোটি ৫৭ লাখ ৫ হাজার ৫১৫টি শেয়ার ছাড়া হয়েছে। মোট শেয়ারের ১০ শতাংশ ছাড়তে হলে আরও ছাড়তে হবে ৫ কোটি ৪৮ লাখ ৭৬ হাজার ৩৭টি শেয়ার বিক্রি করতে হবে। অর্থাৎ প্রতি মাসে বিক্রি করতে হবে ৪৫ লাখ ৭৩ হাজার ৩টি করে।
এত বেশি শেয়ার বাজারে এলে দাম কমে যাবে এমন আশঙ্কার মধ্যে কোম্পানিটির দরপতন হয় ৮.৬৬ শতাংশ। আগের দিন দাম ছিল ১৪২ টাকা। সেটি কমে হয়েছে ১২৯ টাকা ৭০ পয়সা।
আইসিবির মুখপাত্র বিভাস সাহা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের অর্থ বছর শেষ হয়েছে জুন। ইতিমধ্যে আমাদের সব ধরনের আর্থিক বিবরণী তৈরি শেষ হয়েছে। ফলে এখনই শেয়ার বিক্রি করে সরবরাহ বৃদ্ধি করা সম্ভব হবে না।’
তিনি বলেন, ‘সামনে আমাদের বার্ষিক সাধারণ সভা আছে, সেখানে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে। তারপরও এ বিষয়ে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।’
সবচেয়ে বেশি শেয়ার ছাড়তে হবে ওয়ালটনকে
তিনটি কোম্পানির মধ্যে সবচেয়ে বেশি শেয়ার ছাড়তে হবে ওয়ালটনকে। কোম্পানিটির মোট শেয়ারের মাত্র ০.৯৭ শতাংশ শেয়ার ছাড়া হয়েছে। ১০ শতাংশ ছাড়তে হলে উদ্যোক্তা পরিচালকদেরকে বিক্রি করতে হবে শেয়ারের ৯.০৩ শতাংশ।
কোম্পানিটির মোট শেয়ার সংখ্যা ৩০ কোটি ২৯ লাখ ২৮ হাজার ৩৪৩টি। এই হিসাবে ২ কোটি ৭৩ লাখ ৫৪ হাজার ৪২৯টি শেয়ার বিক্রি করতে হবে।
অর্থাৎ প্রতি মাসে বিক্রি করতে হবে ২২ লাখ ৭৯ হাজার ৫৩৫টি।
কোম্পানিটি গত বছরের সেপ্টেম্বরে পুঁজিবাজার থেকে ১০০ টাকা তুলেছে। বুকবিল্ডিং প্রক্রিয়ায় কোম্পানির কাট অফ প্রাইস নির্ধারিত হয় ২৮৩ টাকা।
এই হিসাবে মাত্র ২৯ লাখ ৩৮ হাজার ৪০৫টি শেয়ার ছেড়েছে কোম্পানিটি। আর শেয়ার সংখ্যা অপ্রতুল হওয়ার কারণে এর চাহিদা থাকে তুঙ্গে। এ কারণে এক বছরেরও কম সময়ে শেয়ার মূল্য ৫ গুণ হয়ে গেছে।
নতুন করে শেয়ার ছাড়লে সরবরাহ বাড়লে দাম আরও কমে যেতে পারে, এমন আলোচনার মধ্যে প্রথম দিনই কোম্পানিটি দর হারাল ৮৯ টাকা ৮০ পয়সা।
আগের দিন দাম ছিল ১ হাজার ৪৩৭ টাকা ৭০ পয়সা। সেখান থেকে কমে হয়েছে ১ হাজার ৩৪৭ টাকা ৯০ পয়সা।
দাম বাড়া বা কমার যে সর্বোচ্চ সীমা দেয়া আছে, তাতে এর চেয়ে বেশি কমার সম্ভব ছিল না কোম্পানিটির শেয়ার মূল্য।
কোম্পানি সচিব রফিকুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এক বছর অনেক সময় হলেও আমরা মনে করি এর জন্য আমাদের আরও কিছু সময় প্রয়োজন হবে। আমরা বিএসইসিকে এ বিষয়ে বলব, যে আমাদের আরও এক বছর বেশি সময় দেয়া হয়। তাহলে পর্যায়ক্রমে উদ্যোক্তারা তাদের হাতে থাকা শেয়ার বিক্রি করে বাজারে শেয়ারের সরবরাহ বাড়াতে পারে।‘
তিনি বলেন, ‘এমন সিদ্ধান্তের কারণে আমাদের শেয়ার দরে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। বিনিয়োগকারীদের মধ্যেও একটি ভুল ম্যাসেজ গেছে, যে আমাদের উদ্যোক্তারা হয়ত এখনও তাদের শেয়ার বিক্রি করা শুরু করবে।’
বার্জারের কী চিত্র
কোম্পানিটির মোট শেয়ার সংখ্যা ৪ কোটি ৬৩ লাখ ৭৭ হাজার ৮৮০টি। ২০০৬ সালে তালিকাভুক্ত কোম্পানিটির মোট শেয়ারের ৫ শতাংশ, অর্থাৎ ২৩ লাখ ১৮ হাজার ৮৯৪টি বাজারে ছাড়া আছে। ছাড়তে হবে আরও সম পরিমাণ।
সোমবার বার্জার পেইন্টসের শেয়ার দর কমেছে ৬.১৩ শতাংশ। শেয়ার দর ১ হাজার ৯২১ টাকা থেকে কমে হয়েছে ১ হাজার ৮০৩ টকা ১০ পয়সা। দর কমেছে ১১৭ টাকা ৯০ পয়সা।